সেই ছোট্ট বেলা, ক্লাস 5/6 এ পড়ি, স্টীল মিল কলোনীতে যখন ছিলাম তখন আজকের এই সন্ধ্যার মত কোন সন্ধ্যায় F-type এর 7 নম্বর বিল্ডিংয়ের পাশের রাস্তায় কিংবা বড় মাঠে আমরা পুচকুরা সবাই জড়ো হতাম চাঁদ দেখার জন্য। আকাশে এদিক সেদিক উকি মেরে চাঁদ খুজতাম। যেই না কেউ একজন চাঁদ দেখতে পেত সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে জানান দিতাম। চাঁদ দেখে মন খারাপ হতো কারন আব্বা আম্মার প্রেসার ক্রিয়েট আর বকাঝকা শুরু হবে সেহেরির সময় থেকেই, রোজা রাখতেই হবে।
আব্বা আম্মার বকুনী খেয়ে সেহেরীর সময় কত কস্ট করে যে ঘুম ভেঙ্গে উঠতাম সেটা এক আল্লাহ মাবুদই জানে। অনেক সময় ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতাম। কিন্তু আব্বা টেনেটুনে ঘুমন্ত আমাদেরকেই বসিয়ে দিত। সেহেরীর সময় কেন যে এতো মজার ঘুম হতো আর স্বপ্ন দেখতাম সেটা ইবলিশ হারামজাদাই জানে। অনেক কস্ট করে দুপুর পর্যন্ত কাটানোর পর পেটে চোঁ চোঁ শুরু হতো। ব্যাস মাথায় ইবলিশের বাচ্চা এসে ঘাঁপটি মেরে বসতো। তারপর নূর ছাফা কাকার দোকান থেকে জমানো টাকা দিয়ে এটা সেটা কিনে লুকিয়ে খেতাম। রোজা রাখিনি কেন কাকা জিজ্ঞেস করলে বলতাম, আম্মা নিষেধ করেছে, সেহেরীর সময় উঠায়নি। আবার কখনও আম্মা যেই না গোসল করতে যেত চুরি করে রান্না ঘরে যেয়ে খেতাম। এদিকে ইফতারের সময় ঠিকি আব্বা আম্মার সাথে একসাথে ইফতার করতাম। এই ছিল সেই সময়ের হালহাকিকত।
তখন দুই একজন বাদে কারো ঘরে ফ্রিজ ছিল না। রোজার প্রথম দিন থেকেই রবিন, ছামির, আজিজসহ আরো কয়েকজন স্টীলমিল বাজার থেকে বরফ এনে বিক্রি করতো। সেই বরফ যাতে গলে না যায় তাই তাতে কুরা (ধানের তুষ) দেওয়া থাকতো। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় বরফের ঠান্ডা পানি পানের জন্য অনেক সময় সাইরেন দেওয়ার একটু আগে যেয়ে বাজার থেকে 1 টাকার বরফ কিনে নিয়ে আসতাম। বাজার থেকে কুরা দেওয়া বরফ নিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে অনেকটাই গলে যেত। মা সেইটাকেই জলদি করে ধুঁয়ে (কুরা সরানোর জন্য) পাতিলে থাকা পানির মধ্যে রাখতো। আর এখন ফ্রিজ খুললেই............
ফ্যাশন টিভির হাড্ডিসার (জিরোতো নয়ই মাইনাস ফিগার) মডেলদের মত চিকনা চাকনা চাঁদটা শেষ রোজার দিন দেখতে কিযে আনন্দ আর মজা লাগতো সেটা ছিল বর্নণাতীত। এই চাঁদই বয়ে নিয়ে আসতো ঈদের খুশীর বার্তা। তাইতো চাঁদ দেখার পর সবাই একজন আরেকজনকে বলে বেড়াতাম "আজিয়া রোজা কালিয়া ঈদ,
তোয়ার মা কান্দে ফিত ফিত (পিত পিত)" ঈদের খুশীতে মা কেন কাদবে সেটা না বুঝেই সবাই মিলে গেয়ে ঊঠতাম। এরকম আরো অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতি আজো নিয়ে যায় সেই খুশী ও আনন্দের দিনগুলিতে...........
No comments:
Post a Comment