আমরা তখন পড়ি সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে,
বিউটি আপা স্কুলে নতুন যোগদান করেছেন,
পড়াতেন সামাজিক বিজ্ঞান। পড়া দেয়া এবং নেয়ার ব্যাপারে আপা খুব কড়া। পড়া না পারলে কোনও মাফ নেই,
রীতিমত নিয়ম করে পড়া না পারার কারণে ধোলাই চলছে।
টিফিনের পর ক্লাস করা এমনিতেই বিরক্তিকর ছিল। বিউটি আপার ক্লাস ছিল টিফিনের পর প্রথম ঘণ্টায়। কোন এক কারণে আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন খোরশেদও একদিন ধোলাই খেলো
(পড়া না পারার কারণে নয়)। ধোলাই খেয়ে বেচারা বেশ ক্ষেপে গেল। নিয়মিত ধোলাই খাওয়ারা তো আগে থেকেই ক্ষেপা। তো একদিন নিয়মিত ধোলাই খাওয়ারা ঠিক করলো যে ক্লাস পণ্ড করা হবে। খোরশেদ ব্যাপার টাতে পূর্ণ সমর্থন দিল । কথামত টিফিনের সময়, রানা এবং আরও দুই একজন মিলে গন্ধ ভাদালি পাতা
(পাদানি পাতা)
এনে বোর্ডের আশপাশে আর স্যারদের চেয়ারের এবং টেবিলের তলায় ভাল করে ঘষে রাখল।
টিফিনের পর যথারীতি ক্লাস শুরু হোল। কিন্তু পাতার গন্ধ তেমন কড়া ভাবে লাগছিলো না,
গন্ধ ততক্ষণে হাল্কা হয়ে গিয়েছে। তাই গন্ধকে তেমন পাত্তা দিলেন না। আপা টিফিন পরবর্তী নাম ডাকা শেষে মাত্র পড়ানো শুরু করে দিলেন। এদিকে পরিকল্পনা ব্যার্থ হতে দেখে ক্লাসের সবাই মোটা মুটি হতাশ। এমন সময় খোরশেদ দাঁড়িয়ে বলল
-
-আপা গন্ধ!
- কিসের গন্ধ।(আপা বেশ বিব্রত,
তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি,
হয়তো ভাবছিলেন গন্ধের উৎস হিসেবে খোরশেদ আপাকেই দায়ী করছে)।
-আপা এদিক থেকে গন্ধ আসছে। (খোরশেদ চেয়ার টেবিলের দিকে হাত তুলে দেখালো,
এবার আপা হাল্কার উপর ঝাপসা গন্ধকে আমলে নিলেন কিন্তু তখনো তিনি বেশ বিব্রত।
খোরশেদ বলল - আপা গন্ধের মধ্যে ক্লাস করা যাবে না,
ক্লাস রুম বদলাতে হবে। বাকিরা কথায় তাল দিতে থাকলো। তখন আপা বের হয়ে গেলেন আনোয়ার স্যার বা বাদল বাবু স্যারের সাথে কথা বলার জন্য। এর পর আমাদের ওই দিনের জন্য আমাদের ক্লাস খুব সম্ভবত তিন তলায় নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
স্যারদের সাথে কথা বলা এবং ক্লাস রুম বদলাতে বদলাতে ক্লাসের সময় মোটামুটি শেষ হয়ে আসলো। তবে স্যাররা ততক্ষণে বুঝে গেছেন কারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে। পরবর্তীতে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে,
এই বলে সতর্ক করে দিয়ে গেলেন। আমরা ধোলাইয়ের ব্যাপারে কোন স্থায়ী সমাধান না পেলেও,
ওইদিনের মত বেঁচে যাই।
No comments:
Post a Comment