আকাশের রঙ কালো হয়ে আসছে। মেঘ গুরগুর করছে থেমে থেমে। কাকগুলো সব মেঘের সাড়া পেয়ে বিল্ডিঙের কার্নিশে কার্নিশে আশ্রয় নিয়েছে। আর ঝোপঝাড় থেকে বেরিয়ে এসেছে শত শত ময়ূর। এখনো পেখম মেলেনি। লম্বা লেজটা রাস্তায় গড়াচ্ছে। আবার মেঘ ডাকলো। একে একে পেখম মেলতে শুরু করলো ময়ূরের ঝাঁক। মুহুর্তেই রঙ্গিন হয়ে গেলো বাজার গেট, টাঙ্কির তলা, পুকুর পাড়, স্কুল মাঠ। মেঘের ফাক দিয়ে চুরি করে ঢুকে পড়া সূর্যের আলো ময়ূরের পেখমে পিছলে গিয়ে রঙ ছড়িয়ে দিলো সারা কলোনিতে। সেই রঙ মাতালের মতো দুলতে দুলতে আকাশে উঠে গিয়ে হয়ে গেলো রংধনু। বাসাবাড়ি থেকে একজন দুজন করে বের হয়ে আসতে লাগলো বাচ্চা ছেলের দল। ময়ূরের পেখম দুলানো নাচের সাথে নাচতে লাগলো তারাও।
কেউ কেউ ময়ূরের খসে যাওয়া পেখম কুড়াচ্ছে বইয়ের ফাকে গুজবে বলে। আর এদিকে ময়ূর আর মানব শিশুদের নাচতে দেখে খালপাড় আর বুইজ্জার বাগান থেকে ভীত চোখে ধীরে ধীরে মায়া হরিণের দল আসতে শুরু করলো। কি সুন্দর মায়া মায়া চোখ হরিণগুলোর। বাচ্চারা হরিণ দেখে মহাখুশি। কেউ কেউ হরিণের পিঠে বসে হরিণের লোম তুলে খেতে লাগলো। সবাই জানে হরিণের লোম তো আসলে শোনপাপড়ি। হরিণগুলোও শিং বাঁকিয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠলো। পেয়ারা আর নারকেল গাছ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে এলো লাজুক কাঠবিড়ালি। চঞ্চল পায়ে মোটা লেজটি দুলিয়ে কলোনির বাচ্চাগুলোকে কসরত দেখাতে লাগলো।
এদিকে হট্টগোল শুনে পুকুর পাড়ের জঙ্গল থেকে শেয়াল পণ্ডিত বের হলো। সাবধানে পা ফেলে এগুতে লাগলো সে। পণ্ডিত মশাই গত সপ্তাহ থেকে তার চশমাটা খুঁজে পাচ্ছে না। মোজাম্মেল ডাক্তারকে কতবার বলেছে নতুন একটা চশমা গড়ে দিতে, একদম গা করছেনা ব্যাটা। ডাক্তারের মুরগি চুরি করতে হবে ভাবতে ভাবতে পণ্ডিত মশায় ডি-টাইপের ওয়াশার টাঙ্কির কাছে এসে হোঁচট খেলো। এফ টাইপের দিক থেকে একটা বুড়ো হাতী ছোট একটা সাইকেল চালিয়ে এদিকেই আসছিলো। বিএইচ-১ এর মাঠে বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো তার। সাইকেলটা একটা কাঠবিড়ালির কাছে এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া দিয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলতে নেমে গেলো হাতীটা।
একটা গণ্ডার টাঙ্কির গোড়া দিয়ে যাবার সময় হইচই শুনে তাকালো। বাচ্চাদের খেলতে দেখে মুচকি হেসে চলে গেলো সি-টাইপের মাঠের দিকে।
No comments:
Post a Comment