সিএসএম কলোনীতে-কয়েকটা জিনিসে আমি হয়তো-‘‘বেষ্ট থ্রিরির মধ্যে থাকবো”-তার মধ্যে ডাব চুরি, মুরগী চুরি, পুকুরের মাছ চুরি, স্কুলের খেলাধুলার পুরুস্কার-কলোনীতে খুব কমই নারিকেল গাছ আছে যেখানে আমার হাত পড়েনি এবং সর্বশেষে ভ্রমন। মোবাইল সেট সহজ লভ্য হাওয়ার আগ পর্যন্ত টেলিফোন মেশিন (পিএবিক্স) ও টেলিফোন সেট এর কাজের কারনে-বাংলাদেশের এমন কোন জেলা নেই যেখানে আমার বিচরণ নেই-অবশ্য আমার পয়সায় নয়। সরকারী অথবা জনগণের পয়সায়। সেই হিসাবে সিএসএম কলোনীর-বেষ্ট টেনকে ‘‘যদি ইবনে বতুতা পদক” দেওয়া হয়-তাহলে হয়তো আমার নামও থাকবে আশাকরি। এবার কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। ভ্রমন বলতে আমরা সাধারণ ভাবে দুরের যাত্রাটাকেই বুঝি। আমিও এটাই বুঝতাম। কিন্ত গত কয়েক বছরে ঢাকার বিভিন্ন রুটে ----- দয়া করে ভাড়ার অতিরিক্ত ভ্রমন করিবেন না---------- জাতীয় নোটিশ দেখে মনের ভেতরে ভ্রমনের সীমারেখা পালটালো। বুঝলাম স্বল্প দ্রুরত্বও শ্রমনের আওতায় পরে। প্রতিদিন সকাল 9.00 থেকে ঢাকা শহরে প্রায় কোটি খানিক মানুষ আমার মত-পেটের ধান্দায় মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমনে বাহির হয়। তবে এই স্বল্প দূরত্বে ভ্রমনের ফিলিংস থেকে-পয়সা কামানোর ফিলিংসটাই তাকে দৌড়ের উপর রাখে। তবে কিছু কিছু মানুষ যারা ভ্রমনের আনন্দ, আলোচনার মাধ্যমে নিয়ে অন্যের আনন্দের ‘‘খবর” করে ছেড়ে দেন। যারা নানা চরিত্রের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে কমন স্বভাবের ভ্রমনকারীরা বেশ দেশ সচেতন। তারা বেশিরভাগ সময়ে হাতে পত্রিকা নিয়ে উঠেন এবং কোন প্রকার সুযোগ পেলেই আলোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেটা যেমন রাস্তার জ্যাম দেখেও হয়, সেটা হয় ট্রাফিক পুলিশের আচারণ দেখেও। এমনকি ড্রাইভারের গাড়ী চালানো দেখেও সেই আলোচনার সৃষ্টি হয়---------------। একটু কিছু হলেই হয়। শুরু হয় ভাষন। সেটা প্রথমে দেশ দিয়ে শুরু হয়, ---‘‘শালার কি দেশে বাস করি-----। ধীরে ধীরে সেটা নান বিষয়ের উপর সিডর গতিতে প্রদক্ষিণ করে শেষ পর্যন্ত নিজের উপর এসে শেষ হয়, ------- আসলে শালার আমরাই ভালোনা, আমরা যদি ঠিক থাকতাম-------। এর ভেতরে হাসিনা আপা, খালেদা ম্যাডাম, এরশাদ কাকু, তারেকসহ বহুজনের উপরদিয়ে এই ঝড়টা যায়। এ থেকে কখনো কখনো বারাক ওবামাও রেহাই পান না।
এখন ঢাকার শহরে লোকাল কোন সার্ভিস নাই। সব টিকেট সার্ভিস চালু করেছে কিন্ত সময় ও সুযোগ বুঝে ভাড়া কাটার পর লোকাল সার্ভিসে পরিনত হয়। গাদাগাদি করে লোক্ উঠার পর শুরু হয় সমস্যা---- হয়তো কারো পায়ে পাড়া অথবা গায়ে ধাক্কা লাগলে ------ কেউ হতো বলল কিরে ভাই, চোখে দেখেন না? অন্য পক্ষ হয়তো বলবে গাড়ীতে উঠলে একটু আধটুক এমন হবে বাসে উঠেছেন কেন? প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে ভ্রমন করতেন। আবার ভাড়া নিয়ে সমস্যা । কিছু কিছু যাত্রী আছে যারা হয়তো ইচ্ছে করে দুয়েক টাকা কম দিয়ে একটা ক্যাচাল বাধিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেন। যতটুকু বুঝি ভ্রমনের একটা প্রধান শর্ত হচ্ছে উত্তেজনা। কে জানে এই স্বল্প দ্রুত্তের যাত্রাকে উত্তেজনায় ভড়িয়ে তোলার জন্য এ আয়োজন কি না? কারণ তাদের পকেটে যে টাকা থাকে না তা না, কিছুক্ষণ হইচৈয়ের পর অবশ্য টাকা দিয়েই ভালবাবে নেমেযান।
বড় দ্রুত্বটাকেই যেহেতু আমরা ভ্রমনের মূল ধরি, সেক্ষেত্রে এখানেও বৈচিত্র কম পাওয়া যায় না। রাত্রে জার্নিতে তো পাবলীক উঠে প্রথমে তা বাস মনে করলেও কিছুক্ষন যাবার পর তার বসার সিটটাকে বাসার বিছানা মনে করে ঘুমানোর আয়োজন শুরু করেন। নিবিষ্ট মনের এই আয়োজন দেখে মনে হয় তার বাসর ঘরের আয়োজনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে এখন মোবাইল তার অফ পিক কালচারে এই ঘুমটা হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন সিটের চিপা চাপা থেকে নিরব গুঞ্জনে মুখুর হয়ে উঠে বাস---------এই তুমি কি পরশু কলেজে আসবা?----এই তুকি কি গত কাল রাগ করেছিলে?----------এখন ইন্টারনেট ও ফেসবুকের বদলোতে আরও কত কি? --------- রোজার দিনে আর নাইবা বললাম। এগুলোতে অন্যান্য যাত্রী সাধারনের সাময়িক ঘুমের অসুবিধা হলেও একটা বৃহত্তর কল্যান সাধিত হয়। তা হলো ড্রাইভারের ভুলেও ঘুমানোর সুযোগ থাকে না।
আর দিনের বেলা বড় জার্নির হিসাব আবার অন্যরকম হয়। যেহেতু েএটা ভ্রমন সেহেতু সকলের প্রায় গভীর মনোযোগ মুগ্ধতায় বাহিরের প্রকৃতিক দৃশ্য দেখে দেখে যায়। সে ক্ষেত্রে তারা সব কিছুতেই কমবেশি মুগ্ধ হবার চেষ্টা করে। এমনকি পথের পাশ্ কাউকে দাড়িয়ে বা বসে -----‘‘ইয়ে করতে দেখলোও তারা মুগ্ধ হবার চেষ্টা করে ওমা কি সুন্দর দৃশ্য----------------------।
আর এখন ফেসবুকে লোকেশন ষ্টাটাস থাকায় একটু পরপর ষ্টাটাস-আমি এখন অমুক জ্যামের-‘‘মাইনকা চিপায়” অথবা ----------------- জায়গায় আছি। ভ্রমন বিষয়টা যদিও ক্লান্তি থাকে তবে সেটা আনন্দের চেয়ে বেশি না। এবার একটু আগেই রোজার ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ছুটিতে অলরেডি অনেকের ভ্রমনের সিডিউলও হয়তো করা হয়েগেছে। বিগত কয়েক বছরের চিত্র তাই প্রমান করে। তাই ভ্রমন নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। এরে বাবা, লেখা তো উপনাস হয়ে যাচ্ছে--কয়েকজন আমাকে লেখা ছোট করার হুমকি দিয়েছে--এখনকার যুগে ফেসবুকে কেউ নাকি আমারমত বড় লেখা লেখে না। তাহ লে আমার একটা ভ্রমন বিষয়ক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে লেখাটা শেষ করি--------পথে যেতে যেতে বাস খারাপ হেয়ে গেল। সুপারভাইজার এসে হাসি মুখে বলল, ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। আমাদের গাড়ী হঠাৎ খারাপ হয়েগেছে। কিন্ত চিন্তার কোন কারণ নেই। একটু কষ্ট করতে হবে। ভিআইপি ক্লাসের যাত্রিরা যেমন আছেন বসে থাকেন, অন্যান্য সিটের---বাচ্চা ও মহিলা যাত্রীরা নিচে নেমে এসে দাড়ান আর বাকি যাত্রীরা আমার সঙ্গে এসে ঠেলুন-----------------------।
(কিছু অংশ সংগ্রহকৃত)
No comments:
Post a Comment