ষ্টীলমিলে আমরা যে চিকিৎসা সুবিধা পেতাম, তার সাথে শুধু এখনকার রেলওয়ে/বন্দর হাসপাতালেরই তুলনা চলে (ডিফেন্স বাদে)। আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসা সুবিধার সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই; একেতো সরকারের সুবিধা দেওয়ার মানসিকতাই নেই, অন্যদিকে এখন বেতনের সাথে যৎকিঞ্চিত চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় আর প্রতিষ্ঠানের বাইরে নেওয়া চিকিৎসার বিল কম-বেশী অফিস বহন করে। ষ্টীলমিলের মতো চাইলেই ফ্রি সি-ভিট, আমি নিজেও তো প্রতিষ্ঠান থেকে দেই না!
আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি ষ্টীলমিল হাসপাতালে দু'জন পুরুষ ডাক্তার ও একজন মহিলা ডাক্তার পেয়েছিলাম; পুরুষ দু'জন ছিলেন ডাঃ রহিম আর ডাঃ রফিক আংকেল, মহিলা ডাক্তার আন্টির নাম মনে করতে পারছি না বলে দুঃখিত।
উনাদের সবার প্রতিই যথাযথ সম্মান রেখে বলছি, উনাদের মধ্যে ডাঃ রহিম আংকেল সম্ভবত সবচাইতে জনপ্রিয় ছিলেন। ককেশিয়ান'দের মতো গায়ের রং দর্শনদারিতে ফার্স্ট ইম্প্রেশান তৈরির জন্য যথেষ্ট, সাথে রাজপুত্রের মতো চেহারা; কিন্তু সব ছাপিয়ে তার নম্র-সৌম্য-অমায়িক ব্যবহার বোধকরি কম-বেশী সবাইকেই মুগ্ধ করতো। ষ্টীলমিল লে-অফ হয়ে গেছে, কিন্তু ঔ রিজিয়নে জেনারেল প্র্যাক্টিশনার হিসেবে উনার জনপ্রিয়তা ও পেশাগত সফলতা এককথায় দুর্দান্ত বলেই জানি।
২০১১ সালের দিকে আমি মেডিক্যাল আলট্রাসাউন্ডে একটা সার্টিফিকেট কোর্স করছিলাম। সেখানে এক ব্যাচের থিউরিটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে, তো আরেক ব্যাচের প্র্যাক্টিক্যাল; এক ব্যাচের ক্লাস শেষ তো, অন্য ব্যাচ ঢুকছে - এমনটা লেগেই থাকতো। হঠাত একদিন দূর থেকে সিনিয়র'দের ব্যাচে একজনকে আমার ডাঃ রহিম আংকেল বলে মনে হলো, ভালমতো খেয়াল করে নিশ্চিত হলাম - বয়সের ভার উনার মধ্যে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি। একটু ইতস্ততঃ করে পরিচয় দিলাম। উনি আমার পারিবারিক পরিচয় কতটা হুবুহু মনে করতে পারলেন জানি না, তবে নিশ্চয়ই একটু অবাক হলেন - নিজের মধ্য বয়সে নাবালক যাকে একসময় চিকিৎসা দিতেন, সেই আজ একই প্রফেশনে মধ্যবয়সী হয়ে উঠার যোগাড়!
দুনিয়াটা এমনই- দু'দিনের; স্বার্থের ভিত্তিতে সম্পর্কগুলোকে বিষাক্ত না করে তোলাই ভাল। যে চমৎকার ভ্রাতৃত্ববোধ এই গ্রুপে এখন অব্দি প্রতীয়মান, আশা করি সেই স্পিরিট ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। ডাঃ রহিম আংকেল কি আছেন এই গ্রুপে? থাকুন, আর না থাকুন - উনার জন্য শ্রদ্ধা!
No comments:
Post a Comment