Saturday, March 12, 2016

কথায় বলে সস্তার তিন অবস্থা


কথায় বলে সস্তার তিন অবস্থা, আমি বলি সস্তার সাত অবস্থা তার পরে মানুষ সস্তা খোজে এবং তা কিনে নাস্তানাবোদ হয়। সাত অবস্থার উপলব্ধি আমার হয়েছিল স্কুলে পড়ার সময় তার পরেও আমি সস্তায় মাল কিনে নাস্তানাবোদ হয়েছি। দুই একটা ঘটনা বলি-মুশুরীর ডাল খাবার ম্যানুতে রেগুলার ছিল। তারপরে সকালের নাস্তার পর পরই চুলায় ডাল বসিয়ে দেওয়া হইত। মা জননীর ধারনা ছিল-কোন কিছু খাওয়ার পর ডাল খেলে মুখটা পরিস্কার হয়। অর্থাৎ খাবার পর পান খাবার বিকল্প হিসাবে পাতলা ডালের ব্যবহার। বাবার সকালে ডিউটি থাকাতে আমার উপর বাজারের ভার পরলো। বাজারে অনুপের সাথে দেখা- অনুপ বুদ্ধি দিল সবজি বাজারে-কবির সদাগারের দোকানে বিদেশী মুশুরীর ডাল কম দামে পাওয়া যায়। যাক-পয়সা বাচানোর একটা উপায় পাওয়া গেল। বাসায় আসার পর-মা জননী বললো, কিরে বাবা? এত বড় বড় ডাল কোথা থেকে আনলি? মা-এগুলো বিদেশী ডাল অনেক ভাল। মা তারা তাড়ি শিদ্ধ করার জন্য চুলায় বসিয়ে দিল। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুপুরে ভাত খেতে আজ একটু দেরী হবে। কিন্ত বোঝার তখনও বাকি ছিলো। ডাল চুলায় বসানো আছে তো আছেই, সিদ্ধ হওয়ার নাম নেই। শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ডাল যখন গলবেই না তখন ও দিয়ে ভর্তা করা হউক। কিন্ত দেখাগেল সে ডাল ভর্তা হতেও নারাজ। এমনই তার ড্যাম কেয়ার ভাব যে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়েই দিতে হল। তবে দান দান তিন দান বা সেই সস্তার তিন অবস্থা।


‘‘লাইক ফাদার লাইক সন কিন্ত আমার ক্ষেত্রে-লাইক মাদার লাইক সন” অর্থাৎ আমার মাও আমার মত-অকাজের কাজী ছিল। ঠিক করা হলো ওটা কে আপাতত ছেড়ে দেওয়া হলেও বিকেলে ডালমুট ভাজা করে খেয়ে ফেলা হবে। ডালমুড ভাজার পর সেটার চেহারা যা দারালো তা বলার না। কামড় দেওয়ার সাথে সাথে দাতের শিকড় সহ নড়ে উঠতে লাগল। আমি নিশ্চিত সেই ডাল ভাজা সবটা চিবিয়ে সোজা দৌড়াতে হবে কোন একজন ডেন্টিসের কাছে রুট ক্যানেল করতে।

বাবার সব রাগ দিয়ে পড়ল আমার উপর। যা হবার তাই হলো-রাগ উঠলে বাবার হাতের কাছে যা পেতো তা দিয়েই শুরু করত। পছন্দের মধ্যে-প্রথম স্থানে ছিল-বিছানার ঝাড়ু” (নারকেল গাছ বেশি হওয়াতে-তিনটা বিছানার জন্য 5টা ঝাড়ু ছিল) দ্বিতীয় স্থানে ছিল-সেন্ডেল (ভাই বোন বেশি হওয়াতে ওটাও যথেষ্ট পরিমান ছিল) লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে-এগুলো নিয়ে আরেকদিন লিখব। ঝাড়ুর তিন বারীতে মোটামুটি আমার পিঠের মধ্যে নকশি কাথার সিলায়ের মত দাগ বসে চামড়া ফেটে গেল। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে মা-‘‘জ্যামবাক” লাগিয়ে দিলেন। রাতে ব্যাথায় অনেক জ্বর আসল। মা কতক্ষন পর পর পিঠ দেখছে-আর কান্না করছে। রাতে ক্লাব থেকে পেপার পড়ে বাবা বাসায় আসার পর মার কয়েকটা কথায় বাবা একেবারে বোবা হয়ে গেলেন। রাতে জ্বর আরও বেড়েগেল। জ্বরের ঘোরে-আমার তেমন কিছু মনে নেই-সুধু মনে পরে-বাবা আমার হাত ধরে কান্না করছে। আর বলছে-‘‘বাব তুই আমাকে মাফ করে দিস, আমার অনেক বড় ভুল হয়েগেছে”। বাবার সেই দুঃখ মাখা মুখটা এখনও একটু একটু মনে পড়ে। সেদিন রাতে বাবার জ্যামবাক লাগানো মমতাকে মনে হয়েছিল-বাবা হয়ত তার সব মমতাকে আমার পিঠে ঢেলে দিচ্ছে। আহা-সেদিন যদি বাবার চক্ষু থেকে মুক্তার চেয়ে অমুল্য জলগুলোকে যদি শিশিবন্ধি করে রাখতে পারতাম!

বাবার অনুপস্থিতিতে-তা আমাকে অনেক সুখ দিত। 
চলবে--------------

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss