Wednesday, September 30, 2015

শাহজাহান ভাই ও হুজুর স্যারের চাউল পড়া


ক্লাস এইট অথবা নাইনে আমাদের ক্লাসে এক নতুন ছাত্র ভর্তি হলো। আমাদের নতুন সহপাঠীর নাম শাহজাহান। হালকা পাতলা লম্বা গড়নের শাহজাহান এর মুখে সব সময় থাকতো সারল্য মাখা হাসি। মোটা ফ্রেমের চশমা পরা মুখে সুন্দর করে ছাটা গোফ ওয়ালা শাহজাহান সত্যি কারেই ছিলো অত্যন্ত সহজ সরল বোকা সোকা একটা ভাল ছেলে।শাহজাহান আমাদের চেয়ে বয়সে কিছুটা বড়ই হয়তো ছিল সেটা তার গোফ ই বলে দিতো। কিছু দিনের মধ্যে শাহজাহানের সাথে আমাদের দোস্তি হয়ে গেলো। কিন্তু সমস্যা একটা শাহজাহান ক্লাসের সবাই কে ভাই বলে সম্বোধন করে উপায় না দেখে আমরা ও তাকে শাহজাহান ভাই ডাকতাম। 


শাহজাহান ভাই এর শিশু সুলভ কথা বার্তা আমাদের হাসির খোরাকে পরিনত হলো। কিছু দিনের মধ্যে শাহজাহান ভাইয়ের উপর এক নতুন অত্যাচার শুরু হলো, ক্লাসের কে যেন ওর কলম,স্কেল,জ্যামিতি বক্স সব চুরি করতে লাগলো প্রথম প্রথম এইটা সবাই মশকারি ধরে নিলেও নিয়মিত এই কাজ হতে থাকায় এটা আর মশকারি থাকলো না। শাহজাহান ভাই ক্লাসের ক্যাপ্টেন, একে ওকে বিচার দিতো কিন্তু চোর আর কেউ ধরতে পারে না। শেষে বিচার দিলো হুজুর স্যারের কাছে। হজুর স্যার ঘোষনা দিলো চোর ধরতে সবাই কে চাউল পড়া খাওয়াবে পরের দিন কেউ যেন স্কুল না পালায় কেউ স্কুল পালালে ধরে নেয়া হবে সেই চোর, এই ভয়ে পরের দিন সবাই স্কুলে আসলো।

স্যার রোল কল করে কনফার্ম হয়ে নিলো সবাই উপস্থিত আছে কিনা। সবাই উপস্থিত টানটান উত্তেজনা সবার মধ্যে, স্যার ঘোষনা দিলো চাউল পড়া খেলে যে চোর তার মুখের চাউল লাল হয়ে যাবে , কি ভয়ংকর কেরামতি স্যারের। শাহজাহান ভাই চাউল নিয়ে স্যার কে দিলো স্যার তাতে দোয়া পরে ফু দিয়ে একটু করে চাউল সবাইকে দিলো চিবানোর জন্য চাবানো চাউল কিন্তু গিলে ফেলা যাবে না মুখেই রাখতে হবে এবং তা মুখ থেকে বের করে স্যার কে দেখাতে হবে।শাহজাহান ভাইয়ের মুখে বিজয়ের হাসি, চোর ধরা পরবে। ক্লাসের সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা। সবাই চাউল পড়া চাবায়ে মুখে নিয়ে আছে স্যার এক এক করে সবার মুখের চাউল বের করে চেক করছে সবাই কে চেক করা হয়ে গেছে কিন্তু কারো মুখের চাউল ই লাল হয় নাই। 

কিন্তু একজনের মুখের একটা চাউল একটু লালচে লাগলো স্যার তখন ফতোয়া দিলো চোর চুরি করে ক্লাস থেকে যাবার সময় তার গা ঘেসে গেছে তাই তার মুখের একটা চাউল একটু লালচে লাগছে কন্তু চোর তো আর ধরা পরলো না স্যারের কেরামতি শেষ এবার শুরু হলো ছাত্রদের কেরামতি সবাই ফাইজলামি করে কেউ বমির ভাব করতে লাগলো কেউ অজ্ঞান হয়ে যাবার ভান করতে লাগলো সব চাউল পড়ার সাইড ইফেক্ট। 

ক্লাস স্যারের কনট্রোল এর বাইরে, হৈ চৈ শুনে বাতাশের বেগে জাফর স্যার ছুটে এসে হৈ চৈ এর কারন শুনে হজুর স্যারের দিকে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে এমন মুখের ভংগি করে বিরবির করে কি বললো তা বুঝা গেলো না তবে মনে হলো জাফর স্যার ও হুজুর স্যার কে দোয়া পরে ফু দিলো। যাই হোক হুজুর স্যারের চাউল পড়া তে চোর ধরা না পরলে ও এর পর শাহজাহান ভাইয়ের আর কিছু কেউ চুরি করে নাই।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss