Sunday, May 1, 2016

চন্দন চাচী প্রসঙ্গ এবং অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা


(চন্দন চাচীর কাছে গান শিখতে যাওয়ার নেপথ্য কাহিনী এর আগেও আমি এই পেইজে লিখেছি।তবুও আবার লিখলাম)

খুব সম্ভবত ১৯৮৮ সাল। আমার বয়স তখন চার বছর। সি টাইপের আমাদের বাসার রান্নাঘরের সামনে নেংটু হয়ে রকস্টারের মতো চিৎকার করে গান গাচ্ছিলাম। দোতলার আশিক ভাইয়ের আম্মা উনাদের রান্নাঘরে যাবার পথে আমাকে দেখে মুচকি হেসে চলে যান। আর আমি উসাইন বোল্টের মতো ঝড়ের গতিতে ফালুদা হওয়া ইজ্জতের(!?) বাকিটুকু নিয়ে এক দৌড়ে ঘরের ভিতরে। গানের প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা (!?) দেখে আশিক ভাইয়ের আম্মা আমাকে গান শেখানো জন্য আমার আম্মাজানকে পরামর্শ দেন।এর কিছুদিন পরই আম্মা আমাকে গান শেখাতে চন্দন চাচীর কাছে নিয়ে যান।

সাড়ে চার বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই আমি গান শেখা শুরু করি চাচীর কাছে। টুকরোটুকরো কিছু স্মৃতি ছাড়া বাকি সময়টুকু ঝাপসা হয়ে আছে।কি গান শিখেছিলাম চাচীর কাছে, কতটুকুই বা শিখেছিলাম,তার কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে, আমি সব আপুদের মাঝে একমাত্র ছেলে ছিলাম বলে চাচী বলেছিলেন, "তুই হলি সূর্য। বাকি সব গ্রহ। সূর্যের চারিদিকে যেমন গ্রহ থাকে,তেমনি তোর আশেপাশে এরা গ্রহ "। গ্রহ নক্ষত্রের এতো জটিল হিসাব বুঝার মতো বয়স না থাকলেও অন্তরীক্ষের মতো চাচীর মমতার বিশালত্ব বুঝতে আমাকে বেগ পেতে হয়নি।


চাচীর বাসায় গেলে আসিফ ভাইদের কেমন 'বহিরাগত' মনে হতো। উনাদের বাসায় আমাদের সবার এতোটাই অবাধ বিচরণ ছিলো যে, যতোটা না আসিফ ভাইদের বাসা মনে করতাম,তার চেয়ে নিজের বাসা মনে করে দাপটে চলাফেরা করতাম। রান্নাঘরে বা ফ্রিজে রাখা খাবার খেয়ে ফেলতাম নির্দ্বিধায়। চাচীর প্রশ্রয় ছিলো কিন্তু বাঁধা ছিলোনা কখনোই। চমৎকার হাসিখুশি একটা মানুষ ছিলেন উনি। মজার ব্যাপার হলো,চাচীর ঐ সময়ের চেহারাও আমার স্মৃতিতে ঝাপসা।
চাচীরা স্টিলমিল ছেড়ে কবে চলে যান,তাও আমার মনে নেই।শুধু মনে আছে,চলে যাওয়ার আগে চাচীর বাসায় একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। দুপুরের খাওয়াটা সম্ভবত একসাথে করেছিলাম সেদিন আমরা সবাই। খুব কষ্টও পেয়েছিলাম কলোনি ছেড়ে চাচীর চলে যাওয়ায়।

চলে যাওয়ার পর খুব সম্ভবত দু'বার এসেছিলেন কলোনীতে।রুবা আপুদের বাসায় উঠেছিলেন। সবার জন্য চকোলেট নিয়ে এসেছিলেন। চাচী ছিলেন আমার দেখা উন্নত মানসিকতার সবচেয়ে মার্জিত ও আধুনিক একজন মানুষ। একজন ট্রু আইকন।ছোটবেলায় চাচী চলে যাওয়ার পর ধীরেধীরে বড় হয়েছি কিন্তু চাচীকে ভুলতে পারিনি কখনোই। অনেক খুঁজেছি চাচীকে। মমিন চাচীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ এতো বছর পর হারিয়ে যাওয়া অসাধারণ এই মানুষটির খোঁজ দেওয়ার জন্য। মানুষটা জানতেও পারেননি মমতায় মাখানো হাসি মুখ দিয়ে ছোট ছোট হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার যে চারা তিনি বপন করেছিলেন,উনার অজান্তেই তা আজ মহীরুহ। ফোন দিয়ে "চাচী আমি আপনার সূর্য" বলার সাথে সাথেই চিনতে পেরেছিলেন। পেশাগত পরিচয় শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছেন, " আমার সৌভাগ্য তোমার মতো মানুষ আমাকে এতোটা শ্রদ্ধা করছে"। হায়রে মা আমার!!!! বললাম,"সন্তান প্রধানমন্ত্রী হলেও মায়ের কাছে সন্তান ই থাকে"। মানুষটাকে আমি কতোটা শ্রদ্ধা করি,কেমনে বুঝাই!!!!

চাচীর বর্তমান অবস্থা কমবেশি সবাই জেনেছে। মোসাদ্দেক ভাইকে ধন্যবাদ চাচীর অসুস্থতার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ায়। সর্বোত্তম চেষ্টা করবো চাচীর সুস্থতার জন্য।

এবার আসি অপ্রাসংগিক বিষয়ে| চন্দন চাচীকে নিয়ে দেওয়া মমিন চাচীর পোস্টে এমন কিছু মানুষের কমেন্টস আছে,যারা পোস্ট বা কমেন্ট করে পেইজে ভাইব্রেন্ট না থাকলেও প্রতিটি পোস্ট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। আমি বিশ্বাস করি, এখানে এমন মেম্বারও আছেন,যারা পেইজে আসেন কলোনিতে ফিরে আসতে। আড্ডায় সবাই মধ্যমণি হয়না।কেউ কেউ থাকে,যারা বন্ধুদের আড্ডায় চুপচাপ থেকে অন্যদের দস্যিপনা দেখে মজা পেতে পছন্দ করে। তাই সবাইকে বিনীত অনুরোধ, ব্যক্তিগত রেষারেষি বা অপছন্দগুলো এই পেইজে ভাইরাল না করে মানবিক বিষয়গুলোকে ভাইরাল করুন। আমি বিশ্বাস করি, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি কথা বলে আর ব্যক্তিত্বহীন মানুষ সরাসরি কথা বলার যোগ্যতা রাখেনা বিধায় দশজনকে সাক্ষী রেখে বা ইংগিতে কথা বলে।খুবই দুঃখ পাই যাদেরকে প্রচণ্ড সম্মান করি,তাদেরকে বাচ্চার মতো আচরণ করতে দেখলে। এই পেইজের মাধ্যমে আরেকটি কলোনি গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি| অথচ সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে নিজেদের মধ্যে ভাংগন দেখে। এই পেইজে আমাদের গুরুজন/শিক্ষক থেকে শুরু করে তৃতীয় প্রজন্মের বাচ্চারা রয়েছে। অন্তত তাদের কথা ভেবে আমরা যেন পেইজে খারাপ কিছুকে উপস্থাপন করা থেকে নিজেদেরকে সংযত করি। খারাপ দৃষ্টান্ত যেন স্থাপন না করি।

দুঃখিত অপ্রাসঙ্গিক অপ্রিয় কথাগুলো লিখার জন্য। এই অংশটুকু লিখেছি সমসাময়িক কিছু ঘটনায় "নিরব মেম্বার"দের আক্ষেপের প্রেক্ষিতে, যারা পোস্ট/কমেন্ট না করলেও এই পেইজকে ফলো করেন।

আমি বিশ্বাস করি,বিভেদ ও শ্রেণিহীন,একতাবদ্ধ সিএসএম গড়ে উঠবেই। উঠতে হবেই। যে স্পৃহা নিয়ে আমরা এতোবড় একটা পুণর্মিলনের আয়োজন করেছি "আড্ডা" নামে,সেই স্পৃহাকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবেনা।
উহু..... মোটেও না।

No comments:

Post a Comment