আমি, রুবেল, Mohammed Wakilul Islam, Owajuddin Chowdhury, Sumit Dutta, মুরাদ নিখিল স্যারের কাছে পড়তাম। স্যার মাঝে মাঝে অবজেক্টিভ পরীক্ষা নিতেন। বেশি ভুল হলে বেত চলত। আমি আর তানিম একজন আরেক জনকে ইশারাতে সাহায্য করতাম কিন্তু রুবেলের পদ্ধতি ছিল ইউনিক। কারো সাহায্য ছাড়াই সে চাইলে ১০০% সঠিক উত্তর দিতে পারতো। স্যারের যাতে সন্দেহ না হয় তাই ইচ্ছে করেই কিছু কিছু ভুল করতো। আমি এটা সবসময় মানি যে, রুবেলের আইকিউ অনেক বেশি। ঝামেলার মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ওর অসাধারণ।
সবাই নিশ্চই জানেন, আমাদের স্কুলে টিফিন ছুটি ছিল এক ঘণ্টা। স্কুলে টিফিন ছুটির সময় আমরা বাসায় গিয়ে ভাত খেয়ে আবার স্কুলে চলে আসতাম। যত আগে আসা যায় তত বেশি বাঁদরামি করা যাবে, এই ছিল আমাদের লক্ষ। রুবেল ছিল এর উলটা, ওদের বাসা ছিল বিএইচ ওয়ানে তিন তলায়। রুবেল বাসায় গিয়ে ভাত খেয়ে দিত এক ঘুম। টিফিন ছুটি শেষে ঘণ্টা পড়লে আন্টি রুবেলকে ঘুম থেকে তুলে দিত। আর ও ঢুলতে ঢুলতে ক্লাসে চলে আসতো। ঘুমের ব্যাপারে রুবেল ছিল খুবই সমঝদার।
ssc পরীক্ষা শেষ, একদিন বিকাল বেলা মনে হল খেজুর তলা দিয়ে সাগরের পাড় থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু একা একা তো আর যাওয়া যায় না। গেলাম রুবেলদের বাসায়। জানালা দিয়ে দেখি রুবেল কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি যতই ডাকাডাকি করি, রুবেলের ঘুম থেকে উঠেই না। আসলে জেগে ঘুমলে যা হয় আর কি, ডাকা ডাকি করে লাভ হয় না। মটকা মেরে পড়ে ছিল, আমার সাথে সময় দেবার টাইম! নাই। এমন সময় দেখি, ওদের জানালার কাছে কিছু ঝুনা নারিকেলের ছোবড়া পড়ে আছে। আর যায় কই, ছোবড়া তুলে রুবেলের গায়ে মারা শুরু করলাম। বেচারা আমাকে মনে মনে গালাগালি করতে করতে শোয়া থেকে উঠে গেল। আমরা গলাগলি সমুদ্র দর্শনে রওনা দিলাম। মরাল অফ দি স্টোরি- যদি কেউ জেগে ঘুমায় তাকে নারিকেলের ছোবড়া মেরে জাগানো যায়। smile emoticon
হাঁটতে হাঁটতে আমরা পতেঙ্গা চলে গেলাম এমন সময় রুবেল বলল ওর ছোট ঘরে যেতে হবে। আমি জানতাম রুবেল প্রকৃতির ডাকে দ্রুত সাড়া না দিয়ে পারেনা। দেখলাম পতেঙ্গাতেই রুবেল ছোট ঘর খুঁজে বের করে ফেলেছে। আসলে ছোট ঘর খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে রুবেলের প্রতিভা অপরিসীম। একবার সকাল বেলা স্কাউট ক্যাম্পে মৌচাক, গাজীপুর যাবার সময় আমরা টঙ্গি স্টেশনে নামি। ছেলেরা যে যার মত চেপে রাখলেও রুবেল ঐ বয়সে, ঐ অপরিচিত জায়গায় ঠিকই আসল জায়গা খুঁজে বের করে। এর পর অগণিত জনতা তার দেখান পথ অনুসরণ করে ছোট ঘরে গমন করে। চলে আসার দিন কমলাপুর স্টেশনেও সে একই কাজের গৌরব অর্জন করে।
রুবেল হল আমার ডায়লগ-ফ্রেন্ড। আমাদের মধ্যে অনেক ডায়লগ আদান প্রদান হতো। যেমন একবার বোম্বাস্টিং খেলার এক পর্যায়ে রুবেলের হাতে বল আর আমি তার সামনে পড়ে গেলাম। তখন রুবেল তার বিখ্যাত ডায়লগ দিল - "সময় বড়ই বে-রহম রে বন্ধু, সময় বড়ই বে-রহম"। আচ্ছা "মারহাবা" শব্দের বিপরীত শব্দ কি কেউ কি বলতে পারবেন? আসলে রুবেল হল এটার আবিষ্কারক। মারহাবা শব্দের বিপরীত শব্দ হল "দুরহাবা"। মাঝে হাত মেলানর জান্য বলত "হ্যান্ডশেক", হাত বাড়ালে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলতো "টাইম শর্ট"। আমাদের আরকটা ডায়লগ হল "পেট্রলের সাথে মবিল মেশাবেন না"। ইত্যাদি নানা রকম ডায়লগ আমরা দিতাম। হাউ ফানি! (এই দুই শব্দ শুধু রুবেলের জন্য smile emoticon smile emoticon )।
একটা পারিবারিক জোকস -
বিশ্ব কাপ খেলার সময় রুবেল আন্টিকে বলল- আম্মা,বিশ্বকাপে তাসকিন রুবেল ওরা সবাই খেলতেসে।
আন্টি বলল - শিমু(ল) কই, শিমু(ল)খেলতেসে না?
রুবেল মনে রাখিস তোর কাছে আমি এখনো ৩২টা মারবেল পাই। আমার মারবেল গুলা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিস।

No comments:
Post a Comment