আমি তখন সম্ভবত ক্লাস থ্রীতে পড়ি ঠিক মনে নেই। কিছু কিছু স্মৃতি মনে আছে আর তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। সারাদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। সেইদিন আমাদের বাসায় আমার খালু বেড়াতে এসেছিল। আসার সময় মিষ্টি, লিচু আরও কি কি যেন এনেছিলেন। আমরা তখন ই টাইপ 9 নাম্বার বিল্ডিংয়ের তিনতলায় থাকতাম। 29 এপ্রিল মধ্যে রাতে ঝড় যখন বাড়তে লাগলো আম্মু ঘুম থেকে ডেকে দিল বললো পানিতে সব ডুবে যাচ্ছে।উঠে দেখি খুব বাতাস আর ঝড় হচ্ছিল। আমাদের জালায় কাঁচের গ্লাস ছিল তাই দেখছিলাম নারিকেল গাছ গুলো অনেক জোরে দুলছে। কিছু বুঝতে পারছিলাম না। যেহেতু আমরা তিন তলায় ছিলাম বাসায় দেখি আসেপাশের মানুষজন আমাদের বাসার এসে উঠল। সবাই আল্লাহকে ডাকছে।আমি তখন ছোট মানুষ পেটে খুব ক্ষুধা লাগছে আর কিছুক্ষণ পরপর ফ্রিজ খুলে খুলে শুধু লিচু খাচ্ছি। আসলে ক্ষুধা লাগছিল ঐ লিচু শেষ করার জন্য।
সকাল হলো আম্মুকে দেখলাম খিচুড়ি রান্না করলো যারা বাসায় ছিলেন তাদের জন্য। সবার কাছ থেকে শুনছিলাম কোন একটা আন্টি যেন পানি দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। উনাকে পানিতে টেনে টেনে উপরে উঠিয়ে ছিল। সকালে যখন পানি কমলো পানিতে অনেক হাঁটাহাঁটি করলাম খুব মজা লাগছিল কিন্তু তখনও বুঝিনি এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় মানুষের অনেক ক্ষতি করে গেছে। পড়ে জানতে পারলাম আমাদের কলোনির একটা ছোট মেয়ে নাম ছিল মৌসুমি আমাদের Khokan Didarul Alam আংকেলের ছোট বোন। সে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সেখানে পানিতে ভেসে যায়। কলোনিতে তাকে যখন আনা হয়েছিল আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম আমার এখনও চোখে ভাসে। ওরা এফ টাইপের থাকতো তখন। এই ঘূর্ণিঝড়ে অনেকে তাদের পরিবার, আত্মীয়, ঘরবাড়ি অনেক কিছু হারিয়ে ছিল। তখন হয়তো এতটা বুঝিনি। কিন্তু চারপাশের দৃশ্য দেখে শুনে অনেক খারাপ লেগেছিল। কিছু স্মৃতি অনেক কষ্টের অনেক বেদনার যা কখনো ভুলা যায়না।তবুও সবকিছু ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সবাই ভাল থাকবেন। সবার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করছি।

No comments:
Post a Comment