আজ Shajib Kumer Dey দা'র পোস্টে কোরবান ভাই এর ছবি দেখে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা হল কিন্তু লিখতে পারলাম না তাই ২০১৪ এর বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ের একটি লেখা দিয়ে দিলাম। লেখাটিতে অল্প হলেও কোরবান ভাই এর প্রসঙ্গ আছে।
-----------------------------------------------------------------
চারদিকে ফুটবলের ঝড় শুরু হয়ে গেছে। পতাকাওয়ালার কাঁধে, বাড়ির ছাদে, গাড়ির বনেটে এরই মধ্যে পতাকা লেগে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে আগামী কিছুদিন ক্রিকেট নির্বাসিত হবে। অথচ মনে পড়ে আমার ছোটবেলায় ফুটবলই ছিল খেলার রাজা। সেকি উন্মাদনা ছিল ফুটবল নিয়ে। তখন স্পেনিশ লীগ, ইতালিয়ান লীগ নিয়ে খোঁজ নেয়ার উপায় ছিলনা। মানুষ দেশের প্রিমিয়ার লীগের আবাহনী মোহামেডানের খেলা দেখেই মহাখুশি। আসলাম কতদূর থেকে হেড দিয়ে গোল করেছে এটা নিয়ে আলোচনার অন্ত ছিলনা ছেলে বুড়োর। আবাহনী মোহামেডানের খেলাতে মারামারি ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
-----------------------------------------------------------------
চারদিকে ফুটবলের ঝড় শুরু হয়ে গেছে। পতাকাওয়ালার কাঁধে, বাড়ির ছাদে, গাড়ির বনেটে এরই মধ্যে পতাকা লেগে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে আগামী কিছুদিন ক্রিকেট নির্বাসিত হবে। অথচ মনে পড়ে আমার ছোটবেলায় ফুটবলই ছিল খেলার রাজা। সেকি উন্মাদনা ছিল ফুটবল নিয়ে। তখন স্পেনিশ লীগ, ইতালিয়ান লীগ নিয়ে খোঁজ নেয়ার উপায় ছিলনা। মানুষ দেশের প্রিমিয়ার লীগের আবাহনী মোহামেডানের খেলা দেখেই মহাখুশি। আসলাম কতদূর থেকে হেড দিয়ে গোল করেছে এটা নিয়ে আলোচনার অন্ত ছিলনা ছেলে বুড়োর। আবাহনী মোহামেডানের খেলাতে মারামারি ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
প্রিয় দলের হেরে যাওয়ার দুঃখে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে দুই একটা মৃত্যুর ঘটনা পরদিনের পেপারে পাওয়া যেত। আমাদের বাসায় ফালতু খরচের অযুহাতে পেপার রাখা হতনা কিন্তু ফাইনালের পরদিন অবশ্যই ২/৩ টা পেপার কেনা হত। আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফাইনালের খবর পড়তাম। বাংলার বানী ছিল আবাহনীর পক্ষের পেপার আর ইনকিলাব ছিল মোহামেডানের পক্ষের। আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হলে ইনকিলাব চুপসে যেত আর বিপরীত ক্ষেত্রে বাংলার বানীর স্পোর্টস রিপোর্টারের কর্মক্ষমতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগত। আমি ছিলাম মোহামেডানের সমর্থক আর ভাইয়া আবাহনীর। ভাইয়ারা আবাহনীর বিশাল ফ্লাগ উড়াত। আমি আম্মার কাছ থেকে পুরান সাদা কাপড় নিয়ে কাল রঙ মেখে মোহামেডানের পতাকা বানাতাম। তৃতীয় একটা দল ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। এই দলের কোন সমর্থক ছিলনা। সারা জীবন রানার্স আপ বা তৃতীয় হওয়া এই দলের ব্যাপারে আমার আর ভাইয়ার কিঞ্চিত দুর্বলতা ছিল। এই দলে আমাদের মামা খেলত। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা এই মামা পরে আবাহনীতে যোগ দিয়েছিল, আমি বড় দুঃখ পেয়েছিলাম মামার সিদ্ধান্তে।
কলোনিতে ফাইনাল পরবর্তী মিছিলের চল ছিল। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হলে আমি অবশ্যই মিছিলে শামিল হতাম। মোহামেডানের মিছিলের নেতৃত্ব দিত কলোনির কুরবান ভাই। মাথার বিচিত্র আকৃতির কারনে কুরবান ভাইয়ের কিছু উপনাম ছিল যেমনঃ তিন মাথা, মাত্তুল(হাতুড়ি)। কুরবান ভাইয়ের বাবাও ছিল আরেক অদ্ভুত আদম। জনশ্রুতি আছে উনার সুদের কারবার ছিল তাই নাম ছিল সুদি কাশেম। বিশাল শরীরের সাথে একদমই বেমানান ছোট একটা সাইকেল নিয়ে চলাফেরা করতেন উনি। যাই হোক, কুরবান ভাই ছিল মোহামেডান অন্তপ্রান। কলোনির ছেলে ছোকরাদের নিয়ে তিনি মিছিল করে কলোনি চক্কর দিতেন। মিছিল শেষে সবার জন্য একটা করে পঁচিশ পয়সা দামের কোকোনাট চকলেট। চড়া গলায় স্লোগান দিতে পারলে একটার বদলে দুটা চকলেট মিলত। আমি কখনো দুটা চকলেট পাইনি।
বিশ্বকাপেও কলোনিতে পতাকা উঠত। ভাইয়া আর্জেন্টিনা সমর্থক, আমি ব্রাজিল। কলোনির পানির ট্যাংকের মাথায় পতাকা উঠানো ছিল ব্যাপক সম্মান আর বীরত্বের ব্যাপার। ভাইয়া পানির ট্যাংকের উপর আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়েছিল। আবার সেই গল্প আমাকে বিরস মুখে শুনতেও হয়েছে।
আবার আবাহনী মোহামেডানেই ফিরি। আবাহনীর ছিল আসলাম। মোহামেডানের কায়সার হামিদ। আবাহনীর মুন্না। মোহামেডানের সাব্বির। আবাহনীর গোলকিপার মহসিন। মোহামেডানের গোল সামলাচ্ছে কানন। একদম সমানে সমান। এর মধ্যে আবাহনীতে কোত্থেকে আলমগির চলে এলো একজন। লম্বা থ্রো করে। হাত দিয়ে ছুঁড়ে বল ফেলে দেয় মোহামেডানের ডি-বক্সের ভিতর। ফটাফট গোল হয়ে যায়। এই আলমগিরকে পরে একদিন দেখেছিলাম মামার বাসায়। দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করা গেলে সেদিন আলমগির আমার দৃষ্টির সামনে পড়ে ভস্ম হয়ে উড়ে যেত নির্ঘাত। ওই ব্যবস্থা যেহেতু নেই তাই এর পরেও কিছুদিন মোহামেডানের আতঙ্ক হয়ে থেকে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল লম্বা থ্রো এর আলমগির।
কলোনির ভিতর টুর্নামেন্ট করে ফুটবল খেলা হত। কলোনির দুটি দল ছিল "মুনস্টার" আর "ম্যানিস্টার"। মুনস্টারে খেলত হানিফ ভাই আর ম্যানিস্টারে বেঁটেখাটো মাহবুব ভাই। মাহবুব ভাইকে ম্যারাডোনা ডাকা হত। মুনস্টার আর ম্যানিস্টার এর ম্যাচে গণ্ডগোল হয়নি এমন কোন দিন খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমনি ফুটবল পাগল ছিল তখন মানুষ।
তখন ষ্টীলমিলের নিজেদের একটা ফুটবল দল ছিল। নাম ছিল ইস্পাত একাদশ (এখন কোয়ালিটি স্পোর্টিং নামে চট্টগ্রাম লীগে খেলছে)। চট্টগ্রাম লীগে বেশ ভাল নাম ছিল দলটার। ঢাকা লীগের নামকরা ফুটবলারদের ভাড়া করে আনা হত খেলার জন্য। ফুটবলারদের থাকার ব্যবস্থা ছিল BH-1 বিল্ডিঙের একতলায়। আমরা ভিড় করে দেখতে যেতাম। মনে আছে সাব্বির আর রেহানের অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম আমি। একদিন বিকেলে সাব্বির BH-1 এর মাঠে আমাদের সাথে খেলতে নেমেছিল। আমার উরুতে সাব্বিরের বুটের বাড়ি খেয়েও প্রাণপণে তার পা থেকে বল কেড়ে নেয়ার আমার নিস্ফল চেষ্টার কথা মনে পড়ছে আজকে খুব।
ফুটবলের সেই জৌলুশ আর নেই। ক্রিকেটের দাপটে ফুটবলের এখন সতীনের ঘরের সন্তানের মত অবস্থা। তবু চার বছর পর পর আমার ছেলেবেলার রুপ নিয়ে ফেরে ফুটবল। এখনো নিশ্চয় বাংলাদেশের কোন প্রান্তে দুই ভাই পাল্লা দিয়ে দুটি দলের পতাকা উড়াচ্ছে। ছোট ভাই বিরস মুখে শুনছে বড়র বীরত্তের কথা। আজও কোন এক নিরীহ কুরবান আলি চকলেটের লোভ দেখিয়ে ছেলেছোকরা নিয়ে মিছিল করছে। জয় হোক এসব ক্রীড়ামোদী কুরবান আলি আর ছোট বড় ভাই গুলোর।
No comments:
Post a Comment