Tuesday, April 26, 2016

২৯শে এপ্রিল ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়


ক্লাস সিক্সের ছাত্র,৮নং ১০নং বিপদ সংকেতের মর্ম বুঝা হয়ে উঠেনাই,তাছাড়া বড়দের কেউকে আতংকিত হতেও দেখিনি।সাধারণ দিনের মতই রাতে ঘুমিয়ে গেলাম।

মা ধাক্কা দিয়ে মাঝরাতে আমাকে তুলে দিলো, ছোট বোন ঘুম।সেদিন বাবার ছিলো নাইট ডিউটি।ঘুম থেকে উঠে ঝড়ের ভয়াবহতা বুঝে উঠেনি তখনো। আমাদের বাসার পিছনেই ছিলো মসজিদ।উঠে গিয়ে জানালা ভালো করে বন্ধ করতে গিয়েই লক্ষ্য করলাম মসজিদের ওজু করার অংশটি বুঝা যাচ্ছেনা,উপড়ে টিনের চালনি ছিলো,তা দেখা যাচ্ছেনা কেনো!!!ওজু খানা কেমন যেনো সাদা চাদরে ঢাকা, জানালার গ্লাস মুছে পরিস্কার করে ভালোভাবে খেয়াল করলাম ওজু খানা পানিতেই ডুবে আছে।তখনি ঝড়ের ভহাবহতা উপলব্ধি করা শুরু করলাম।মনে পড়লো বাবা তো অফিসেই, ইন্টারকম ল্যান্ড ফোনে অফিসে ফোন করতে লাগলাম কিন্তু ফোন কেউ ধরেনা।আমি জানালা গুলো নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে গেলাম, একটা জানালা ভালো করে বন্ধ করি তো আরেক জানালা খুলে যাচ্ছে।নারিকেল গাছের জোরে জোরে দুলানি আর মাঝে মাঝে উড়ন্ত টিনের ঝনঝনানি সাথে ঝড়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ আর আমার জানালা নিয়ে যুদ্ধ ,তখন পর্যন্ত এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার টাইপেরই লাগতে থাকলো।ঝড়ের কমতির দিকে দরজা খুলে একটু বের হয়ে দেখলাম নিচের মানুষ গুলো দুতলায় অবস্থান করছে, আর আমাদের তৃতীয় তলায় দেখলাম মক্তবের হুজুর কে।অল্প সময়তেই পানির ওই রকম উচ্চতা (২য় তলা কাছাকাছি) দেখে বুঝতে পারছিলাম খুব অল্প সময়েই বেশী পানি চলে আসছিল।


সকালে বাবা ঘরে আসলো,শুনলাম তার মুখেই --ঝড়ের কিছুক্ষনের মাঝেই নাকি টিন উড়তেছিলো,সিকিউরিটি অফিস থেকে দৌড়ে মেইন অফিসের যাওয়ার মাঝেই টিন উড়া দেখেছিল,ভয়ে ভয়ে মেইন অফিসে পৌছেছিলো।বাসায় ফোন করার ব্যাপারটা মাথাতেই আসে নাই বাবার।

বয়স কম তাই উপর থেকে পানির উপর নানা রকম জিনিসের ভেসে থাকা দেখে মজা পাচ্ছিলাম।পরের দিন বিকালে পানি নেই ,এমন সময় আমরা বন্ধুরা মিলে বাজারের দিকে গেলাম।বাজারের ডুবে যাওয়া চালের গন্ধ চারদিকে ছেয়ে গেলো।আরেকটু এগিয়ে মেইন রোডের দিকে যেতেই জোড়ে এক আওয়াজ শুনতে পেলাম সাথে সাথে একটি কালো ছাতি দেখলাম উপরের দিকে উঠতে থাকলো।ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে পারিনাই।সামনে এগিয়ে দেখি এক বয়স্ক মানুষ রাস্তায় পড়ে আছে।যা জানতে পারলাম তা হলো, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীর বহরের থেকে একটি গাড়ী পিছিয়ে পড়াতে গাড়িটি জোড়ে যাচ্ছিলো ,সেই গাড়িতেই ঐ বয়স্ক মানুষের ধাক্কা খাওয়া।

ঘূর্ণিঝড়ের পর কয়েকদিন বাবা কর্নফুলী মার্কেট থেকে বাজার করে আনতো।স্কুলের নিচের রুমে থাকা সব কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।পুরো এক মাস দেশের বাড়িতে থেকেছিলাম।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss