আমার কখনওই কোন প্রাইভেটটিউটর ছিল না।আব্বা পড়াতেন। শুক্রবার আসা মানেই ছিল আব্বার কাছে পড়তে বসা,তাও আবার অংক আর ইংরেজি। ইংরেজিভীতি ছিল বেশি। সকালে বাজার থেকে ফিরে আমাকে নিয়ে বসতেন।জুম্মার সময় হলে ছুটি পেতাম। ক্লাস এইটে পুরা পড়া তিনি পড়িয়েছেন। অংক পরিক্ষার আগের রাতে মুখে মুখে পুরা বই রিভিশন করিয়েছেন। ফজরের আজানের সময় ডেকে তুলে বললেন নামাজ পড়ে জ্যামিতিটা রিভাইস করতে। করলাম। আবা এসে বসলেন, আবার রাতের মত পুরা বই রিভিশন করিয়ে পরিক্ষার হলে নিয়ে গেলেন। আমি ৯৫ পেয়েছিলাম। বৃত্তিও পেলাম ট্যালেন্টপুলে ফার্স্ট গ্রেডে। ssc এর সময় ত আরো বেশি। আমার সব বিষয়ের আলাদা খাতা ছিল।আলাদা মানে ভাবাই যায় না এমন।
যেমন ইংরেজি গ্রামারের প্রতিটা টপিকের জন্য আলাদা খাতা। মানে voice,narration, transformation, tense,preposition, article,translation, composition,letter,application,question answer. এটা একটা উদাহরন দিলাম।
এভাবে সব বিষয়ের আলাদা খাতা। অফিস যাবার সময় কোন একটা স্কুলের প্রশ্ন সলভ করতে দিয়ে যেতেন ইংরেজি হলে আমি বারটা খাতা নিয়ে যেতাম। এভাবে করতে করতে দেখা গেলো ফাইনালের আগে আমার টেবিলে কোন বই নেই অংক ছাড়া,সব খাতায় উঠে গেছে। রেজাল্টও আল্লাহর ইচ্ছায় ভাল ছিল। Hsc তে আব্বা তেমন সময় না দিতে পারলেও উনার টেকনিক ফলো করে আরো ভাল করলাম। বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলাম। পরবর্তিতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এক বারেই সুযোগ পেলাম ইংরেজি বিভাগে,একবারেই চাকরি। সব কিছুতে আল্লাহর পরেই আব্বার অবদান। আব্বা আমাকে যে সময় দিয়েছেন তা বাকিদের বেলায় এতটা পারেন নি। উমাম কে আবার সেটা পুরাই দিয়েছেন,যার কারনে ওর হাতের লেখা খুব সুন্দর হয়েছে। উমাম কে পড়াতে গিয়ে অনেক টাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। কারন ও কিছু ভুল করলে রাগ হলেই আম্মা,উর্মি শর্মি মোটামুটি যুদ্ধ ঘোষনা করতো।
আব্বাকে নিয়ে প্রতিদিন লিখি,লিখেই যাব। এখন ত এটুকুই ভরসা। শুক্রবার মানেই আমাদের বাসায় বেশ খাওয়ার আয়োজন হত। আম্মা তাই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকত। সকালে খিচুড়ি হত ডিম ভাজি বা ইলিশ ভাজি দিয়ে। দুপুরে ত মহা খাওয়া দাওয়া।আমাদের বাসায় একটা রেয়াজ ছিল প্রতিবেলায় সব একসাথে খেতাম।রাতে টিভিতে ম্যাকগাইভার বা নাটক থাকলে আম্মা খাবার সব ট্রলিতে তুলে টিভির ঘরে আনতো। খেতাম আর দেখতাম। টিভি দেখার শর্ত ছিল,এক ঘন্টা বেশি পড়তে হত। করতাম তাই। এখনকার ছেলেমেয়েদের ত এসবের বালাই নেই।
আব্বা খুব দারুন ইংরেজি জানতেন। হাতের লেখাও সুন্দর ছিল। উনি সামনে থাকলে ইংরেজি কিছু লিখলে, দিতাম চেক করতে। তা থেকেও ভুল বের করতেন। spelling, punctuation এসবের দিকে ছিলেন খুব সতর্ক। আমার বিটিভির ক্লাসগুলা অন এয়ার হলে,উনি দেখে আমাকে ফোন দিতেন। আমার সবচেয়ে বড় critic ছিলেন। আব্বা এবার আমার বাসায় থাকার সময়ও দুইটা ক্লাস রেকর্ডিং হয়েছে। কিন্তু এবার আমার ভুলগুলা আর কেউ বলবেনা। খুব খুশি হয়েছিলেন পত্রিকায় আমার লেখা দেখে। রেগুলার যেটা রাখতেন সেটা পালটে আমার লেখা যেখানে আসতো সেটা রাখতেন। এখনো হয়ত এই কাজগুলা করবো।কিন্তু মন দিয়ে বসে দেখার বা পড়ার আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টি থাকলো না।
২১ দিন হয়ে গেলো উনার যাবার। কিন্তু I can smell him,feel him beside me all the time. Love you Abba. The most important man of my life without the mercy of Allah ofcourse and your effort I wouldn't be what I'm today now.
No comments:
Post a Comment