Monday, July 18, 2016

হুমায়ূন এফেক্ট........


হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর একটা আউলা ঝাউলা ছেলেকে তার ধানমন্ডির বাসা দখিন হাওয়ার
সামনে বসে থাকতে দেখা যেত। অনেকদিন বসে ছিল। পরনে হলুদ পাঞ্জাবি ছিলনা,কমলা টাইপ কিছু একটা ছিল। পায়ে স্যান্ডেল ছিলনা, হাতে ছিল। বির বির করে নিজের সাথে কথা বলত সে ছেলে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করত
- ভাই কি চান
- রূপাকে চাই
দিস ইজ হুমায়ুন এফেক্ট
.
হুমায়ূন আহমেদের হাতিরপুলের বাসা। হাতিরপুল বাজারের ডানপাশের রাস্তায় লোকজন মিছিল টাইপ কিছু একটা করছে। উত্তাল স্লোগান উঠছে সে মিছিল থেকে। আর দশটা রাজনৈতিক মিছিল ছিল না সে মিছিল। নাটক আর সিনেমার জগতে প্রথমবারের মত নাটকের কোন একটা চরিত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে নাট্যকারের বিরুদ্ধে হচ্ছিল সে মিছিল
.
চরিত্রের নাম ছিল বাকের ভাই নাটকের নাম কোথাও কেউ নেই আর সে অপরাধী নাট্যকারের নাম হূমায়ুন আহমেদ মা যাকে আদর করে কাজল ডাকত। 
নাটকের চরিত্রের মৃত্যুতে মিছিল হয়
দিস ইজ হুমায়ূন এফেক্ট 
.
কোথাও কেউ নেই নাটকের শেষ পর্ব প্রচারিত হচ্ছে।বাকের ভাইয়ের ফাসি কার্যকর হয়েছে। ফজরের আযান বাজছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। পৃথিবীতে বাকেরের আপনজন বলতে কেউ নেই। বাকেরের লাশ নিয়েও তাই কারো মাথা ব্যাথা নেই। শুধু মুনা নামে একটা পাগল মেয়ে আছে যে পাগল মাস্তান বাকেরকে ভালোবেসে ফেলেছিল। 
.
এদিকে আমাদের টিভি রুমের অবস্থা তখন, খাটের উপরে আম্মা কাদতেসে। আব্বা আম্মার
দিকে তাকিয়ে হাসবে না কাদবে সেটা বুঝার চেষ্টা করতেসে। আমি যদিও এইসব কান্নাকাটির মধ্যে কখনও ছিলাম না। বাসায় বেড়াতে আসা আত্মীয়গোছের লোকটাও খাঁটে বসে ফুপিয়ে কাদতেসে। 
দিস ইজ হুমায়ুন এফেক্ট 
.
২০১২ সালের জুলাইর ১৯ তারিখে হুমায়ূন স্যার আমাদের ছেড়ে চলে যান। আজ এলোমেলো পাগলা টাইপের মানুষটার মানে স্যারের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। 
যেখানেই আছেন ভালো থাকবেন স্যার্। উই মিস ইউ।
.
হুমায়ুন আহমেদ শুধু লেখক কিংবা নাট্যকারের চাইতে বেশি কিছু। পৃথিবীতে ভালো লেখক আছেন , শ্রেষ্ঠ লেখক আছেন কিন্তু আপন লেখক নেই। আপন লেখক ঐ একজনি ছিল। হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় স্পেশালিটি বোধহয় এটাই। যে হুমায়ূন আহমেদ পৃথিবীর সবচেয়ে আপন লেখক। নিজেদের লোকই মনে হতো।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss