Wednesday, September 9, 2015

স্টিলমিলের মানুষ


সুখের পরে দুঃখ আসে। যেমন দিনের পরে আসে রাত। সেই রাতও আবার স্থায়ী হতে পারেনা, ঘড়ির কাঁটার পাইক পেয়াদারা দিনকে গিয়ে পাকড়াও করে নিয়ে আসে। তারিক ভাইয়ের সাথে আমার খুব ভাল রকমের পরিচয় আছে। আমার যতদূর মনে পড়ে আমরা একসাথে আড্ডাবাজিও করেছি অনেক। আমি কমার্স কলেজে পড়তাম। তারিক ভাই ছিল কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক। দুঃখে দুঃখে তারিক ভাইয়ের জীবনের অনেকটা গেল, বলছিলাম সুখ আর দুঃখের কথা, দিন আর রাতের কথা। আমি বিশ্বাস করি, যে তিমির রাত উনি পার করে এসেছেন স্বাভাবিক ভাবেই সেই রাত শেষ হতে যাচ্ছে। ভোরের আলোর বেশি বাকি নেই। আক্ষেপ নিয়ে কোন কবির আর প্রশ্ন ছুড়ে দিতে হবেনা "রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী?" 


সহমর্মিতা আর সমব্যথা উপলব্ধি করার নজির স্টিলমিল কলোনি আগেও দেখিয়েছে। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর একতলা বাসার বানভাসি কোন ছেলেটা বা কোন মেয়েটাকে উপরতলার চাচি মুখে তুলে খাইয়ে দেয়নি কেউ বলতে পারবেন? লোনা পানিতে টিভি ভেসে গেছে বলে কোন সপ্তাহের ছায়াছন্দ কখনো কেউ মিস করেছেন? বই ভিজে গেছে বলে কেউ কি আছে যে পরীক্ষার আগে পড়ার টেবিলে বই পায়নি বলতে পারবে? 

আপনি গরুর মাংস পছন্দ করেন পাশের বাসার চাচি তা জানে। এমন কি কখনো হয়েছে যে পাশের বাসায় গরু রান্না হয়েছে আর আপনার জন্য একবাটি ঝাল ঝাল গরুর মাংস এসে পৌঁছেনি? জানি অনেকে ভাবছেন এগুলো এক্সট্রিম আবেগের কথা। হতে পারে। আমরা আসলেই অনেক আবেগী ছিলাম। আবেগী ছিলাম বলেই ইউনুস ভাইকে পুলিশে ধরে নেবার পর থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে মোকাদ্দেস ভাই রাত দুপুরে চিৎকার করে কলোনি মাথায় তুলে ফেলতে পারতেন। আবেগী বলেই আমাদের কেউ না হয়েও বেলাল ভাই সুদুর সউদি আরব থেকে ফোন করে খোঁজ খবর জানতে চায়। আমরা এমন বিদঘুটে ইমোশনাল বলেই দশ বছর পর হঠাৎ আমেরিকা থেকে ফোন করে এক বন্ধু "হ্যালো" এর বদলে গালি দিয়ে শুরু করতে পারে। 

আজকে অনেক আবেগের কথা বললাম, আরেকদিন বাস্তবতার কথা বলব। স্টিলমিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের একটি বছর থেকে কলোনি ছাড়া পর্যন্ত নিরাবেগের কয়েকটি বছর। আমি না, বরং অন্য কেউ বলুক। 

শুরু করেছিলাম তারিক ভাইকে দিয়ে। কেউ যেন এমন ভাবার মত দুঃসাহসী না হয় যে আমরা তারিক ভাইকে সহায়তা করছি। বরং তারিক ভাই তার বিভীষিকাময় কয়েকটি বছরের ত্যাগ দিয়ে আমাদের সবাইকে একটা সুযোগ দিয়েছে যেন আমরা আগের মত "স্টিলমিলের মানুষ" হতে পারি। আমরা চৈত্রের পাকা শিমুল তুলার মত উড়তে উড়তে লেপ, তোশক, বালিশের ভিতর ঢুকে গেছি। তারিক ভাই সুযোগ দিয়েছে লেপ, তোশকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার। সুযোগ একবারই আসে।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss