কলোনি থেকে বের হয়ে গেছি বেশিদিন হয় নাই, কলোনি থেকে বের হয়ে গেলেও অবসরের পুরোটাই কাটতো কলোনিতে। তখন কলোনিতে অনেক নতুন নতুন সিকিউরিটি এসেছিলেন, পুরাতন সবাইতো আমাদেরকে চিনতো, তাই কেউ তেমন কিছু কখনো বলতো না, কিন্তু নতুন যারা এসেছেন তারাতো আর আমাদেরকে চিনে না। একদিন যে কোন এক কারনে একজন নতুন সিকিউরিটি এর সাথে বড় মাঠে আমার আর মাসুদের ( ব্যাচ-৯৬) তুমুল ঝগড়া। ঝগড়ার একসময় আমি তাকে কথার প্রসঙ্গে বললাম,..............
“ আপনারা আমাদেরকে নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন, এত যে চুরি হয় চোরতো ধরতে পারেন না একটাও, আপ্নারাই হলেন চোর বুঝছেন, আপনাদের সাথে চোরদের যোগাযোগ আছে ।। “

ওরে বাবা এই কথা শুনার পর ওই লোক সেইরকম ক্ষেপে গেলো, আর বলতে লাগলো, “ কি আরে কয় চোর, খাড়াও আই স্যারেরে লই আই, আইজ্জা বুজামু মজা” এই বলে সাইকেল চালিয়ে চলে গেলেন গড়গড় করতে করতে।
আমরা ওইদিকে পাত্তা না দিয়ে বড় মাঠ থেকে হাটতে হাটতে ইউনুস ভাইয়ের দোকানে এসে আমি, মাসুদ-৯৬, রাশেদ-৯৬, হিমেল, এমদাদ আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় আতিক কাকা হোন্ডা নিয়ে ইউনুস ভাইয়ের দোকানের সামনে এসে থামলেন, সঙ্গে ওই নতুন সিকিউরিটি আঙ্কেলও আছেন, ইউনুস ভাইকে ঘটনাটা বলেছিলাম তাই ইউনুস ভাই বললেন, “ রাসেল তোকে ধরার জন্য আসছে, আজকে তোর খবর আছে “
আতিক কাকা তাকে ( সিকিউরিটি ) জিজ্ঞেস করলেন,
“ এরে কুনগারে তোর লগে বেয়াদবি কইচ্চে, চাই আরে দেয়াই দে”
নতুন সিকিউরিটি আঙ্কেল আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “ স্যার ইগা, স্যার আই ১৯৮০ সালে মেট্টিক হাস কইচ্ছি, আর এই হোলা আরে কয় চোর !!!”
আতিক কাকা আমাকে বললেন, “ এরে তুই পাটারি সাবের হোলা ননি, তোরে আই কি কইতাম, কলোনিত আইয়ছ বালা কতা, তুই হেতেরে চোর কছ কিল্লাই? বুইজ্জি, এ্যরে তুই (সিকিউরিটি) হেতেরে অফিসে লই যা, হারুন সাবের লগে বই হেতের বিচার করন লাইগবো , আই আইয়ের ”
আতিক কাকা চলে গেলেন, আমরা দুইজন সিকিউরিটি অফিসে গেলাম।
হারুন আঙ্কেল অফিসে বসা, আমাকে দেখে বললেন “ কি ব্যাপার, তুমি এখানে কেন ?”
আমি বললাম, “ আঙ্কেল আমি জানি না, ওনার কি সমস্যা !!! আমি নাকি ওনাকে চোর বলছি !!! “
নতুন সিকিউরিটি আঙ্কেল বললেন, “ স্যার, আতিক স্যার কইছে হেতেরে আম্নের কাছে লই আইতো, এই হোলা আরে ওপেন রাস্তার মাইধ্যে কয় চোর !!, স্যার আই ১৯৮০ সালে মেট্টিক হাস কইচ্ছি, আর এই হোলা আরে কয় চোর “
হারুন আঙ্কেল বললেন, “ তোমরা কেন যে এমন কর? আতিক সাব যখন পাঠাইছে কি আর করা, তুমি অঙ্গিকার নামা দাও, লিখবা, আমি আর কখনো কলোনিতে আসবো না”
আমিতো খুশি, এইটা আর এমন কি, আমি হারুন আঙ্কেলের কথা মত কাগজ নিয়ে লিখে দিলাম, “ আমি আর কখনো কলোনিতে আসবো না” লিখে স্বাক্ষর করে দিলাম।
এমন সময় আতিক কাকাও এসে হাজির। হারুন আঙ্কেল বললেন, “ আপনি নাকি ওরে পাঠাইছেন আমার কাছে, আমি অঙ্গিকার নামা নিছি ওর কাছ থেকে”। আতিক কাকা বললেন, “ হোলাইন কি কইতাম তোগোরে, কিল্লাই এরুম করছ, কই চাই কিয়ের অঙ্গীকারনামা দিছে হেতে” অঙ্গীকারনামাটা হাতে নিয়েই বলে উঠলেন, “ ওমা…ওমা... কিয়ের অঙ্গীকারনামা লিকছেরে হেতে, কিরে তোর নাম কোনাই, তোর বাপের নাম কোনাই, নাম দি আবার লেই দে ”
কি আর করা আমি আরেকটা কাগজ নিয়ে লিখলাম “ আমি……………… পিতা……………………… আর কখনো কোন কারন ছাড়া কলোনিতে না আসার চেস্টা করবো।“ লিখে আতিক কাকার হাতে দিলাম।
আতিক কাকা পড়ার পর আবার বলে উঠলেন, ” ওমা…ওমা... কিয়া লিকছেরে ইগিন !!! কারন ছাড়া আইতাম’ন হিয়ান কি? আর চেষ্টা কইরবি হিগার মানে কী? আই আর আইতাম’ন লেখ, আবার লেই দে! “
হা হা হা , আমি এইবার আরেকটা কাগজ নিয়ে লিখলাম, “ আমি..................... পিতা............ আর কলোনিতে আসবো না !!!!” স্বাক্ষর।
এরপর মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে কলোনিগেট দিয়ে ঢুকে আবার ইউনুস ভাইয়ের দোকানে এসে হিমেল, মাসুদ, রাশেদ,এমদাদের সাথে আড্ডায় মনোযোগ দিলাম। সাইকেলওয়ালা সিকিউরিটি আঙ্কেল বিচার পেয়ে খুশি মনে সাইকেল চালিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, আমাকে অঙ্গিকারনামা দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আবার সাত্তার স্টোরের সামনে দেখে মনে হয় টাস্কি খেয়ে গেলেন, হা হা হা, ইউনুস ভাই বললেন,” কিরে তোকে আতিক সাব কি বলছে? “ আমি তাদেরকে বিস্তারিত বলার পর বললাম,.............
” অঙ্গীকার নামা দিয়ে আসছি, আর কলোনিতে ঢুকবো না !!!!!!!! “
No comments:
Post a Comment