আমি লিটন , তখন ক্লাস এইট শেষ করে নাইনে উঠলাম। নাইনের বাতাস লাগতেই কেমন জানি নিজেকে সুপারম্যান ভাবতে শুরু করি। পুরা জগতটাই যেন আমার হাতের মুঠোয়। আমি সব কিছু কন্ট্রোল করতে পারি ,সাজু আমাকে সিগারেট ধরাতে শেখালো। উফ কি টান রে মামা। ঐ টিংকা দিবি নাকি এক টান, ফুটবলে মেসি চলে না আসলে আমার নাম টা নিয়েই পুরা ষ্টীল মিলে সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়াতো।
মেসি কি আমাদের ষ্টিলমিলে আসছিল নাকি রে লিটন বলে অট্টহাসি দিয়ে ফেটে পরলো আবু।
যাই হোক সব কিছুই আমার দখলে ছিল শুধু কবীর স্যারের ইংলিশ ক্লাসের সময় মনে হলো আমার সুপার পাওয়ার টা কেউ হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়েছে, ট্রান্সলেশনের সময় কেন জানি মুখ টা খুলতেই চায়না। যথারীতি স্যার এর মাইর জুটলো। স্যার এর শরীরের পুরা শক্তি দিয়ে আমাদের উত্তম মধ্যম দেয়া হলো। উফ আজকে স্যার কি খেয়ে ক্লাস নিতে আসছে রে সাজু, মাইড় একটাও মাটিতে পরে নাই সব গুলি আমার উপর দিয়ে গেছে, বেঞ্চে বসতেও পারছিনা।
বিকালে স্কুল ছুটি হলো। তার আগে পুরান অভ্যাস টিফিন পিরিয়ডের পর ক্লাস পালালাম। অনেক্ষন লেকের উপর বসে ছিলাম, মাইড়ের ব্যাথা তখনো ফিল করছি একটু বৃষ্টি হচ্ছে তবুও বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বৃষ্টির পরিমান বেড়ে যাওয়ায় তে বাসায় ফিরতে বাধ্য হলাম।
সন্ধ্যায় একটু বেড় হলাম, সাজু আর শুভ কে পেয়ে গেলাম। সাত্তার স্টোর থেকে সুখ টান দেয়ার অস্ত্র টা নিয়ে একটু চিপায় গিয়ে ধরালাম। ( এইভাবে বলার জন্য বড় ছোট সবার কাছে আমি দুঃখিত ) ইসমাইল ও আসলো, যত আকাম করার প্ল্যান মাথায় আসে সব সময় টিংকারে পাশে পেয়ে যাই। আয় রে ইসমাইলরে একটা টান দে।
লিটন দেখনা কবীর স্যার এর ডাব গুলি কত বড় হয়েছে? মনে হয় তোরে ডাকছে ......
সাজু এইটা তুই কি দেখাইলি রে ,এত বড় ডাব আমি বাপের জন্মেও দেখিনাইরে মামা।
তো এখন কি করা লাগবে বলে মুচকি হাসি দিলো শুভ
কথাটা মুখ থেকে বেড় হতেই ৪ জন মিলে স্কুলের পিছনে কবীর স্যার এর নারকেল গাছের নিচে চলে যাই ।লুঙ্গিটা টিংকার হাতে দিয়ে থ্রি কোয়ার্টার পরে উঠতে শুরু করলাম। কিন্তু বৃষ্টি হওয়াতে গাছ পিচ্ছিল হয়ে যায়, উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এক লাফ দিয়ে উঠি আবার নিচে নেমে আসি এইভাবেই চলছিল
আমার দিকে তাকিয়ে নিচে ম্যাথ প্র্যাক্টিস হচ্ছে ।বলোতো আবু বান্দর এক লাফে ৪ ফিট উঠে ১ ফিট নেমে এলে বান্দরের ২৫ ফিট লম্বা গাছে উঠতে কত সময় লাগবে?
এই অংক যদি আমি পারতাম তাহলে কি এত বছর ধরে জিএফ ছাড়া থাকতাম, অংক পারিনা বলেই তো কেউ প্রাইভেট পড়তে আসেনা আর টাকা পাই না বলেই তো মাইয়া দের নিয়ে ঘুরে বেড়ানর স্বপ্ন দেখাতে পারিনা।
আমি উপর থেকে চিৎকার করে বললাম শুভ রে বল এই ম্যাথ মিলায় দিতে,নইম্যা দের ব্যাচের দুই মাইয়া ক্রাশ খাইছে ওর উপর ।
অনেক কষ্টে নারকেল গাছের মগডালে পৌছালাম। একটা দুইটা করে ৫/৬টা নিচে নামালাম। ইসমাইল জোরে গান শুরু করলো
চোর চোর আইলো রে , অন্ধকার রাইতে রে
যে কবীর স্যার টের পেয়ে যায় , কেলে (কেরে ) আমাল (আমার) নারকেল গাছে?
সব নিমিশেই লাপাত্তা হয়ে যায়, আমি নিচে নেমে আসতেই দেখি কবীর স্যার বাউন্ডারির লাইনে চলে এসেছে, এখন বাউন্ডারি পার হলেই আমি ধরা পরবো, ভয়ে আমি তখন কাপছি, অর্ধেক্টা নেমে আসার পর দিলাম লাফ। লাফ দিয়ে পরলাম কবর স্থানের উপর। আল্লাহ আমারে মাফ করো
বৃষ্টির কারনে মাটি একটু দেবে যায় বলে উপর থেকে নিচে পরে আমার শরীরের অনেকটা অংশ কবরের মাটিতে ঢুকে পরে। এই অন্ধকার রাতে আমি এমন এক জায়গায় আটকে যাই। উঠলেই স্যার এর কাছে ধরা খাবো, নির্ঘাত বাসায় কমপ্লেইন যাবে ,টিসি পাবো্ পরি মরি করে তাও দিলাম দৌড়, দৌড় দিতে গিয়ে পরলাম ড্রেনের উপর। ড্রেনের ময়লার সাথে একাকার হয়ে গেলাম । তার পর অনেক কষ্টে উঠে আবার দৌড়াতে চেষ্টা করলাম সেখানেও কবীর স্যার এর কন্ঠ শুনতে পেলাম , “কেলে আমাল গাছে ? ”
দূর থেকে দেখলাম শুভ হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। হারামজাদা আমার লুঙ্গি কই?
আরে দৌড়ে পালানোর সময় লুঙ্গি টা মনে হয় কবীর স্যারের গাছের নিচে ফেলে আসছি।
এইবার তাহলে তোর টা দে বলে শুভরে দিলাম দৌড়ানি। দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের দিন গুলো কেটে গেলো। আজ এত বছর পর মনে হলো সেই দিন গুলো ছিল বলেই আমরা এখনো বেচে আছি, সেই দিন গুলো আমাদের বারবার ষ্টীল মিলে নিয়ে যায়,এই কলোনির আলো বাতাস আমাদের কে কখনো ভুলে যেতে পারবেনা ,আমাদের ষ্টিল মিল বন্ধ হয়ে গেলো প্রায় ১৭ বছর হয়ে গেলো ,একটা সভ্যতার পতন হলো, কিন্তু ভালোবাসার যে আবেশ টা তৈরি হয়েছে তা জন্ম জন্মান্তর ধরে চলবে। চলবে আমাদের স্মৃতি হয়ে যাওয়া গল্প গুলোর রোমন্থন।
No comments:
Post a Comment