Saturday, March 5, 2016

বড়াপার বাড়ীতে আমরা


ঢাকা টু নেত্রকোনার পুরো সময়টাই জাবেদ সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে । তাই আমি আর সে পথে গেলাম না।

বড়াপার বাড়িতে পৌছে প্রত্যেককেই ভারাক্রান্ত মনেই দেখলাম। আজকে চাচার জন্য দোয়া হবে তাই অনেক আত্মীয় স্বজন আশেপাশের লোকজন আসবেন। কি বলবো কি দিয়ে শ্বান্তনা দেব বুঝে উঠতে পারছি না। নিরব শ্রোতার মত সব হজম করতেই থাকতাম। এর মধ্যে চাচী এসে বসলেন। বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে নিরবে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাদতে লাগলেন । যার সাথে এই মানুষটি জীবনের দীর্ঘ সময় একই ছাদের নীচে একই বেডে কাটিয়েছে তাকেই একাকী জীবনের বাকী সময়টা একাই টেনে নিয়ে যেতে হবে। চাচী একের পর এক স্মৃতি গাঁথা সেই সব দিনের কথা আমাদেরকে বলতে লাগলেন। আরো বল্লেন চাচা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তিনি আর ফিরবেন না। তাই যাওয়ার আগেই চাচী কে সবকিছুই নাকি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এবং বলেছিলেন সবকিছুই ওইখানেই ফাইলে রাখা আছে। তিনি ফিরেছেন তবে নিথর দেহটাকে নিয়ে।


নাহিদ আপাও সবসময়ি চাচাচাচীর সাথে ছায়ার মতোই ছিলেন কিন্তু চাচার শেষ বিদায়ে থাকার সৌভাগ্য হয়নি। এই মানুষটার কষ্টটা তাই অন্যরকম। আরো অনেক মুরুব্বিদের কাছেও চাচার প্রশংসা, গুনী এই মানুষটার গুনগান শুনলাম। এমনই হয় যে চলে যায় সে অনেক স্মৃতির জন্ম দেয়, অনেককে কাদিয়ে যায় আবার কাউকে হয়তো সারা জীবনভর কাদতে হয়।

বড়াপাকে দেখলাম চাচার কাফনের কাপড় যেটা পড়িয়ে ঢাকা থেকে লাশের ফ্রিজিং এম্বুলেন্স এ করে নেত্রকোনা আনা হয়েছে সেটা আমাদেরকে দেখানোর সময় বারবার শুকছিলেন। (পরে অবশ্য ওমরা কিংবা হজ্বের কাপড় দিয়েই দাফন করা হয়েছে) । তিনি ওটি বারবার শুকছিলেন কারন বাবার শরীরে কয়েক ঘন্টার জন্য জড়িয়ে রাখা এই কাপড়টিতে অসাধারন এক গন্ধ রয়ে গেছে। এই কাপড় নাকি ধুয়ে রাখতে হয় তারপর কাউকে হয়তো দিয়ে দিতে হয় আর নয়তো একই কাজে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে হয়।

অনেক লোকের সমাগমের মাধ্যমে যথাসময়ে মিলাদ ও দোয়া হলো। একজন ভাল মানুষের জীবন অবসান হলো ঠিকি কিন্তু তিনি রেখে গেলেন তার নিজস্ব উত্তরসূরীসহ অনেক গুনগ্রাহী, আত্মীয়স্বজন আর সেই সাথে অনেক স্মৃতির ভান্ডার যেগুলো হয়তো জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত কাঁদাবে প্রিয়জনদের।


ফিরে যাচ্ছি ঢাকাতে সাথে বড়াপাসহ আমাদের তিন মা। ওদের সবার চোখ এখনও ছলছল করছে। এই নেত্রকোনায় ওদের আরো আসা হবে কিন্তু বাবা কিংবা নানা এই মানুষটি আর কখনও কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরবে না কিংবা আর ওদের দৌড়ে গিয়ে নানাভাই বলে চিৎকার দেওয়া হবে না কিংবা বুকে মাথা রেখে কখনও বলবে না তোমাদের জন্যইতো আসা ......

...............

No comments:

Post a Comment