Sunday, February 14, 2016

রাত পেরোলেই পরীক্ষা


রাত পেরোলেই পরীক্ষা । অসম্ভব প্যারা খাচ্ছি । ঘুম আসছেনা । একটা কারনে মন ও বেশ খারাপ । চোখ বন্ধ করে যতই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম ততই কিছু স্মৃতি মনে পড়ছে ।

আমার জীবনের প্রথম বাসা F-9 এর ১৬ নং বাসা । আচ্ছা একটা মানুষের ছোটবেলার স্মৃতি কতটুক মনে থাকে? জীবনের প্রথম ৫বছর ৪মাস কাটানো ওই বাসার অনেক স্মৃতি আমার এখনো মনে আছে বললে আমার ভাই হাসে । ওর ধারনা আমি বানিয়ে বলি কথাগুলো । অথচ আমি বানিয়ে কখনোই বলিনা । আমার সব কিছু মনে না থাকলেও কিছু জিনিস খুব স্পষ্ট মনে আছে ।


আমার মনে আছে সেই বারান্দাটার কথা,সবার একটাই কমন বারান্দা । রুম থেকে বেরোলেই পরিচিত মুখ দেখা যেত ।
আমার মনে আছে বারান্দার এক কোনায় গিয়ে কচি ভাইয়ের সাথে আমরা পিচ্চিরা বিকালে খেলতাম । মানুষটা গায়ে গতরে বড় হলেও যেন বন্ধুই ছিল আমাদের । আমার মনে আছে অন্নি আপু নার্গিস আপু আইরিন আপু আর আমার একি রকম পুতুল ছিল যা দিয়ে আমরা প্রতিদিনই খেলতাম ।

আমার মনে আছে আইরিন আপুকে চেতানোর জন্য আমি আর ভাইয়া দূর থেকে "আয়োডিন যুক্ত লবন" বলে চিতকার করে লুকিয়ে যেতাম ।

আমার জীবনের প্রথম বন্ধু ছিল বাবু ভাইদের পাশেরর বাসার বাপ্পি ভাইয়ের বোন সুমা । প্রতিদিন সকালে দাঁতত ব্রাশ করে ব্রাশ ধুয়ে তারপর ব্রাশে আংগুল চালিয়ে ব্রাশের পানিগুলো সুমার মুখে মারার কথা আমার এখনো মনে আছে । 
একবার প্রবারনা পূর্নিমায় আকাশে ফানুশ দেখতে সবাই বারান্দায় বের হলো,আমি আকাশে ভাসমান ওই হলুদ লাল জিনিসগুলো দেখে ভয়ে আধমরা হয়ে গেছিলাম । আব্বুর বুকের ভেতর লুকোচ্ছিলাম । আমার সেই ভয়ের কথা মনে আছে!

মনে আছে রাতে বারান্দায় ধুপধাপ লাফঝাপ বা চিল্লাচিল্লি করলে নীলু আপুর আম্মু বের হয়ে বলতো "তোমার আমজাদ ভাইয়ারা পড়তেছে,চিল্লাচিল্লি করেনা মা"।। 

মাঝে মাঝে দুইতলায় পানি আসতোনা,নিচ তলা থেকে বালতি বা গ্যালনে করে উপরে পানি তোলা লাগতো । আম্মুর পিছে পিছে ঘুরে এসব দেখতে ভীষন মজা লাগতো ।

সিড়ির পাশে আবরার ভাই সুরাইয়া আপুদের বাসা,সেখানে বারান্দায় এক ইঞ্চি প্রস্থের একটা লম্বা ফাকা জায়গা ছিল যেটার সামনে গিয়ে ভয়ে আর পার হতে পারতাম না,দাঁড়িয়ে থাকতাম । মাহমুদ হাসান ভাইয়া এসে কোলে নিয়ে উনাদের বাসায় নিয়ে যেত ।

দুপুরে এক বাসায় খেলে রাতে আমি আরেকবাসায় খেতাম । ওই বিল্ডিং এর সব বাসাই আমি নিজের বাসাই ভাবতাম!
আমাকে যখন স্কুলে ভর্তি করানো হল তখন বিকাল টাইমে আম্মু আমাকে পড়ানোর চেষ্টা করতো । অন্নি আপুরা তখন জানলার সামনে এসে আমাকে ডাকতো আর আমি করুন চেহারা করে আম্মুর দিকে তাকায়ে আস্তে করে কান্না শুরু করতাম খেলতে যাওয়ার জন্য । বিল্ডিং এর পাশে একটা মাঠ ছিল,খেজুরগাছের কমলা রংয়ের খেজুরগুলো ছিল আমার কাছে বিষ্ময়!
.
.
শৈশব এর প্রায় পুরোটা আর কৈশোরের বেশ অংশ আমি কাটয়েছি ডিটাইপের বাসায় । নিঃসন্দেহে আজ পর্যন্ত সেরা বাসা ছিল ওটা । তবুও কেন আমার এফ টাইপের সব স্মৃতিগুলোই সবচে প্রিয়??
৫বছর বয়সের স্মৃতিগুলোই বা কেন এভাবে মনে আছে আমার??
এখনো যদি বলা হয় ওই এক রুমের খুপরি বাসাগুলোয় আমাকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে,আমি বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করেই রাজি হয়ে যাবো । সেই বিল্ডিংটার আনাচে কানাচেও যে ভীষন ভালবাসা ছিল!!

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss