Tuesday, March 29, 2016

""বাবা""(অবশিষ্ট পর্ব)


আজ অনেকে অনেক কে নিয়ে লিখছেন।।তাই আমি বাবাকে নিয়ে লিখলাম।।
গতবার লিখেছিলাম বাবার ভালোবাসা আর শাসন নিয়ে।।আজ বাকিটা .......

(পরিশ্রম)
পৃথিবীর প্রতিটা বাবাই তার পরিবার-পরিজনের জন্য পরিশ্রম করেন।।আমার বাবাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।।হয়তো একটু বেশিই করেছেন।।কি রোদ,,কি বৃষ্টি।।কোন কিছুর কাছেই যেন বাবা হার মানতেন না।।সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে ছিল বলে বাবার রেস্ট ছিল না।।আট ঘন্টা ছিল উনার ফিক্সড ডিউটি বাকিটা ছিল ওভার টাইম।।ওটাই ছিল বাবার প্লাস পয়েন্ট।।দুটো বাড়তি পয়সার আশায় বাবা নিজের শরীর টাকে কখনও বিশ্রাম দিতেন না।।তাই অন্যরা যখন নির্দিষ্ট ডিউটি শেষে বিশ্রাম নিতেন তখন বাবা নিজের ডিউটি শেষে বাড়তি ডিউটি করতেন।।ডিউটির পরিমাণ ছিল বার ঘন্টা,,চব্বিশ ঘন্টা,,বত্রিশ ঘন্টা পর্যন্ত বাবা ডিউটি করতেন।।অনেক সময় কাজের চাপে ঠিক মতো বাসায় এসে খাবার খেতে পারতেন না।।কখনও কখনও আমি বাবার খাবার পোস্টে দিয়ে আসতাম।।কনকনে শীতের রাতে সবাই যখন পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতো তখন বাবাকে আমরা বিদায় জানাতাম কর্মের প্রয়োজনে।।তখন আমরা গরম কাপড়ের নিচে ঘুমাতাম আর বাবা জেগে থাকতো বাকিদের নিরাপত্তা দিত।।


একানব্বইর ঘূর্ণিঝড়ের কথা সকলেরই কম বেশি মনে আছে।।আমারও কিছু মনে আছে।।প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি আর বাতাস হচ্ছিল।।বাবার ডিউটি ছিল দুই নম্বর গেইটে।।কর্ণফুলী নদীর পাড়ে।।মা শুধু কাঁদছিল।।মায়ের কান্না দেখে আমরাও কাঁদছিলাম।।ভেবেছিলাম বাবাকে বোধ হয় আর ফিরে পাবো না।।কিন্তু আল্লাহ্'র অশেষ মেহেরবানীতে বাবা সুস্থ ভাবে পরদিন বিকেলে ফিরে এলেন।।পরে শুনেছিলাম বাবার মুখ থেকে সেই ভয়ঙ্কর রাতের কাহিনী।।বাবার সাথে থাকা দু'জন লোক সেই রাতে মারা গিয়েছিল।।

সেই রাতের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা এক ওয়াক্ত নামাযও বাদ দেন নি।।পরবর্তীতে দাঁড়িও রেখে দিলেন।।
আল্লাহ্ বাবাকে এখন পর্যন্ত ইবাদত করার শক্তি এবং যোগ্য রেখেছেন।।আল্লাহ্'র রহমতে চারবার হজ্ব করার তৌফিক দিয়েছেন।।

(স্বপ্ন)
বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা দুটো ভাই লেখাপড়া করে শিক্ষিত হবো এবং মানুষের মতো মানুষ হবো।।বাবা যখন ইসলামিক লাইনে চলে গিয়েছিলেন তখন বাবার ইচ্ছে ছিল আমাকে মাওলানা বা কুরআনে হাফেজ বানাবে।।চেষ্টাও করেছিল কিন্তু চোরের না শুনে ধর্মের কাহিনী।।স্কুল থেকে নামিয়ে মাদ্রাসায় দিয়েছিল।।কিন্তু লাভ হয় নি।।প্রচুর মার খেয়েছিলাম।।তবুও ফল হয় নি।।শেষে যে লাউ সেই কদুই রয়ে গেলাম।।বাবা নিরু পায় হয়ে আবারও স্কুলে ভর্তি করালো।।
ব্যক্তিগত জীবনে বাবা সুখী এবং সার্থক।।কারন এটুকু জীবনে আল্লাহ্ বাবার ছোট ছোট চাওয়া গুলো পুরন করেছেন।।শুধু মাত্র আমিই বাবার স্বপ্ন পূরন করতে ব্যর্থ।।

বাবার এখন কেবল একটাই চাওয়া তা হলো,অবশিষ্ট জীবনটা যেন আল্লাহ্'র পথে থেকে অতিবাহিত করতে পারে এবং মৃত্যুর সময় যেন ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরন করতে পারে।।
আজ আর পারছি না।।মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।।আগামী দিন আমার ব্যর্থতা দিয়ে """বাবার''" গল্পের ইতি টানবো।।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss