Sunday, October 18, 2015

টুকরো কথা



পুলক জানালো তারা রওনা দিয়েছে। আমি এর পনের মিনিট পর অফিস থেকে বের হলাম। পপুলার হসপিটাল আমার অফিস থেকে বিশ মিনিটের পথ। রিকশা নিয়ে গ্রীনরোডে ঢুকে দেখি বিশাল জ্যাম। ল্যাব এইডের সামনে যখন পৌঁছলাম তখন সাড়ে তিনটা বাজে। এরপর হেঁটে গিয়ে সায়েন্সল্যাবের ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে আড়ঙের সামনে দাঁড়িয়ে আবার পুলককে ফোনে ধরলাম। সে জানালো তারা পপুলারে বসে আছে। গিয়ে দেখি পুলক গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর ভিতরে চেয়ারে বসে আছে নাজমুল ভাই আর রেজা ভাই। রেজা ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।



একবার চাইলাম বলি ঈদ তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এখন আবার এমন আঞ্জাআঞ্জি কেন? কি ভেবে আর বললাম না। এমন আবেগের মুহূর্তে ইয়ার্কি ফাজলামি উনার মাথায় ঢুকবে বলেও মনে হয়না। নাজমুল ভাই আগের মতই স্বভাবসুলভ গম্ভির। মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু বলছে। আপেল ছেলেটা এসে জানতে চাইলো আমি তাকে চিনেছি কিনা। চিনেছি তো অবশ্যই শুধু নামটা মনে আসছে না। সে জানালো তার নাম আপেল। মনে মনে বললাম এজন্যই তোমার নাম মনে থাকেনা আমার। ফলপট্টির মাল হসপিটালে ঘুরাঘুরি করলে চিনব কিভাবে? মুখে বললাম ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়ছে। এই ছেলেটা আর আমার বন্ধু আবু হেনার ভাই নাসের খুবই আন্তরিক ধরনের। এদের উদ্যগে প্রতি বছর ঢাকাতে কলোনিবাসির একটা ইফতার পার্টি হয়। (এ বছর অবশ্য একটু ফাঁকিবাজি করেছে)।

তারিক ভাইকে নিয়ে আসা সিএনজি টা যখন এলো, আমিও অন্যদের পিছে পিছে সেখানে গেলাম। সিএনজি থেকে সোহেল ভাই নামলো। এরপর নামলো তারিক ভাইয়ের ভাই বাবু ভাই। তারিক ভাই সিএনজিতে বসে আছে। হুইল চেয়ারটা নিয়ে সিএনজির দরজায় রাখা হল। আমি চলে এলাম ওখান থেকে। তারিক ভাইকে আমি তুফানের মতো দৌড়ে এসে বোলিং করতে দেখেছি। সেই তারিক ভাইকেই আমি দেখতে চাই।

এক এক করে সবাই এলো। সন্ধ্যার দিকে এলেন জসিম ভাই আর রিপন ভাই। দুজনে কোত্থেকে যেন দাওয়াত মেরে এসেছেন। হসপিটালের কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে দুজন বাচ্চা পোলাপানের মতো ঝগড়া করতে লাগলেন কে দাওয়াতে বেশি খেয়েছে এসব নিয়ে। বুঝলাম দুজনকেই কলোনির বাতাসে পাইছে আজকে। ততক্ষনে হসপিটালের কেবিনে জনসভা শুরু হয়ে গেছে। রেজা ভাই কিছুক্ষণ পর পর ডাক্তারের কাছে দৌড়াচ্ছেন আর ফিরে এসে বক্তৃতার ঢঙে কথা বলছেন। দেখতে ভালো লাগছে। একটু পর আমি নিচ থেকে উপরে উঠে দেখি বাবু ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের বিখ্যাত মোটা বাবু ভাই। বাবু ভাইকে আমি এক হাজার বছর পর দেখলাম। হ্যাঁ এক হাজার বছর। যার সাথে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত সবসময় দেখা হতো তার সাথে ১৬ বছর পর দেখা মানে এক হাজার বছর পর দেখা। কিছু পর এলেন চান্দু। উনি এসেই উনার শখের কাবাব নিয়ে গার্ডের সাথে যুদ্ধ শুরু করলেন। গার্ড কাবাব মে হাড্ডি হয়ে ভেতরে কাবাব নেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আর চান্দু ভেতরে কাবাব পাচার করবেনই। শেষে অবশ্য কাবাব গেলো না। শুধু চান্দু, আমি আর চান্দু কন্যা ভেতরে পাচার হলাম। কাবাব রইলো রিসেপশনে।

এর কিছুক্ষণ পরই জনসভা ভাঙ্গল। সম্ভবত নিচে দু বাটি কাবাব পড়ে আছে এই সংবাদেই সভা ভঙ্গ হল। নিচে নেমে কাবাব নিয়ে সেকি ধুন্ধুমার। সেই ভিড়ের মধ্যে হাত বাড়িয়ে আমার কাবাবটা পেলাম না। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হল সবাই কাবাব পাইছে আমার কাবাব কই? সেসময় হঠাৎ এক মহিলার আর্তচিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি একটা পুরনো ধরনের কালো টয়োটা থেকে এক বয়স্ক মহিলা চিৎকার করছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বুঝলাম গাড়িতে হঠাৎ উনার স্বামী স্ট্রোক করেছে। তৎক্ষণাৎ আমি গিয়ে একটা হুইল চেয়ার আর হাসপাতালের একজন স্টাফ নিয়ে এসে রোগীকে তুলে ইমার্জেন্সিতে পাঠালাম। ফিরে এসে দেখি কাবাব খতম। পরে চান্দু কোত্থেকে যেন আরো এক বাটি কাবাব বের করলো। আমিও পেলাম একটা।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss