ক্লাস থ্রি তে কি ফোরে।ক্লাসে এলেন শ্রদ্ধেয় মহসিন স্যার।জানতে চাইলেন,
তোদের এখন কার ক্লাস?
শিউলি আপার।
ও, খোদেজা আপার,
না,স্যার, শিউলি আপার।
ওই একই।
সেই প্রথম আমি জানলাম খোদেজা আপা আর শিউলি আপা একই ব্যক্তির দুই নাম।আপা যখন সি টাইপ ছেড়ে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের বিল্ডিং এর নিচতলায় এলেন,তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম।কারন এর আগে স্কুলের শিক্ষক আমাদের বিল্ডিং এ ছিলেন না।আপাই প্রথমে আসেন।সবসময় তটস্থ থাকতাম কোন ভুল হয়ে গেল কিনা,বেয়াদবি হয়ে গেল কিনা।কিন্তু না দেখলাম, মানুষ টা যত রাশভারী ভেবেছিলাম,তত টা না।পুরো টাই উল্টো। খুব সহজে কিছু মনে করেন না।দুশ্চিন্তা গেল কিন্তু শ্রদ্ধা বেড়ে গেল বহুগুণ। তার কয়েক বছর পর আপা হয়ে গেলেন পাশের বাসার প্রতিবেশী। মন খুলে কথা বলেন,পড়তে ভালবাসেন।আপার হাতে দেখতাম পড়ার কিছু না কিছু থাকত।সেটা পেপার হোক বা বই।ক্লাসেও ছেলেদের মারতেন না,কিন্তু বুঝিয়ে বলতেন।মাঝে মাঝে অভিমানের ছলে অনেক কথা বলতেন।বুঝতাম সেগুলো আপার মনের কথা নয়।
শেষ ঘন্টা য় আপার ক্লাস থাকলে আপাকে পড়া দিয়ে একটু তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতাম মাঝেমাঝে।এখনো অফিস থেকে আগেভাগে বের হলে আপার সেই ছুটি দেয়ার কথা মনে পড়ে।আপা কিন্তু সবার সাথে গল্প করতে পারতেন।একবার আমার নানী বেড়াতে এলেন আমাদের বাসায়।চিটাং এর ভাষায় কি যেন বললেন,দেখলাম আপা ঠিক বুঝে উত্তর দিলেন।এরপর দুজনে অনেকক্ষণ গল্প করলেন।
কলোনি ছেড়ে আসার পর আপার সাথে দেখা হয়নি।যাব যাব করে আর যাওয়া হয়নি।আপারা একদিন ঢাকায় চলে গেলেন চিরদিনের জন্য।শুনেছি,আপা বয়সের সাথে সাথে অনেক অসুখে ভুগছেন।
আপা,সারাটা জীবন যুদ্ধ করে এসেছেন সন্তানদের মানুষ করার জন্য,ভাল রাখার জন্য।তবুও কখনো দেখিনি জীবনের প্রতি বিরক্ত হতে, বরং জীবনকে কিভাবে ভালবাসতে হয় তাই শিখিয়েছেন এই এক জীবনে।তাই জীবনের এই পড়ন্তবেলায় আপনি ভাল থাকুন সব রোগ,শোক, দুঃখ কে জয় করে।

No comments:
Post a Comment