Friday, April 22, 2016

শুন্যতা


অনেক ছোট বেলার স্মৃতি। আমারা তখন কলোনীর C- 6 বিল্ডিংটার নিচতলায় থাকতাম। তখন কলোনীতে সব বিল্ডিং গুলো ছিলো দুই তলা। নিচতলার বাসাগুলার সুবিধা ছিলো পিছনের বারান্দা দিয়েও বাহিরে যাওয়া যেতো। আমাদের তখন চারটা নারিকেল গাছ ছিলো বাসার পিছনে তার মধ্যে একটা ছিলো অনেক ছোট। আমার তখন খেলার কোনো সংগী সাথী জুটেনি। বাসার পিছনের ওই ছোট নারিকেল গাছটাই তখন আমার একমাত্র সংগী হয়ে উঠে। আমি ওই নারিকেল গাছের নিচে বসে আপন মনে একা একা খেলতাম আর মাঠে আমার চেয়ে যারা বড় তাদের খেলা দেখতাম। ওই গাছটার সাথে আমার অনেক সখ্যতা, সকাল বিকাল কাটে আমার ওই গাছের নিচে বসে একাকি খেলা করে। একসময় কলোনীর বিল্ডিং গুলো তিনতলা করা হয়। 


আমরা ওই বিল্ডিং এরই তিন তলায় চলে যাই। তখনও আমি বেশ ছোট। তিনতলায় যাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী নিচতলায় যারা এসেছিলেন তাদের কে দুইটা গাছ ছেড়ে দিতে হয়। আব্বা আম্মার ইচ্ছা বড় দুইটা গাছ রেখে ছোট গাছটা সহ অন্য একটা গাছ নিচতলায় যারা এসেছেন তাদের দিয়ে দিবেন কারন ছোট গাছে নারিকেল ধরে কম কিন্তু আমার জেদ এর কারনে তা করতে পারেনি আমি কিছুতেই ওই ছোট নারিকেল গাছটা হারাতে চাইনি। তিনতলায় যাবার পর নারিকেল গাছটার নিচে আর তেমন একটা খেলতে যেতাম না। বাসার পিছনের বারান্দা দিয়ে শুধু গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। যোগাযোগ কমে গেলেও গাছের প্রতি টান কিন্তু আমার কমেনি। আমাদের বাসায় গাছটার পরিচয় ছিলো তারিকের গাছ নামে। এভাবেই আমি ও বড় হতে থাকি সাথে গাছটাও। ১৯৯১ এর ২৯ শে এপ্রিলের প্রবল ঘুর্নিঝড়। সারা রাতের প্রলয়। সকালে ঝড় থামলে প্রথম যে ধাক্কাটা লাগে আমার বুকে আমার সেই নারিকেল গাছটি ঝড়ে উপরে পড়ে গেছে। ভীষন কষ্ট পেয়েছিলাম। জীবনের প্রথম খুব কাছের কিছু হারানোর কষ্ট। যতোদিন কলোনীতে ছিলাম ওই নারিকেল গাছের শুন্য জায়গাটাতে খালি তাকাতাম আর বুকের মাঝে ভীষন শুন্যতা অনুভব করতাম। 

এরপর জীবনে আরো অনেক কষ্ট পেয়েছি আরো অনেক বড় অনেক আপনজনকে হারিয়েছি জীবন থেকে। বাবা, ছোট ভাই হারানো, নিজের জীবনের সুস্থতা হারিয়ে প্রতিবন্ধী জীবন যাপন। অনেক শুন্যতা অনেক।

এতো শুন্যতা নিয়েও মানুষ বেচে থাকে। হাসে, গল্প করে স্বপ্ন দেখে।

প্রতিটা মানুষের জীবনেই শুন্যতা আছে। যার যার জীবনের শুন্যতা নিয়েই মানুষ বেচে থাকে কারোটাই কেউ দেখতে পায় না
মানুষের জীবনের শুন্যতা গুলো শুধুই নিজের। এই শুন্যতা নিয়ে বেচে থাকতে থাকতে সে মানুষটা নিজেই একদিন শুন্যতায় হারিয়ে যায়।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss