এটি একটি শিশুতোষ পোস্ট। বড়রা পড়বেন না আর শিশুরা যেদিন পড়তে শিখবে সেদিন পড়বে।
আমার ভাগিনা, সংক্ষিপ্ত নাম ওয়াফি। বিস্তারিত নাম ওয়াফি তাজওয়ার। রিকশা এবং রিকশাওয়ালা তার পছন্দের তালিকার এক নাম্বারে আছে। সে তার ট্রাইসাইকেল চালায় রিকশাওয়ালার মতো কোমর দুলিয়ে। আরো ছোটবেলায় তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো "ওয়াফি তুই বড় হয়ে কি হবি?" সে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে জবাব দিয়েছে "আমি রিকশাওয়ালা হব। হবু রিকশাওয়ালার মা বেশ মনক্ষুন্ন হয়েছিলো সেদিন পুত্রের ভবিষ্যৎ পেশা শুনে। তাকে করা এই প্রশ্ন তার হয়ত মনের কোনে কোথাও থেকে গিয়েছিল। সে কিছুদিন আগে তার মাকে প্রশ্ন করলো "আম্মু তুমি বড় হয়ে কি হবা? তার মা উত্তর দিলো "আরো বড় হলে আমি বুড়ো হয়ে যাবো।" ভাগিনা ব্যাপারটার গুরুত্ব উপলব্ধি করলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে মায়ের কাছে ফরিয়াদ জানালো "আম্মু আমি বড় হতে চাই না, তুমিও বুড়ো হয়ো না"।
আমার ভাতিজা আইমান জাওয়াদ রুহিন। সারাক্ষন কথা বলে। তার প্রিয় পশু ডাইনোসর। ডাইনোসরের যত বিদঘুটে নাম আছে সে মুখস্ত করে ফেলেছে। মুখস্ত করেই সে ক্ষান্ত হয়নি, এই জ্ঞান সে সকলের মাঝে বিতরন শুরু করেছে। তার দাদুমনিকে ডাইনোসরের নাম শিখিয়েছে। তাচ্চিবাবাকে শিখিয়েছে (রুহিন আমাকে তাচ্চিবাবা ডাকে। চাচ্চু উচ্চারন করতে পারতো না বলে তাচ্চি ডাকতো, সেটাই বহাল থেকে সাথে বাবা যুক্ত হয়েছে)। এরপর আমাদের বাসার কাজে সহায়তাকারী রাবেয়াকে ধরেছে। রাবেয়ার বাড়ি রংপুর। সে স্বাভাবিক বাংলা শব্দ উচ্চারনেই গলদঘর্ম এখন তাকে শিখতে হচ্ছে টাইরানোসরাস, ওয়ানানোসরাস, প্লাটিওসরাস ইত্যাদি ইত্যাদি। রাবেয়াকে দেখলে আমার মাঝে মাঝে বড় মায়া লাগে।
রুহিনের প্রায়ই কাশি হয়। সবসময় খুকখুক করে কাশছে। সেদিন ভাইয়া রুহিন কে বলল "তুই সবসময় কাশছ, তোর নাম এখন থেকে কাশেম।" রুহিন এই নাম খুব পছন্দ করেছে। সে স্কুলের মিস কে বলে স্কুলের খাতায় তার নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছে ভাইয়ার কাছে।
বন্যা আপার বাড়িতে গেলাম একবার। উঠোনে বসে আছি। হাতে ক্যামেরা ছিল তাই টুকটাক ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দেখি দুই পিচ্চি কি দেখে ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে আমার পাশে বসলো। আমি নাম জিজ্ঞেস করাতে নাম বলল সামি আর সায়মা। সাথে ইংরেজীতে বানান করেও শুনালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমরা কি ভাইবোন? তারা মাথা নাড়লো "হু"।
আপন ভাইবোন?
সামি কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে সায়মাকে জিজ্ঞেস করলো " আমরা কি ভাইবোন রে?"
সায়মা গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলো "দুই ভাইবোন"।
এবার আমি দ্বিধায় পড়লাম। দ্বিধা কাটাতে সামিকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবার নাম কি?
সামি তার বাবার নাম বলল। সায়মাও একই নাম বলল। তাতেও আমার দ্বিধা যায়না। দুজনের বাবার নাম কাকতালীয় ভাবে একই হতেই পারে।
তোমরা কি এক বাড়িতে থাকো?
এবার দুজন একসাথে মাথা নাড়লো "হু"। আমিও নিশ্চিত হলাম ওরা "দুই ভাইবোন" হলেও আসলে আপন ভাইবোন।
একটু পর বাচ্চা দুটোর নানা এসে ওদের নিয়ে গেলো। যাবার আগে ওরা আমাকে সাবধান করে গেলো "পিছনে একটা কুত্তা আছে, কামড়াইবো"।
বুঝলাম কুকুর দেখে ভয় পেয়ে আমার কাছে এসে বসেছিল দেবশিশু দুটো।
No comments:
Post a Comment