গতকাল কলোনীর কিছু চুরির ঘটনা লিখতে গিয়ে-বন্ধু মানিক ও অন্যান্য কিছু বন্ধুর কিছু গোপনিয় ঘটনা চলে আসায় আর ওপেন পেইজে লিখতে পারলাম না। ঘটনার মোড় ঘুড়িয়ে ভ্রমনের অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে গেলাম। আজকে আর একটা নিজের জীবন থেকে নেওয়া ঘনটার কিছু অংশ শেয়ার করলাম। প্যানাসনিক ব্যান্ডের কমিউনিকেশন সাইডে-পিএবিক্স ফ্যাক্স এর সফটওয়ার ও হার্ডয়ার ট্রেনিং এর জন্য জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে ট্রেনার আসল। তাদের সাথে হোটেল শেরাটন ও পূর্বানী হোটেলে অনেকগুলি গ্রুপিং ফটো তুললাম। ফটোগুলি দেখে বৌয়ের ধারনা আমি অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়েগেছি-যেই বাসায় আসে তাকে ফটোগুলি দেখায়। একদিন বাসায় এসে দেখি বাসায় অনেক মানুষ। কি ব্যাপার? সবাই জানালো আমার মত ইলেকট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ ইহজগতে আর নাই। সবাই চাচ্ছে আমি যেন দেখে শুনে তাদের টেলিফোন, ফ্যাক্স এমনকি কম্পিউটারও কিনে দেই। মোদ্ধা কথা বিনা দালালিতে দালাল। বিশেষজ্ঞ দালাল। সবাইকে হ্যান-তেন বলে খেদালাম কিন্ত বাড়ীওয়ালাকে ঠেকানো গেল না। একদিন সকলে অফিসে আসব এমন সময় বাড়ীওয়ালা এসে হাজির।
বাড়ীওয়ালা আবার এখানে থাকে না। থাকেন উত্তরায় গাড়ী নিয়ে হাজির। বাড়ীওয়ালাকে সকল সকল দেখে ভাল লাগল না। ভাড়াতো কেয়ারটেকার ছ্যামরাটা নিয়ে যায় এই মড়া আবার এখন কেন? বাড়ীওয়ালা দর্জায় দাড়িয়ে বলল? আসতে হুকুম দিন। কথা শুনে গা জ্বলেগেল, ঢং, ঢংয়ে আর বাচেনা। আমি হাসি মুখ করে বললাম আসুন। বাড়ীওয়ালা এসে সোফায় বসল। তারপর ধিরে সুস্থে যা বলল তাতে আমার ট্যারা হওয়ার জোগার। বাড়ীওয়ালার ক্লাস 7 পড়ুয়া ছেলের জন্য কম্পিউটার ও নিজের জন্য একটি ফ্যাক্স মেশিন কিনবেন। ছেলেটা নাকি বখে গেছে। স্কুলে যায় না ঠিকমত, পুলিশেও দুই একবার ধরে নিয়ে গেছিল। ছেলে বলেছে বাবা কম্পিউটার কিনে দাও, কম্পিউটার না দিলে পড়বনা। আমি বুঝিয়ে বললাম ক্লাস 7 এর ছেলের জন্য তেমন দরকার নেই। আসলে ও পড়বে না। ফালতু বাহানায় ধরেছে। বাড়ীওয়ালা হাত তুলে বাধা দিলেন, সেতো জানে তবুও ঘরে একটা কম্পিউটার থাকা দরকার। একটা কম্পিউটার না থাকলে ঘরটা বেমানান লাগেনা? আমি বললাম জি লাগে। তাহলে আমাকে একটা কম্পিউটার ও ফ্যাক্স মেশিন কিনা দেন, আপনি ভাল চিনবেন।
বাড়ীওয়ালা বলল কি ভাই সাহেব কবে যাচ্ছেন? দেখুন আমারতো সময় হবে না-আমি আমার এক পরিচিত দোকানের নাম দিয়ে দেই। আপনি সেখানে গিয়ে আমার নাম বললেই হবে। বাড়ীওয়ালা এবার হাসি মুখে বললেন, আজকাল মন্ত্রী মিনিষ্টারের কথায় কেউ শোনে না- তা আপনার নাম। এ কথায় আমি বেশ অপমানিত বোধ করলাম। বাড়ীওয়ালার কথা অনুযায়ী কাজ করলাম। সপ্তাখানেক পরে সন্ধ্যা 7.00 বাসায় এসেছি এমন সময় বাড়ীওয়ালার ফোন। তার আমেরিকা থেকে ফ্যাক্স আসবে কিন্ত মেশিন কাজ করছে না। একই কাপড়ে যন্ত্রপাতির ব্যাগটা নিয়ে ছুটলাম উত্তরায় গোড়ান থেকে উত্তরা। যেতাম না-বৌ এর নতুন আলমারী ও ড্রেসিং নতুন টেবিল কেনাতে হাত টান থাকায় এক মাসের বাড়ী ভাড়া বকেয়া ছিল। যেয়ে দেখি ফ্যাক মেশিন টেলিফোন মুডে আছে, এক মিনিটে বাটন চিপে টেলি/ফ্যাক্স মুডে নিয়ে এলাম মেশিন ঠিক হয়েগেল। রাস্তায় নেমে ভয় করল যেতে যেতে সারে এগারোটা বারোটা বাজবে। ঢাকার শহরে বড় রাস্তায় বারোটা কোন ব্যাপার না কিন্ত গলি ঘুপচিতে রাজনৈতিক ক্যাডার ছোট ভাইয়েরা রোজগারে নামে। আগে হাইজ্যাকার, চোর ছ্যাচর ছিল। এখন পুরান পাগলের ভাত নাই। সব তোবা করে সরে গেছে। এখানেই ভয়। এদের পুলিশ বুঝে-শুনে ধরে-ধরলেও ধরে রাখতে পারেন না। নিজেদের ধরা খাবার ভয়ে কারণ ধরে রাখলেও পরদিন দেয়ালে চিকা পরবে, রাজপথে সাহসি সন্তান ওমুক ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। রাত পোনে বারটায় মতিঝিল শাপলা চত্তর নামলাম। রিক্সা নিয়ে বাসার দিগে রোয়ানা দিলাম।
নটোরড্যাম কলেজের সামনে-চেকিং পোষ্টে রিক্সা দাড়করালো এবং বলল-ব্যাগে কি? আমি বললাম-ব্যাগে কি মানে? আমি বললাম ঐ রিক্সা চল। আমার চেহারায় কি চোর ভাব দেখা গেলকি না-পুলিশ আশে পাশের এতগুলো রিক্সা রেখে আমাকেই বলল দাড়ান। দাড়ান মানে? আমি তেজ দেখাই। দাড়ান মানে খারান। একটা পুলিশ বলল। কেন? এই আবার তক্ক হচ্ছে! দ্বিতীয় পুলিশ বলল আমি বললাম তক্ক কোথায়? পাশের যে পুলিশ ভ্যান ছিল খেয়াল করি নাই-সেখান থেকে বড় ভুড়ি নিয়ে বোধহয় বড় কর্তা নেমে এলো, বাজখায় গলায় হাক দিল, কিডা হইছে? ‘‘কিডা হইছে” শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই বাংলা শুনলে ড. শহিদুল্লাহ নির্গাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেত। আমি পড়লাম না কারণ আমি ভাষা ব্যাপারে মুর্খ। সামনে এসে বড় কর্তা বললেন, উঠাউ গাড়ীতে। আমার আক্কেল বেয়াক্কেল হয়ে গেল। মাথা পুরা আউলা। আমি বললাম, এসব কি বলছেন স্যার? স্যার বললেন নিচের দিকের পুলিশের খুশি হয়। তাই স্যারটা লাগালাম। মনে হয় কাজ হলো, বড় কর্তা বলল কি করেন? পিবিএক্স, ফ্যাক্স,ইন্টারকম ইঞ্জিনিয়ার। হার্ডওয়ার না সফটওয়ার? আমি তাজ্জব? পুলিশ বলছে-হার্ডায়ার না সফটওয়ার। এযে পুলিশ কুল শিরমনি। আমি উত্তরে বললাম হার্ডওয়ার। তবে সফটওয়ার ও জানি। শিরমনি বলল, গাড়ীতে উঠেন।
আমার চোখ ফেটে কান্না এলো! পুলিশের গাড়ীতে জীবনের প্রথম চড়লাম। অন্যরকম অনুভুতি। নাভির চার পাশ মুছরে ব্যাথা করছে। থানার কম্পউন্ডে যখন গাড়ী থামল তখন রাত সারে বারোটা পুলিশের গাড়ীতে চড়ার অভ্যাস নাই। হঠাৎ নামতে গিয়ে উপরের রডে কপাল বারিখেল। ‘‘সঙ্গে সঙ্গে ট্যাম হয়েগেল”। আমার মাথায় সর্টসার্কিট হয়েগেছে। মাথার বরোটা কোন কাজ করছে না। শিরমনি সাহেব হাত বাড়িয়ে দিলেন, আরে আসুন অসুবিধা কি। অসুবিধা নাই? আমি বললাম? আমি বললাম না। আসুন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। উইআর সো লাকি। আমি কানাওলা ধরা মানুষের মত শিরমনির পিছনে চললাম। বেশ বড় থানা পাশেই হাজত! ভিতরে দুইজন গাল তোবরানো মানুষ বসা। আমাকে দেখেই বলল, দ্যাখ আরএক শালা আইছে। আমাকে বোধহয় এখন শালার মতই দেখাচ্ছে। কেন জানি কিছু মনেও হলোনা। আগে বলেছি মাথার সর্টসাকির্ট হয়েগেছে সম্ভবত ও সিই হবেন। কিযেন একমনে লিখছেন। শিরমনি আমাকে নিয়ে ও সির সঙ্গে পরিচয় করে দিলেন, এই স্যার এনেছি, ও সি সাহেব লেখায় ব্যস্ত ছিলেন, বললেন ভিতরে ঢুকিয়ে দিন। স্যার এ ভিতরে ঢোকানোর মাল নয়। যাঃ এখন আবার মাল হয়েগেলাম।
মুহুর্তে মুহুর্তে রূপান্তর হচ্ছে, শালা থেকে মালে। ও সি মুখ তুলে তাকালেন শিরমনি বলল স্যার উনি পিবিএক্স ও ফ্যাক্স ইঞিনিয়ার আমাদের থানার ফ্যাক্স মেশিন ও ইন্টারকমের কয়েকটা লাইন খারাপ। স্যার উনি, র্যাব ও পুলিশ হেড কোয়াটারে টেলিফেনের কাজ করেন। তাই এবার ও সি সাহেব হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেফের জন্য, ওয়েলকাম। এতখুনে আমার পায়ের তলায় মাটিরমত মনে হলো। বললাম বাসায় একটা ফোন করা দরকার মোবাইলে বাসায় ফোন করে বললাম থানায় আছি। বৗে এর হাউ-মাউ কান্না শোনলাম। টেনশনে রাখার জন্য থানার নাম বললাম না। শুধু বললাম, চিন্তা করিওনা জরুরী কাজ। আমার জন্য বিরানী এলো, সেভেন আপ এলো একেবারে রাজারহাল। খেয়েদেয়ে থানার ফ্যাক্স ও ইন্টারকমের কাজে হাত দিলাম। যখন কাজ শেষ হলো তখন রাত আড়াইটা। আমাকে থানার ডিউটি গাড়ী দিয়ে ও সি সাহেব নিজের বাসায় পৌছে দিয়েগেলেন। কারণ উনার বাসাও আমার বাসার দিকে। দুর থেকে দেখলাম ঘরে লাইট জলছে। যাং সামনে গিয়ে দেখি আশে-পাশের লোকজনে ঘর ভর্তি। আমাকে দেখেই সবাই গুন গুন করে উঠল, থানায় কেন ধরে নিয়েগেছে? কি কেলংকারী? অফিসিয়াল কিছু নাকি অন্য রকম লটর বটর? নাকি আলুর দোষ? বেশতো পিটেয়েছে। কপালের ট্যাম যাচ্ছে ইত্যাদি। আমি চুপ করে থাকি। কেউ কি বিশ্বাস করবে থানায় নিয়ে আমাকে জামাই আদর করেছে? স্বয়ং ও সি পৌছে দিয়েগেছেন? এক সময় ভীড়টা ফাকা হযেগেল। এবার আসল ফাইট। বৌ বলল? সত্যি করে বলল থানায় কেন গেছিলে না ধরে নিয়ে গেছে? তারপর রুটিন মাফিক এক ঘন্টা ঝগড়া করে ক্লান্ত হয়ে ঘুম-------------------
No comments:
Post a Comment