আমি কখনোই রাইটার ছিলাম না, লিখতে যে খুব ভালো লাগে তাও না। আমি সারা জীবন বাধ্য না হলে কোন কাজ করিনা আজো ঠিক তেমনি আছি। আমি সত্যি বদলাতে পারি না । জসিম ভাই এর জন্য আজ আমি বাধ্য হয়ে আবার লিখতে আসলাম । গ্রুপে আমরা না থাকলে মজা হয় না। আমরা বলতে পুরো ৫০০+ ম্যাম্বার। এত বড় ভাই /বোন আছে অনেকের সাথেই এই গ্রুপেই প্রথম পরিচয় হলো। জসিম ভাইয়ার কথা শুনেই মনে হলো ফ্রেন্ড দের নিয়ে কিছু লিখবো ।
আমার ফ্রেন্ড , কাকে নিয়ে লিখবো ? ফেসবুকে আমার মতো নিরামিষ মানুষের ফ্রেন্ডলিষ্টে ৩৭১ জন ফ্রেন্ড !!! ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড সিয়াম/রাব্বির কথা দিয়ে না শুরু করলে ফ্রেন্ডশিপ এর গল্প পুর্নতা পায় না , জাহাঙ্গির,কাজী, কাইয়ুম, রায়হান দের ছাড়া আমি নিজেরে খুজেই পাইনা । পলাশ এর সাথে কথা বলে যে আনন্দ টা খুঁজে পাই তারো তুলনা হয় না। কত যে ফ্রেন্ড আমার গুনে শেষ হবে না । সবার সাথেই মোটা মুটি যোগাযোগ আছে । ফ্রেন্ডশিপ কিভাবে করতে হয় এইটা যার কাছে শিখেছি সেই শুধু নেই আমার কাছে । এক সাথে বড় হয়েছি , কত ঝগড়া করেছি, গাল ফুলিয়েছি , কথা বলা বন্ধ করেছি। স্যাররা মিলিয়ে দিয়েছে আবার ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে , অনেকবার দূরে চলে গিয়েও ফিরে এসেছে এখন তো আমাদের মাঝে কত দুরুত্ব আমাদের দেশ আলাদা , আমাদের দু জন কে আরো আলাদা করে দিয়েছে দুই দেশের মাঝে দেয়াল হয়ে থাকা কাটা তার। আমার আদর্শও হয়তো সুমনের কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে । দূরে সরে গিয়েই হয়তো আমি আরো বেশি অনুভব করতে শুরু করেছি । সময়ের সাথে বন্ধুত্ব আরো শক্তি শালি হচ্ছে।
অনেক খুজেও ক্যাপশনে দেয়ার জন্য সুমনের সাথে আমার কোন ছবি খুঁজে পেলাম না । হয়তো আমরা কখনো কারো কাছে ছবি হতে চাইনি বলে একসাথে ছবি তুলিনি। একটু আগেই বলছিলাম ঝগড়া করতাম । ছোট বেলার ঝগড়ার রেশ কেউ ধরে রাখে না , কি নিয়ে ঝগড়া করতাম তাও ঠিক মনে নেই। যত টুকু মনে পরছে ক্লাস সেভেন এ দুই জনের কথা বলা বন্ধ ছিল। আমি যে রাস্তায় হেটে যেতাম সুমন সে রাস্তায় যেতে চাইতো না। আবার সুমনের ধারে কাছেও আমি যেতাম না। সুমন ছিল ফাষ্ট বয় , আর টেনে টুনে পড়াশুনা চালাতাম। সাত রোল রাখতেই আমার খবর হয়ে যেতো। আমাদের ফাষ্ট বয় ক্লাসের ক্যাপ্টেন হতো সে হিসেবে আমাদের উপর খবরদারি করার দায়িত্ব পেয়েছিল সুমন। আমি সুমনের ক্যাপ্টেন্সি মানতে পারছিলাম না, সেকশন চেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম, পারি নাই। সামনে দিয়ে বাকা হাসি দিয়ে ঘুরে বেড়াত মেজাজ টা খারাপ হয়ে যেতো। মন টা চাইতো দেই হালারে একটা । এক দিন ক্লাসে কোন এক স্যার এবসেন্ট ছিল আমাদের আর পায় কে ? কাজী / রাসেইল্লা আর জাহাঙ্গিররা গেলো তিন তলায় মেয়েদের টাঙ্কি মারতে । আমি সম্ভবত জল বিয়োগ করতে গিয়েছি , সুমনের কাছ থেকে পার্মিশন নিয়ে টয়লেটে যাবো এইটা ভাবতেই পারতাম না। আমার ইগো আমাকে সব সময় সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে দিতো। যাই হোক ক্লাসে ফিরে এসে দেখি হেড স্যার ( কবির স্যার) বিশাল বেত হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আল্লাহ স্যার কে বেহেস্তে বিসিব করুক। ক্যাপ্টেনের পার্মিশন না নিয়ে ক্লাসের বাহিরে যাওয়ার জন্য সুমন মজা করে সবাই রে মার খাওয়াচ্ছে । আজ আমি শেষ । হালায় আমারে আজ জন্মের মাইর খাওয়াইবো । এক সময় আমার সময় হলো হেড স্যার এর মাইর উপভোগ করার !!! আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি , আমি চোখ বন্ধ করে হাত দুইটা এগিয়ে দিতে যাবো সুমন ঠিক সেই সময় বলে উঠলো স্যার নমিই শুধু পার্মিশন নিয়ে টয়লেটে গিয়েছে ।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে অবাক হতেই হলো ।এই রকম সুযোগ পেয়েও আমাকে ছেড়ে দিবে আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই frown emoticon পুরা ক্লাসে আমি শুধু সুমনের কথাই ভাবছিলাম । ক্লাস শেষ হবার পর সুমন রে বললাম আমারে বাচিয়ে দিলি কেন ? একটু হেসে বলল দোস্ত তোকে হেড স্যার মারলে আমি খুব যে খুব আনন্দ পেতাম না!! সারা জীবন আমাকে এর জন্য অনুতপ্ত হতে হতো ।তারপর ধীরে ধীরে আবার বন্ধুত্ব জমে উঠে। আবার কারনে অকারনে দুরত্ব সৃষ্টি হয় । এক সময় আমাদের ষ্টিল মিল বন্ধ হয়ে যায়। সুমন রা চলে যায় ভারতের বারাসাত নামের একটা ছোট শহরে।
যে সুমন আমাকে কবীর স্যার এর হাত থেকে বাচালো সেই সুমন দেশ ছেড়ে চলে যাবার দিন আমি দেখা করতে যাই নাই , আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করি । আমার ভয়ঙ্কর ইগো আমাকে অনেক ভাবে লজ্জিত করে , আমি এখনো সুমনের কাছে সর্যি হই,কখনো মনে মনে বলি ,কখনোবা ইমেইলে বলি, ইনবক্সেও বলি । তবুও আমি অনুতপ্ত। কবীর স্যার এর মাইড় খাওয়াটা আমার অনেক দরকার ছিল । তাহলে আজ সুমনের জন্য কষ্ট পেতে হতো না ।
No comments:
Post a Comment