আমি আমার কয়েকটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম গ্রান্ড আড্ডা আমার কাছে ঈদ উৎসবের মত। আড্ডার দিন যতই ঘনিয়ে আসতে লাগলো আর এই উৎসবের টেনশন পারদ আমার মধ্যে আরো উপরে উঠতে লাগলো। আর এ উছিলায় বৌ এর শপিং চলতে লাগলো ধুমায়ে, যেটা দরকার সেটাতো কিনছেই আর যেটা দরকার নেই সেটাও কিনছে এমনকি রওয়ানা দেয়ার আগের দিন পর্য্যন্ত কেনাকাটা চলছেই। আর আমিও আম্পায়ার আলিমদারের মত সবকিছু মেনে নিচ্ছিলাম, গ্রান্ড আড্ডার আগে গৃহ শান্তি জরুরী বলে কথা। আব্বা আম্মা আড্ডার ১৫ দিন আগেই চট্টগ্রাম চলে গিয়েছে আড্ডার পাশাপাশি একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়ার জন্য, ছোট বোন তার জামাই বাচ্চা সহ দুদিন আগে চলে যায়।
অবশেষে আমার যাওয়ার পালা ২৮ জানুয়ারী খুব সকালে অফিসে এসে কাজ শেষ করে দুপুরেই বাসায় চলে যাই। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফ্লাইট, বিকাল পাঁচটার মধ্যে এয়ারপোর্টে। সংগে বউ পোলা আর ছোট ভাই জাভেদ, একটু পর পীর সাহেব রেজা ভাই হাজির। সমানে সেল্ফি তুলছি, হঠাৎ পলাশ ভাই ও ভাবীর সাথে দেখা, তাঁরাও একই ফ্লাইটে চিটাগাং যাচ্ছেন আবারও সবাই মিলে এক দফা সেল্ফি। প্লেনে উঠার আগ মূহুর্তে এক মেয়ে আমার সামনে এসে বলল “ আপনি আতিক ভাই না” , আমি বউয়ের সামনে এবার বিব্রত, কোন মতে ঢোক গিলে বললাম “হ্যা িআমিই আতিক” মেয়েটি নিজের পরিচয় দিলো , দেখলাম কলোনীর ছোট বোন নাম লাকী।ফেসবুকে আমার ছবি দেখে সে আমাকে চিনতে পেরেছে, যাক নিজেকে ফেসবুক সেলিব্রেটি মনে হলো। সেও আড্ডায় অংশ নিতে চিটাগাং যাচ্ছে। রানওয়েতে আরেক দফা সেল্ফি চলল লাকী সহ।চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট নেমে আবারো সেল্ফি। আধা ঘন্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসলাম. আর পতেংগা থেকে আগ্রাবাদে হোটেল সেন্টমার্টিন যেতে পাক আড়াই ঘন্টা।
সুজনকে ধন্যবাদ সে আগে থেকেই রুম বুক করে রেখেছিলো। রাত দশ টায় হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে পুরা টায়ার্ড, আর রাত বাজে প্রায় সাড়ে এগারোটা, এতো রাতে আর ভেন্যু তে যাওয়ার এনার্জি নেই, একটা লম্বা ঘুম দিয়ে সকালে হোটেল রুমে পানি সংক্রান্ত জটিলতায় ভেন্যুতে একটু দেরীতেই পৌছালাম, সেই পুরোনো অতি চেনা মুখগুলো, আর যাদের চিনতে পারিনি তারা কলোনীতে খুব ছোট ছিলো। আস্তে আস্তে সবার সাথে আলাপ পরিচয়। আর ম্যারাথন কোলাকুলিতো ছিলোই। আরওদিকে ষ্টেজে বুবু জানের মাষ্টারি থুক্কু উপস্থাপনা চলছে। এক ফাঁকে বুবুর আমন্ত্রনে আমিও ষ্টেজে গিয়ে একটু লেকচার দিয়ে আসলাম, আর ফটোশেসনের জন্য কয়েক দফা ষ্টেজেতো উঠলামই। আমার পোলা খুব বিরক্ত করছিলো, বুবুর ছোট কন্যা নুজাইমা আমার পোলারে কেমনে জানি ম্যানেজ কইরা আমারে রিলিফ দিলো।
এর মধ্যে আমার বউ নিজের চিবানো চুইংগামে নিজের শাড়িতে লাগিয়ে েএকেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। অগত্যা দুপুরের মেজবানী ফেলে বউরে নিয়া আবার হোটেলে এসে চেন্জ করে বিকাল চারটার দিকে ভেন্যুতে ব্যাক করলাম। এবার একটু অন্যরকম ফিলিংস,একটু নষ্টালজিক, একটু বুকে দ্রিমদ্রিম, মনে হলো যেনো কুড়ি বছর আগে ফিরে এসেছি। সেই অতি চেনা মুখ। নিজের অজান্তে একটু ইমোশোনাল, ভাগ্য ভালো ড্রেন একটু দূরে ছিলো আর নারিকেল গাছ কাছাকাছি ছিলোনা, মাইকে বুবুর আতিক আতিক চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পেলাম , আবারো ষ্টেজে ডাক পড়লো, এবার আমার জন্য সারপ্রাইজ, সিএসএম পেজে লিথা আমার ১০০ টি অনুছড়া নিজের হাতে নোট বুকে লিখে আমাকে দিলো বুবুর বড় কণ্যা উমামা। আমার অনেক টা “আবেগে কাইন্দালচি” অবস্থা। থ্যাংকস উমাম। এর পর তো হইচই, ছবি তোলা, আর মিঠু ভাইয়ের কাছ থেকে কোক বুঝে নেওয়া। তারপর তো সেই উদ্দাম নৃত্য, সংগে আমার বেটাও ছিলো।
এবার একটু ব্যাক্তিগত সমস্যা, খবর আসলো আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে মামার বাসায়, কারো কাছ থেকে বিদায় নিতে পারিনি দৌড়ে সবাই চলে গেলাম আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনীতে, যেখানে আব্বা আম্মা উঠেছিলেন। রাত ১২ টার দিকে মোটামুটি সুস্থ হওয়াতে আবার হোটেলে ফিরে গেলাম। তবে নাচের রেশ বোধ হয় আমার ছেলে আর ভাগনের মধ্যে রয়ে গিয়েছিলো, রাত ১ টার সময়ও হোটেল লবিতে তারা নাচতে লাগলো।
এভাবে হাসি আনন্দে ,আবেগে আর নষ্টালজিয়ায় মাতোয়ারা ছিলাম আমাদের প্রাণের গ্রান্ড আড্ডায়। নিজের ছোট্ট ব্যাক্তিগত সমস্যা টুকু বাদ দিলে এমন উৎসব আমার জীবনে এটাই প্রথম। সত্যি আমি অভিভূত।
No comments:
Post a Comment