Wednesday, January 13, 2016

শিশু সমাজের নিজস্ব কিছু নিয়মনীতি আছে

- Javed

শিশু সমাজের নিজস্ব কিছু নিয়মনীতি আছে। শিশুরা সেসব নীতি কঠোরভাবে পালন করে। আমার ছেলেবেলায় আমিও সেসব নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এসেছি। এসব নিয়ম মেনে না চললে কি বিশাল বিশাল বিপদের সম্মুখীন যে হতে হয় তা বড়রা কখনোই জানবে না। নিয়মগুলো মেনে চলেছি বলেই কোন বিপদে না পড়ে শিশুকালটা পার করে আসতে পেরেছি।

ছোটবেলার কারো সাথে কিছু মিলে গেলে চিমটি দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। সময়মতো চিমটি না দিলে তার সাথে ভয়াবহ দাঙ্গা ফ্যাসাদ হবার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি খুনোখুনিও হয়ে যেতে। মিলের তীব্রতা বেশি হলে ক্ষেত্র বিশেষে ঘুষি বা কিল দিয়ে মিলের অশুভ প্রভাব কাটানো হতো। বন্ধুর হত্যাকারী হবার চেয়ে আমরা হাসি মুখে দুচারটি চিমটি, ঘুষি, কিল হজম করে নিতাম।


কোন ফলের বিচি খেয়ে ফেললে পেটে সেই গাছের অঙ্কুরোদগম হয় এবং একসময় মাথার তালু দিয়ে বৃক্ষরুপে বেরিয়ে আসে। ছেলেবেলায় বরই এর বিচি গিলে ফেলার ঘটনা বেশি ঘটতো তাই আমরা বরই খাবার সময় খুব সাবধান থাকতাম। বরই কাটাওয়ালা গাছ বলে বরই নিয়ে আমাদের ভীতিও বেশি ছিলো। মাথার তালু দিয়ে গাছ বের হওয়া ঠেকাতে বেশি বেশি ঝাল খেতে হয়। বিচি গিলে ফেললে সতর্কতা হিসেবে প্রথম কয়েকদিন আমি ঝাল জিনিস বেশি খেয়ে নিতাম, এজন্য আমার মাথায় কখনো গাছ গজায়নি।

চা, দুধ বা পানিতে পিঁপড়া ভাসতে দেখলে আমরা ফেলে দিতাম না। খেয়ে নিতাম। কারন পিঁপড়া খেলে সাঁতার শিখা যায়। আমাদের বাসার সামনে পুকুর ছিলো। আমরা যারা পিঁপড়া খেয়ে নিতাম তারা অল্পদিনেই ওই পুকুরে সাঁতার শিখে ফেলেছিলাম। আমার পরিচিত অনেকেই পিঁপড়া দেখলে নাক সিঁটকাতো। তারা কেউই পরে আর সাঁতার শিখতে পারেনি। শুধু কালো পিঁপড়া খেলে সাঁতার শিখা যায় এমন একটা বিশ্বাস অনেকের মাঝে ছিলো যদিও। তবে আমার কালো বা লাল কিছুতেই অরুচি ছিলো না।

আরেকটা নিয়ম ছিলো যদি দুজন মাথায় মাথায় ধাক্কা খায় তাহলে দ্বিতীয় আরেকটি ধাক্কা খেয়ে নিতে হবে। কারন শুধু একবার ধাক্কা খেয়ে বসে থাকলে মাথায় গরুর মতো মস্ত বড় শিং গজাবে। মাথায় শিং গজানো বন্ধ করার জন্য আমরা দ্বিতীয়বার মাথায় মাথায় বাড়ি খেয়ে নিতাম।

এমন আরো অনেক নিয়ম কানুন আছে ছোটদের। বর্তমান কালের বাচ্চারা এসব নিয়ম কানুনের কিছুই জানে না। আমাদের উচিত এসব রীতি-রেওয়াজ আধুনিক বাচ্চাদের শিখিয়ে দেয়া। এরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমরা নিশ্চয় চাইনা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মাথায় বরই গাছ বা শিং নিয়ে বড় হোক।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss