আমি সাধারনত বাহিরে ইফতার করি না। বাড়িতে সবার সাথে বসেই ইফতার করি। ইফতারি করে পাড়ার দোকানের দিকে বের হলাম ৭.১৫ এর দিকে এবং দোকানে পৌঁছে একটা চা এর অর্ডার দিলাম(যদিও বাড়িতে চা পান করেছি তারপরও কেন জানি পাড়ার দোকানের চা পান না করলে খাবার হজম হয়না)। হঠাৎ দেখি সেল ফোনে গ্রামীণ নম্বর থেকে এস এম এস এবং সেটি পড়লাম। পড়ে একটু ভয় পেলাম(আমার একটু ভয় পাবার সংশয়ও আছে)। আমি আর রিপ্লাই না করে সরাসরি গ্রামীণ নম্বরটাতে ফোন করলাম এবং দুইটা রিং পড়ার পর ওপাশ থেকে কেটে দিল। আমি আবার করলাম এবং ওপাশ থেকে কেটে দেয়। আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো কারন দেশের যে অবস্হা তাতে একটু ভয় পাওয়ারই কথা(গতকালও আমার এখান থেকে দুই কিলোমিটার দুরে রাত এগারোটার দিকে গোলা গোলিতে এক জন নিহত এবং আরেক জন চমেক হাসপাতালে আইসিও তে)।
যাই হোক এস এম এসটি ছিল ...
tumi ki titu.
ওপাশ থেকে যখন ফোন রিসিভ করে না তখন মেরিডিথের উক্তি টি মনে পড়ে গেল ___
'সাহস নিয়ে বেঁচে থাকো না হয় মরে যাও।'
আমিও সাহস নিয়ে রিপ্লাই দিলাম ...
tumi ke?
তারপর দেখি কোন খবর নেই। হঠাৎ দেখি আরেকটা গ্রামীণ নম্বর থেকে সরাসরি ফোন( আরো ঘাবড়ে গেলাম)। রিসিভ করবো কি করবো না করতে করতে অতঃপর করলাম ...
আমি :- হ্যালো কে?
ওনি :- আমি গাউস
আমি :- কি নাম বললেন ভাই (স্পষ্ট শুনতে পায়নি)
ওনি :- ঢাকা থেকে গাউস
আমি:- ঘাস !!! কোন ঘাস ভাই !
ওনি:- ভাই গাউস নাম কখনোই শুনেন নাই
আমি:- ওহ গাউস তা ভাই কি করতে পারি আপনার জন্য!
ওনি :- এটা কি xxxxx35xxxx
আমি:- না ভাই এটা xxxxx53xxxx
ওনি দুঃখিত বলে কেটে দিলেন।
এরই মধ্যে ঐ গ্রামীণ নম্বর থেকে আবার এস এম এস করলো ...
tumi ki csm colonyr f/X/Y er t2 na?
যাক বাবা পরানে আমার পানি এলো এবং চিন্তা করলাম আর যাই হোক এটা কোন রিস্কে পড়ার নম্বর না। আমি রিপ্লাই করলাম
Phone receive koro khota boli...
এই বলে ফোন করলাম এবং সে রিসিব করলো ....
আমি :- হ্যালো কে?
ওপাশ :- আমি নেত্রকোনা থেকে রফিক
আমি :- নেত্রকোনা থেকে রফিক ! কোন রফিক?
রফিক :- শালা আমাকে চিনতোচস না! সিএসএম এ তোদের বাসার পাশে ছিলাম
আমি :- ওহ রফিক, তুই তো ময়মনসিংহের, নেত্রকোনা বলছিস কেন? কেমন আছিস তুই? (আহ কি পরিমাণ ভাল লাগছে বুঝানো যাবে না)
রফিক:- ভালো, আপাতত এখানে আছি কিছুদিন পর ময়মনসিংহের সদরে থাকব। তুই কেমন আছিস?
আমি :- ভালো , অনেকদিন পর কি অবস্হা তোর!
রফিক :- না তেমন কিছু না, বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিলো আর আমি ঘরে শুয়ে শুয়ে আমাদের সেই প্রাণের সিএসএম এর স্মৃতি গুলো মনে পড়ল তাই তোকে নক করা।
আমি:- এইভাবে কেউ নক করে! আমিতো ভয় পাইছি। তা কি স্মৃতি মনে পড়ল বল দেখি?
রফিক :- আমার চোখের সামনে সব কেন জানি সব পরিষ্কার ভাসছে। তোর অমুকের কথা মনে আছে! আমরা এইরকম ছিলাম, সেইরকম ছিলাম আরো কত কি!
আমি:- মনে থাকবে না কেন! সব মনে আছে । রফিক :- তোরা যখন গাড়িতে উঠতে ছিলি তখন আমরা সহ অনেকে কি কান্নাকাটি করছিলাম! এমনকি পাশের বিল্ডিং এরও অনেককে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদতে দেখছি কিন্তু তুই একদম স্বাভাবিক ছিলি তোর কোন সারা শব্দ ছিল না।মনে আছে!
আমি:- আসলে আমি কারও দিকে তাকাবার সাহস পাচ্ছিলাম না এবং সারা পথেই আমি কান্না করছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, পাশের বিল্ডিং এ কে কে কান্না করছিলো?
(রফিক একে একে সবার নাম বলল এবং আমি অবাক হলাম এবং অনেকটা তার মত নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম)
বললাম এতদিন পর তোর এইসব কথা মনে পড়ার কারন কি?
রফিক:- কারন কিছুই না। মনে পড়ছে এবং তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি:- চিন্তা করিস না সামনের আড্ডায় দেখা হবে।
রফিক:- না। সেতো অনেক দেরি হবে। আই না আমার এখানে! কথা দে আসবি!
আমি:- তুই আয় কক্সবাজার।
রফিক:- নারে আমি সময় পায় না। তুইতো ঢাকাতে আসোছ আসলে পরে এখানে আয়।
আমি:- ঠিক আছে যা আসব তবে এখন রোজার মাস এখন না ঈদের পরে ইনশাআল্লাহ আসব।ঠিক আছে!
রফিক:- ঠিক আছে।
তার ওখানটাই যাব যখন বলেছি সে তখন আমাকে ঢাকা থেকে কোথায়, কিভাবে, কোন গাড়িতে করে, কতক্ষণ সময় লাগবে এবং ময়মনসিংহ এর কোন জায়গায় নামব সব বলে দিল আর আমি তার কথা বলার এক্সপ্রেসন গুলো চিন্তা করে হা করে শুনেই গেলাম এবং অনেকদিন পর খুবই ভাল লাগল খুবই যা বলে বুঝানো যাবে না।
ভাল থাকিস বন্ধু ।

No comments:
Post a Comment