টেস্টারে বসে কাজ করি। ইলেক্ট্রনিক্স ফ্যাক্টরি। রিজেক্ট বোর্ড গুলি টেকনিশিয়ান দের কাছে পাঠিয়ে দেই। মিঃ লিম, আমার রুমে প্রবেশ করলো সাথে এক ইন্দোনেশিয়ান মেয়ে। মেয়েটি আমার সাথে কাজ করবে। হাসি হাসি মুখে হাতটি বাড়িয়ে দিলো, হ্যালো, আমি ইয়ান্তি। আমিও নানার দেওয়া নামটি বললাম, আমি রেজা। দুজনে এক সাথে কাজ করি। মেয়েটি চোস্ত ইংরেজি জানে। কাজের ফাকে ফাকে টুকটাক গল্প। কখনো কেন্টিনে এক সাথে লাঞ্চ বা টি ব্রেক। আমি ইংরেজী দুইটা ওয়ার্ড বললে বাকিটা মেয়েটি বুঝে নিতো! মেয়েটি বুঝতে পেরেছিলো, আমার ইংরেজির দৌড় যে, নওশের কাকা পর্যন্ত! আমি মহাখুশি। মনে মনে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলাম, ভালো মেয়ে। মাঝে মাঝে দুজনে, দুজনের দেশের খবর/টবর নেই। দেশে কি করতে,রেজা? চাষাবাদ করতাম। তোমার বাবা/মা? আমার মা রান্না রানা/বান্না করে। তারপর খাবার নিয়ে, দুপুরে বেলায় ধান ক্ষেতে যেতো, আমরা বাপ/বেটা মিলে, সে খাবার খেতাম। ওয়াও! হ্যাপিফ্যামিলি! তারমানে তোমরা ফার্মার! আমি তোমার দেশে যাবো। এভাবেই আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, আন্তরিকতা। তুমি দেশে কি করতে? মাস্টোরনি ছিলাম! বলো কি? তাহলে এখানে কামলা দিতে আসছো কেন? টাকা কামাতে! আমাদের দেশে বেতন কম। টাকা কামিয়ে দেশে গিয়ে, ব্যাবসা করবো তারপর বিয়ে শাদি! আরেকবার মনে মনে সার্টিফিকেট দিলাম, খুউব ভালো মেয়ে! আন্তরিকতা আর একটু বেড়ে গেলো। গায়ে খুব জর, কাজে যেতে পারিনি। বিকাল বেলায় ইয়ান্তি হাজির! সাথে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। ঔষুধপত্র সহ হোস্টেলে পৌছে দিলো। এবার বলেই ফেললাম, তুমি খুব ভালো মেয়ে, ইয়ান্তি। ছোট্ট করে উত্তর দিলো, আমি জানি।
আন্তরিকতাটা আরেকটু বেড়ে গেলো। ঢাকা থেকে খবর আসলো, রনির মেয়ে হয়েছে। আমার চেয়ে বেশি খুশি, ইয়ান্তি! দুজনে এক সাথে রনির মেয়ের জন্য, খেলনা, আর সোনার চেইন কিনতে গেলাম। আন্তরিকতা এবার অনেক বেশি বেড়ে গেলো। এবার শুরু হলো, দুজনের এক সাথে ঘুরে বেড়ানো আর হিন্দি ছিনেমা দেখা। আমি আবার হিন্দি, ট্রান্সলেট করে বুঝিয়ে দেই!!!!!! ইয়ান্তি খুব খুশি আমার উপর! রেজা তুমি তো দেখি ভালো হিন্দি জানো!!!! এবার আন্ত্রিকতা উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো!!! কোম্পানির পিকনিক, দু'রাত/দু'দিন। সাগড় পারি দিয়ে, ছোট্ট দ্বিপ, লংকাউ-ই। দুজনেই খুশি। এক সাথে ঘুরে বেড়াবো। ছোট্ট দ্বিপে দুজনে ঘুরে বেড়ায়, এখানে সেখানে, গভীর রাত পর্যন্ত, দলছুট হয়ে! এবার আন্তরিকতাটা সীমানা পার হয়ে গেলো! এখন আমরা অনেক কিছুই শেয়ার করি। সকালে আমি আগে ফ্যাক্টরিতে গেলে, অপেক্ষা করতাম, একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো বলে, ঠিক ইয়ান্তিও তাই। কিছুই বলা হয়নি, কিন্তু অনেক কিছুই যেন বলা হয়ে গেছে, দুজন দুজনকে!! ইয়ান্তি একদিন বলেই ফেললো, আমাকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা। রেজা, আমি তোমার সাথে তোমার দেশে যাবো!! আমরা দুজন একসাথে কৃষি কাজ করবো!! মাঠে একসাথে লাঞ্চ করবো!!! তুমি আমাকে নিবেনা???? এই প্রথম ভালোভাবেই বুঝতে পারলাম, আমাদের মাঝে কিছু একটা হয়েছে!!! যাকে বাংলায় বলা হয়---------।
No comments:
Post a Comment