Friday, October 30, 2015

শিরোনামহীন গল্প



ভার্সিটিতে আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড নাম কাইয়ুম। আমরা সব ফ্রেন্ডরা সবার বাসায় গিয়ে কত ভাবে মজা করি লাঞ্চ করি গ্রুপ স্ট্যাডি করি কিন্তু কাইয়ুম কোন দিন তার বাসায় নেয়নি। একবার কথার ছলে বলে ফেললাম।কাইয়ুম কথা ঘুরিয়ে বলে চল তোরে চা খাওয়াই ক্যান্টিনে।কোন ভাবেই সে রাজি হয়না। কাইয়ুম বোন আছে কিন্তু সে তো বাড়িতে থাকে তাহলে কি প্রব্লেম আমাদের নিতে ?যাই হোক নিজ থেকে না যেতে বললে কি করে যাই? এইভাবে দিন শেষ হয় বছর যায়। রেজাল্ট এর সময় ঘনিয়ে এলো । এখন তো রেগুলার আর দেখা হবে না। ফাইনাল রেজাল্ট এর দিন ফ্রেন্ড রা কেন যে জড়ায় ধরে কান্না করছিল এইটা এখন বুঝি। ইচ্ছে করলেই এখন শামিমের কাছে যেতে পারি না কাইয়ুম তো থাকে আরো দূরে,বিপ্লব তো ভুলেই গিয়েছে, শাহিন ও ব্যস্ত। রেজাল্ট এর পর হঠাত করে কাইয়ুম আমাকে এক রকম টেনে তার বাসায় নিয়ে গেলো।কি ছিমছাম গোছানো ঘর। একটা বালিও নেই।সব কিছু কে যেনো পোর্টেট করা। হুট করে একটা ১৩/১৪ বছরের একটা ছেলে এলো? কেমন জানি লাগলো ?


কাইয়ুম বলে দিলো দোস্ত তোদের কেন বাসায় আনি না জানিস? ও আমার ভাই । কথা বুঝতে পারেনা, কথার পিঠে কথা বলতে পারে না, কানে শোনে না, বধির স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আব্বা কাল ফোন করে বলল তুই কামরুলের এর ভাই/গার্ডিয়ান/ফ্রেন্ড সব কিছু তুই , তুই চাইলে ও কাল পথে ভিক্ষা করবে তুই চাইলে ও প্রিন্সের মতো করে চলবে। আমার দিন প্রায় শেষ আমি চাইলেও ওর লাইফ চেঞ্জ করে দিতে পারবো না । কথা গুলো বলতে বলতে কাফরুল আমার কাধে উঠে গেলো।শামিম রে বলল এই তুমি সিগারেট খাও কেন কি গন্ধ ?এই তুমি শেভ করো না কেন ? ভাইয়া কাল কে আমারে রেজর কিনে দিয়েছে ?
কাইয়ুম ভাইয়া দের চা খাওয়াবে না ?চা ? হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলো ? আমাকে দেখিয়ে বলে ও পচ ও পচ ...
আমরা কত কিছু দেখি তার পুরোটাই কি বুঝি ?আমি কারো দায়িত্ব নিয়েছি বলে গলা ফাটিয়ে প্রচার করি সত্যি কি দায়িত্ব নিতে পেরেছি।কাইয়ুম এর বাসায় কখনো যাইনি বলে কত কথা শুনিয়েছি ? কেন কাইয়ুম এই রকম করলো একবারো ভেবে কি দেখেছি?
এভাবে দিন যায় ,আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পরি। ভার্সিটিতে যে কাইয়ুম এর সাথে প্রতিদিন দেখা হতো এখন বছরেও একবার দেখা হয়না। সময় মানুষ কে কত দূরে নিয়ে যায় !!! বছর খানেক আগে কাইয়ুম ফোন করে বিয়ের দাওয়াত দেয়।কাইয়ুম এর বিয়ের দাওয়াত পেয়ে শামিম যেন ঢাকাতেই হাত ধুয়ে বসে আছে
grin emoticon
লক্ষিপুরের শেষ প্রান্তে কাইয়ুমের বাড়ি তবুও যেতে হলো । কাইয়ুম এর বাড়িতে গিয়ে দেখি কামরুল এখন অনেকটাই কথা বলতে পারে। হিয়ারিং মেশিন দেয়ার পর শুনতেও পারছে।হেটে বেড়াচ্ছে চারিদিক।
কামরুল আবারো বলে তুমি পচা।(ভাই আমারে কেন পচা কয় আমি বুঝলাম না)
সারাক্ষন কামরুল আমাদের সাথেই ছিল। অবাক হলাম আজ সে কথা বলছে অনবরত। মানুষ চাইলে সব পারে,আল্লাহ মানুষ কে এই ক্ষমতা দিয়েছে ,শুধু নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিতে হয় , নিজেকে বলতে হয় এইখানেই থেমে যাওয়ার জন্য তুমি জন্মাও নি। উঠে দাড়াও, এগিয়ে যাও ......
আমাদের সময় কম ছিল বলে বিকালেই ফিরতে হবে , কাইয়ুম বিয়েয় মঞ্চ থেকে নেমে এলো, অনেক কথার মাঝে কামরুল এর দিকে দেখিয়ে বলল ছেলেটা বদলে গেছে । নিজের সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ।
শামিম বলল তোর জন্য পেরেছে
না আমি কি আর করতে পারতাম ও নিজেই চেয়েছে তাই পেরেছে ।
আমরা বিদায় নিলাম ,আমি দূর থেকে কামরুল কে দেখি এক রকম বুক ভরা আনন্দ নিয়ে হাসছে। ভাই কে অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখিয়ে কাইয়ুমের চেহারায় এক অদ্ভুত দ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে ।দুই ভাই এক সাথে হাত নেরে আমাদের বিদায় দিচ্ছে, কি অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য। শামিম আর আমি তাকিয়ে আছি ,তাকিয়েই আছি ।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss