রাত গভীর। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সাব্বির, কিন্তু ঘুম বাবাজির কোন খবর নাই। আসবে কিভাবে ঘুম? তার মত এ অবস্থায় পড়লে হিটলারের মত পাবলিকই কাঁত হয়ে যাওয়ার কথা। আর সাব্বির তো সে তুলনায় এরশাদ কাকু টাইপ নীরিহ রোমান্টিক মানুষ। যার হৃদয় মন প্রেম টার্গেট প্রাকটিসের জন্য নির্ধারিত। এ জ্ঞান টুকু হওয়ার পর থেকে সে প্রেমে পড়ছে আর ছ্যাকা খাচ্ছে। শৈশব কালে যে সব ছ্যাঁকা খেয়েছে তার সবই মনে মনে। যেমন লাইফের পয়লা ছ্যাকা খেয়েছে ইন্ডিয়ান এক নায়িকার প্রেমে পড়ে। ইউনিভার্সিটি লেভেলে যে ছ্যাকা খেয়েছে সেটা একেবারে উঁচুমানের ছ্যাঁকা, তিন বছর মিরার সাথে একেবারে খুল্লাম খুল্লাম প্রেম করার পর দেখল মিরা বিবির নজর সাত আসমানের চেয়ে উঁচুতে।। সে সাব্বিরের মত মিডল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলের সাথে তিন বছর চুটাইয়া প্রেম করলেও বিয়ের ব্যাপারে ”কাভি নেহি কাভি নেহি” সিচুয়েশন। সেই বোল্ড আউটের পর থেকে সাব্বির আর ওই পথে যায়নি।
ভেজাল লাগলো চাকুরীতে আসার পর। সাব্বির এখনো কনফিউজড এটা কি রান আউট না নাকি ওভার শেষ।মানে ছ্যাক খেয়েছে নাকি খায়নি, এ চিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম ।ঘটনার শুরুটা হচ্ছে মাস ছয়েক আগের, তখন সাব্বিরের চাকরীর বয়স প্রায় তিন বছর।ততদিনে চাকরীর প্রতি তার পুরা অরুচি চলে এসেছে, এ কয়েক দিনে সাব্বির বুঝে গেছে চাকরী হচ্ছে শিক্ষিত দাস। এই যখন সাব্বিরের মরুভুমি অবস্থা ঠিক তখনই তাদের অফিসে রুনি নামে ”চোখ ফেরানো যায়না” টাইপ এক মেয়ে ইন্টার্নি করতে এলো। সাব্বিরের মনেতো এরশাদ কাকু উঁকি দিচ্ছে। মনটা যেন কেমন কেমন করে উঠলো। এমন মেয়ের সঙ্গী হতে না পাড়লে তো মনে হচ্ছে জীবন বৃথা।রুনি ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মেয়ে , তার চার পাশে ব্যাক্তিত্বের এক অদৃশ্য বাউন্ডারী তুলে রেখেছে। সাব্বিরের এরশাদীয় হৃদয়ও সেখানে যেতে পারছেনা।
একদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলো সাব্বির তার প্রিয় মোটর বাইকটি নিয়ে, দেখে রুনি দাড়িয়ে আছে, নির্ঘাত সে ষ্টাফ বাসটি মিস করেছে. সাব্বির তার কাছে গিয়ে বাইক থামিয়ে জিজ্ঞেস কর- কি বাস মিস করেছেন? রুনি সে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। তখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। অফিস টাহম শেষে টেক্সি পাওয়া আর ক্রিকেটে মুস্তাফিজের বল বুঝতে পারা একই কথা। তাই বুকে সাহস নিয়ে সাব্বির বলেই ফেলল ইচ্ছে করলে রুনি তার বাইকে লিফট নিতে পারে। রুনি কি যেন ভাবলো তারপর বলল ঠিক আছে। খুব সাবধানে বাইক চালাচ্ছে সাব্বির।রুনি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলেও আলতো ভাবে একটা হাত সাব্বিরের কাধে রেখেছে সাব্বিরের নিজেকে এরশাদ কাকুর মত ধন্য মনে হচ্ছিল। মনে মনে গান গাচ্ছে “ এ পথ যদি শেষ না হয় ........
পরের দিনও আবার একই ঘটনা। এভাবেই চলছিল । সপ্তাহে দু তিন দিন এভাবেই রুনি সাব্বিরের মোটর সাইকেই েকরে অফিস থেকে বাসায় যেতো।যেদিন রুনি একাই বাসায় চলে যেতো সেদিন সাবিবর কে মনে হতো শূন্য রানে আউট হওয়া হতাশ ব্যাটসম্যান। আর যেদিন সে তার বাইকে করে রুনিকে বাসায় পৌছে দিত সেদিন তার নিজেকে পাঁচ বলে সতের রান করে ম্যাচ জিতানো ব্যাটসম্যান মনে হতো।
অনেক চেষ্টা করেও সাব্বির এই সম্পর্ক টা এর চেয়ে আর বেশী গভীর করতে পারলোনা।
এভাবেই মাস ছয়েক যাওয়ার পর একদিন আচমকা রুনি সাব্বিরের ডেস্কে এসে বলল, আজ তার ইন্টার্নির শেষ দিন।েআজ আমাকে শেষ বারের মত আপনার বাইকে লিফট দিবেন।– সাব্বিরের মনে হলো সাব্বিরের একটি ষ্ট্যামপ মুস্তাফিজের বাউন্সারের দু টুকরো হয়ে গেছে।
অফিস শেষে রুনিকে বাইকে তুলে নিয়ে সাব্বির চলতে লাগলো, - দুজনের মধ্যে কোন কথা হয়নি আর। রুনির বাসার কাছাকাছির্ এয়ারপোর্টের এলাকার এক রেষ্টুরেন্টে খেতে বসলো, রুনির পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার দিলো সাব্বির।সাবিবরের মুখে কোন খাবার যাচ্ছে না, রুনি খাবার খাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে আর বলল সাবিবর ভাই আপনি এমন ভাব করছেন যেন আমি আপনার প্রেমিকা। আসলে আমরাতো জাস্ট ফ্রেন্ড। খাওয়া শেষে রুনি একটি প্যাকেট আর একটি খাম তুলে দিলো সাব্বিরের হাতে। সাব্বির জানতে চাইলে সে বলল প্যাকেটটি তে সাব্বিরের জন্য গিফট আর খামটিতে রুনির বিয়ের নিমন্ত্রন পত্র। ছেলে ক্যালোফোর্নিযা থাকে, বিশাল সম্ভ্রান্ত পরিবার, সামনের শুক্রবারই বিয়ে।এবার মনে হলো সাব্বির হিট উইকেটে আউট।বিদায় নিয়ে রুনি একটি রিকশা নিয়েে উত্তরার বাসার দিকে চলে গেলো।সাব্বির কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বাইক ঘোরাল বাসার উদ্দেশ্যে। মনের মধ্যে যেন বিশ্বকাপ টি টোয়েন্টিতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের এক রানে হারার বেদনা।কিছুদুর যাওযার পর আর বাইক চালানোর শক্তিও নেই, মিরপুর ফ্লাইওভারের নীচে বাইক দাড় করিয়ে একটা বেনসনের ধোয়া ছেড়ে সে ভাবছে যুগেযুগে সবাই কেন মিরা হয়ে যায়।
সবার টার্গেট খালি আকাশেরও ওপারে।
No comments:
Post a Comment