Saturday, November 7, 2015

অবিনাশ স্যার




ক্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, ক্লাস নিচ্ছেন অবিনাশ স্যার, হঠাৎ আমার কাছে এসে খুব মধুর স্বরে বললেন বাপজান বাইরে কি দেখো, স্যার আমার এক পরিচিত জন যাচ্ছে তো এটা দেখছিলাম- আমার উত্তর। স্যারের মধুর স্বর এবার রন হুংকারে পরিনত কান ধরে টানতে টানতে বললেন, তোর পরিচিত জন যে একটা মাইয়া এইটা তো আমি বুঝি।

স্কুলে পৌছাতে অনেক দেরী হয়ে গেছে, আজ অবিনাশ স্যার আমার খবর করে দিবেন। তাই স্যারকে ম্যানেজ করার জন্য ইউনুসের দোকান থেকে স্যারের জন্য স্পেশাল পানের খিলি নিলাম। ক্লাসে ঢুকতেই স্যার পানটা মুখে দিয়ে আমার ঘাড় ধরে মাথাটা টেবিলে নামিয়ে পিঠের মধ্যে স্যারের হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে (স্যারের আংগুলে সবসময় তিন চার টি পাথরের আংটি থাকতো) রাম থাপ্পড়।


মেট্রিকের কোচিং ক্লাস চলছে, স্কুলে ঢুকে দেখি ক্লাসের সব ছেলে মেয়ে বাইরে বারান্দায় দাড়ানো, আমি যেতেই স্যার আমাকে বললেন ঐ আতিক্যা কি হইছে ক- আমি তো পুরো বেকুব, স্যার আমি তো কিছুই জানিনা এটা বলতেই, আমার কান টা ধরে বারান্দায় সবার সামনে চড় থাপ্পড় মারছেন আর বলছেন মাইয়া মানুষ নিয়া ঝামেলা আর তুই কিছু জানোসনা, এটা বিশ্বাষ করার মতো কোন কথা না।

পরে জানলাম কোচিংযের মেয়েদের সাথে কি নিয়ে যেনো ঝামেলা হয়েছে। আর মূল নায়ক হলো- বুড়ামিয়া, ভূতের আন্ডা বাবু আর রিমান (যে কারনে পরে রিমান কে ওর বাবা মা রাংগামাটি পিকনিকে যেতেই দেননি)। আমি আসলেই কিছু জানতাম না।

গত বছর স্যারের সাথে মিরপুরে দেখা হয়েছিলো, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই স্যার বুকে যেভাবে জড়িয়ে ধরলেন আমার জীবন সার্থক হয়ে গিয়ে ছিলো সেদিনই। 

লেখাপড়ায় কখনও ভালো ছিলাম না, ছিলাম থার্ড বেঞ্চের ছাত্র (চরম খারাপের চেয়ে একটু ভালো)। তারপরও আজ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারি, স্যাররা যে স্নেহ ভালোবাসা দিয়েছেন তা অনেক ভালো ছাত্র ও পায়নি। জীবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি এ স্নেহ আর ভালোবাসা

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss