তখন অনেক ছোট, বোধয় 4/5 এ পড়ি। শয়নে, স্বপনে টারজান ছিল আমাদের স্বপ্নের পুরুষ। মনে প্রানে টারজান কে আমরা মানতাম হিরো হিসেবে। সেই টারজানের কিছু ফ্লেভার পাইতাম আমারা আশোকের ভেতর। নারকেল গাছের ডাল দিয়ে দোল খাওয়া, দোতলার কার্নিশ থেকে প্রিকুলিয়ার আওয়াজ করে জাম্প দেয়া, তীর ধনুকের ব্যাবহার, সর্বোপরি ৬নাম্বার বিল্ডিং এর আযমের লগে ফাইটিং, সব মিলায় আশোক ছিল আমাদের সেই টারজান এর মূর্তিমান প্রতীক।
তবে চরম বদ হিসেবে ওর ছিল কলোনিতে খুব সুনাম। কারও কিছু হারানো গেলে বা নষ্ট হলে সন্দেহের তীরটা প্রতমেই যেত ওর দিকে। ওর চুরির অপারেশনে নিজ মুরগির খামার বা নারকেল গাছও বাদ যেত না।
একদিন ঠিক দুপুরে সবাই মাঠের কোনে বসে ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি, কিছু প্লেয়ার আশার বাকি তাই বসে আছি সবাই, মাথায় ভুত চাপলো ডাব খাওয়ার। আশোক রে বলাতেই সে রাজি হয়ে গেল। মাঠের ঠিক পাশেই ওদের একটা অনেক লম্বা গাছ ছিল। আর সাম্নেই ছিল ওদের বাসা। (F-11 নিচ তলা )বলতে দেরী নেই সে উঠে গেল গাছের আগাতে কিন্তু ডাব পড়ার আওয়াজে ওর মার ঘুম ভেঙ্গে গেলে, তীব্র আওয়াজে ওর মা “শুয়রর বাইচ্চা, নিজের গাছর ডাব চুরি গরি বন্ধু হলরে খাওয়ার দ্দেনা, আজিয়া থিয়া তুই।“ বলতে বলতে আশ্তে লাগলো। আশোক তো টারজান, ও!! ও!! ও!!! করে সে দিল লাফ গাছের প্রায় অর্ধেক থেকে, কিন্তু বিধি বাম, বেচারা গিয়ে পড়েছে মুরগীর খোঁয়াড়ের উপর, প্রচুর ব্যাথা পাইছে কোন ভুল নাই কিন্তু মায়ের মাইরেরে ভয়ে সে অজ্ঞান এর ভান ধরে পড়ে আছে। ওর মা এসে রীতিমতো প্রলাপ বকতে লাগলো,” ও ফুত, তুই আরারে ফেলায় গেলিগুই যে না!!!!!, আরে কই গাছত উথতি, আই কি মানা গইতাম না......... ইত্যাদি ইত্যাদি.........” টারজান আশোক দেখলো situation under control, দুম করে উঠে বললো, না ওমা, আই আইজু ন যাই...... বলেই আবার দৌড়......।।
আমার লাইফে এরকম দুরন্ত বদমাইশ আর দেখি নাই। অনেকদিন পর কাটগর কালি বাড়িতে একবার দেখা হয়েছিল এক পুজাতে। জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত সেই আশোক এখন অনেক জীর্ণ, রুগ্ন। ৫০০/- একটা নোট হাতে তুলে দেয়াতে সে যে কি খুশী হয়েছিল, বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে হচ্ছিল আরও কিছুদেই, কিন্তু অপব্যয় করবে বলে ইচ্ছে হয়নি, কারন কবিরাতো অনেক ভেবে চিনতে লিখেছিলেন, “কয়লা যায়না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে”, তাছাড়া আমার কষ্টার্জিত টাকাটাওতো ইনফিনিটি না............
No comments:
Post a Comment