Wednesday, November 11, 2015

দ্বিতীয় জীবন



Versity তে স্ট্যাডি ট্যুর নিয়ে আমরা মহা ব্যস্ত । সাত দিনের ট্যুরে ৬ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। পাবলিক ভার্সিটির ছেলেদের খুব কমোন প্রবলেম হচ্ছে টাকা নাই। দোস্ত খাওয়া টাকা নাই , মেস এর বিল দিতে পারছিনা , টিউশনি করছি মাস শেষ হয়ে আজ ৭ তারিখ এখনো টাকা দেয় নাই কি করে যে চলি ? দোস্ত জিএফ কে নিয়ে ডেট করতে যাবো টাকা দে ,তোর হাতে পায়ে ধরি টাকা দে

মোবাইলের ব্যালেন্স নেই , এই রকম কথা শুনতেই আমরা অভ্যস্ত। এরা এত টাকা কি করে দিবে ? ব্যাপারটা স্যার রাও বুঝতে পেরেছে । তাই মিটিং করে সাত দিনের ট্যুর চার দিনে কনভার্ট করে দিয়েছে । টাকাও কমে গিয়েছে । কিন্তু আমাদের দাবির মুখে ডিন স্যার বলতে বাধ্য হয়েছে সাত দিনের সব মজা তোমরা চার দিনে পাবে, জোর করে হলেও মজা দিবো

সাত দিনের মজা যে কি জিনিষ তা কোন দিন ভুলবো না। আজো কাইয়ুম রে ফোন করে বলি চল আবার কক্সবাজার যাই,কাইয়ুম ও বলে চল কিন্তু সময় যে আমাদের বন্দি করে ফেলেছে !!!
সেই চার দিনে এক ফোটা ঘুমোতে পারি নাই, সত্যি বলতে কি ঘুমোতে চেষ্টাই করি নাই ,এই রকম সময় হাজার চেষ্টা করেও আর পাওয়া যাবে না এইটা আমরা জানতাম। আমার মতো কর্কশ গলার ছেলেকেও মাইক হাতে নিয়ে গান গাইতে হয়েছে । সাথে ডিন স্যার ও ছিল , সবাই এক সাথে গাইছে নাচ ছে ,ভাবা যায় !!! কোন দিন ভাবা যায় না , কোন ভাবেই না , এই জন্যই হয়তো ভার্সিটি লাইফ শেষ হবার সময় কাইয়ুম আমাকে আর শামিম কে ধরে চিৎকার করে কেদেছিল । যাই হোক এইবার আসল কথায় আসি । আমার বাসা ছিল আরজত পাড়া। আমাদের বাস ফার্মগেট থেকে মিরপুরে চলে যাবে , আমাকে তাই ফার্মগেট নামতেই হলো। আমি ছিলাম খুব টায়ার্ড। সাত দিনের ট্যুর চার দিনে এনে মজা বেড় হচ্ছে। হাটার শক্তি ছিলনা । তিন নাম্বার বাসে না উঠে তাই নিলাম সিএনজি। রাত তখন ১২ টা বেজে গিয়েছে । কে জানতো একটু পরে আমারো ১২ টা বাজবে ?
তেজগাও মসজিদের কাছে আসার পর (বিজয় স্বরনীর কাছে ) সি এন জি বন্ধ হয়ে যায় । মুহুর্তে তিন জন ডগির বাচ্চা সিএঞ্জি তে উঠে পরে। আর সিএনজিও স্ট্যার্ট নেয় , আমার বুঝতে বাকি রইলো না এইটা একটা ট্র্যাপ ছিল , এইভাবে কত মানুষের সব শেষ হয়ে যায় ।
শুরু তেই আমার চশমা নিয়ে যায়। আমার চশমার পাওয়ার - 6 . আমি চশমা ছাড়া কিছুই দেখি না । কিছু বলার আগেই একজন আমার গলার কাছে একটা ছুরি দেখিয়ে বলে চিনোস এইটা এক্কেবারে সুন্নত করায় দিমু ।
আরেক জন আমার তল পেটে একটা পিস্তল তাক করে রাখে । বাকি জন আমার বুকের উপর উঠে বসে। আমি হাল্কা পাতলা মানুষ তিন জন এইভাবে আমাকে ধরলে আমি তো আর আমি থাকি না।
আমাকে বলে বসে কাল আমার একটা মামলা আছে লাগবে পঞ্চাশ হাজার কি যে করি ? এই জন্য তোরে ধরছি । আমাদের সাথে কো-অপারেট করলে তোরে কিছু করমুনা কি কি আছে সোজা বলে দে ?
আমি সোজা বলে দিলাম আমার মানিব্যাগ আছে দুইটা একটা পকেটে এইটায় আছে ৬০ টাকা আর ব্যাগ এর ভিতর আরেকটা মানি ব্যাগ সেখানে ২৫০০ টাকা। মোবাইল আছে , ঘড়ি আছে । নেয়ার মতো আর কিছুই নাই। গলায় একটা গোল্ডের চেইন পরতাম এইটা হ্যাচকা টানে নিয়ে নিলো । টাকা ছিল ১৫০০ টাকা , কক্সবাজারেই শামিম আমার কাছ থেকে লোন নিয়েছিল ১০০০ টাকা এইটা ফার্মগেটে নামার আগে ফেরত দিয়েছিল। হারামজাদা ফেরত দেয়ার আর সময় পাইলো না ।
আমার ব্যাগ তন্ন তন্ন করে সব খুজলো আর কিছুই নাই।
তুই কোন স্কুলে পরোস, এত রাতে কি করতেছোস
আমি ভার্সিটি তে পড়ি
কস কি ? দেখতে তো লাগে ...... ( বলা গেলো না)
দ্যাখ আমার অনেক পড়ার শখ ছিল , ইন্টার এর পরে বাপ আর টাকা দিতে পারে নাই বইলা পড়া হয় নাই তুই অনেক পইড়া ফেলছোস
তোর বাসা কই ? কে কে থাকে ?
এদের এত ইনফো দেয়া যাবে না। আমি বললাম আমি ম্যাসে থাকি। টিউশনি করে চলি, স্ট্যাডি ট্যুর থেকে ফিরছিলাম আর আপনাদের কবলে পরলাম
তুই হালা বেশি কথা কস , ডর করে না তোর
আমি বাহিরে দেখতে চাইলাম আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ?
ঐ ...... কি দ্যাখস । কইলাম না ছাইড়া দিমু
মাঝে মাঝে ছুড়িটা গলা থেকে মুখের কাছে এনে দেখাতো , পিস্তল টার ট্রিগার চেপে দিবো বলেও হুম কি দিচ্ছিল।
মনে হচ্ছিল আমি আর কোন দিন ফিরতে পারবোনা। এখন যদি পাচ/ দশ লক্ষ টাকা দাবি করে বসে কি হবে?
কে দিবে ? কেউ না । এত টাকা দেয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। কষ্ট পেয়ে কি লাভ , আমি এইটুকু সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছি আমার সময় শেষ এইটা ভাবছি । এরা কখনো বলে ছেড়ে দিবে আবার বোমা মেরে উড়িয়ে দিবে এই রকম বলছে । আমি আমার কাছের সব মানুষের কথা ভাবতে শুরু করে দেই । এদের ছবি মাথার ভিতর ঘুর পাক খাচ্ছে ......
একটু পরেই আবার ছেড়ে দিতেও পারে এই রকম কথার রেশ পাচ্ছি
আমাকে যে কই নামাবে বুঝতে পারছিনা । নামানোর আগে ছুরি দিয়ে আমার শরীর কে পোট্রেট করে দিবে না তো ? ভয় পাচ্ছি
সব কিছু নিয়ে যাবার পরে মরিচের গুড়া আর টাইগার বাম মিক্সড করে আমার দুই চোখে লাগিয়ে দেয়। কি যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল এইটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ।
আমি শুধু বললাম ভাই আমার চশমা টা দেন আমি এইটা ছাড়া কিছু দেখি না।
একবার চেক করে দেখলো কত পাওয়ার । তুই তো পুরা কানা রে , তারপর দিয়ে দিলো চশমা। আমি ভেবেছি সি এনজির নাম্বার টা মুখোস্ত করে রাখবো কিন্তু চোখের যন্ত্রনায় তাকানো গেলো না ।বিসিএস কম্পিউটার সিটি দেখে বুঝলাম আমাকে আগারগাও নিয়ে এসেছে । একটা লেগুনা পেয়ে উঠে গেলাম । তারপর সোজা আরজত পাড়া।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss