Friday, October 9, 2015

জানি ইচ্ছা পূরণ হবেনা



স্যরি আজ দুটি পোস্ট দিয়ে ফেললাম একই দিনে। ঘুম আসছে না। কিছু কিছু দিন এমনই থাকে। কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। আমরা যখন সি টাইপের তিনতলা বাসাটায় ছিলাম আমি রান্না ঘরের সাথের কোনার রুমটায় থাকতাম। এই রুমটার মজা হল এটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। অনেক রাত হয়ে গেলে একটু নির্জনতা পাওয়া যেত। তখন মাঝে মাঝে আজকের মতো কিছু রাত আসতো যখন ঘুম নিরুদ্দেশে যেত। আমি খোলা জানালা দিয়ে আকাশে তাকিয়ে থাকতাম। জানালার পাশের নারকেল পাতা নক্ষত্রের আলো দিয়ে কত ভুত প্রেত যে আঁকত আমার মশারীতে। কত রাতে যে আমি উল্কার খসে পড়া দেখেছি। উল্কা পরার সময় নাকি মনে মনে কোন ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়। যতবার উল্কা পরতে দেখেছি ততবার আমি একটা ইচ্ছাই করেছি। ইচ্ছা পূরণ হয়নি। কত রাত দেখতাম স্টিলমিলের চোঙ্গাগুলো দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে আর জেটির সোডিয়াম বাতির আলোয় কেমন লাল হয়ে উড়ে যাচ্ছে ধোঁয়ারা। স্টিলমিল নিয়ে কত ছোট ছোট সপ্নের মতো স্মৃতি আমার। অফিসার্স ক্লাবের গেটের সামনের রাস্তার নিচের ড্রেন ভেঙ্গে গেলো একবার। সিমেন্ট ঢালাইয়ের ঝামেলাতে না গিয়ে একটা এক ইঞ্চি স্টিল শীট কেটে ওখানে বসিয়ে দেয়া হল। ওখান থেকে টাঙ্কির দিকে এগিয়ে গেলে নতুন পিচ দেয়া রাস্তায় একদম ছোট একটা গর্ত। প্রতি রাতে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে ডি টাইপের ওয়াশার টাঙ্কি থেকে পানি খেয়ে একমুখ পানি বয়ে নিয়ে এসে ওই গর্তে ফেলতাম। দিনের পর দিন কোন কারন ছাড়া এই ছেলেমানুষি খেলা খেলেছি আমি। মেডিকেল গেটের কাছ দিয়ে খালপাড়ে ঢুকতেই একটু সামনে বাম পাশে একটা বিশাল পাথর। পাথরটা বর্ষায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে যায় আর শীতকালে বেরিয়ে আসে। পাথরের পাশেই একটা গর্ত। সেই গর্ত থেকেই কলোনির যত ব্যাডমিন্টন কোর্ট আর খেলার মাঠে দাগ টানার চুন যেতো। আমরা এটাকে চুনের খনি বলতাম। আরেকটু এগুলেই একটা পানির পাইপ খালের উপর দিয়ে আড়াআড়ি পার হয়ে গেছে। ছেলেরা পাহাড়ি ছাগলের মতো তরতর করে ওই পাইপ পার হয়ে বিএইচ১ এর পিছন দিয়ে শর্টকাট মেরে দিত। আমি কখনো ওই পাইপ পার হতে পারিনি। সাহসের বড় অভাব ছিল। খালপাড়ের জংলা থেকে পাকা তোকমা খুঁজে বের করে খেতে খেতে চলে যেতাম পুকুর পাড়ে। পুকুর পাড়ের কোনায় মসজিদের কাছের ঝোপে এক জোড়া টিয়া বাসা করেছিল। ওদের সামনে তোকমা ছুঁড়ে দিলে মাঝে মাঝে পায়ে চেপে ধরে খুঁটেখুঁটে খেত আর মাঝে মাঝে ফিরেও তাকাতো না। উড়ে চলে যেতো। 


ভাবতে গেলে দমবন্ধ হয়ে আসে যে বুলডোজার আর বিশাল মাটি কাটার দানবগুলো এসে আমাদের সযতনে সাজানো পুণ্যাশ্রম তছনছ করে দিয়েছে। এখন আর উল্কা পরতে দেখিনা। যদি কখনো দেখি তাহলে আমি একটা ইচ্ছাই করব - প্রতিটা নুড়ি পাথর মিলিয়ে মিলিয়ে, প্রতিটা ঘাস, প্রতিটা খসে যাওয়া গাছের পাতা মিলিয়ে আমাদের কলোনিটা আগের মতো সাজিয়ে দেয়া হোক। জানি ইচ্ছা পূরণ হবেনা। মিথ্যুক উল্কার কারো ইচ্ছা পুরনের ক্ষমতাই নেই।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss