Wednesday, June 1, 2016

৯০-৯২তে জন্ম নেয়া ছেলেমেয়েগুলো হয়তো আমার মতো একটা দোটানায় ভোগে


"৯০-৯২তে জন্ম নেয়া ছেলেমেয়েগুলো হয়তো আমার মতো একটা দোটানায় ভোগে।আমরা খুব সুন্দর একটা ছেলেবেলা পার করে যখন জীবনের মধ্যভাগে ঠিক তখনি আমাদের চারপাশটা এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে যারা এর সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছে তারা আজ "কুল ডুড" আর যারা ছিটকে পড়েছে তাদের সোজা বাংলায় "ক্ষ্যাত" ।

আমাদের টাইম পাসের জন্য ফেইসবুক ছিলো না। আমরা সারা দিন স্কুলে বাদরামি করে বিকেলে খেলেতে যেতাম।

মাঝে মাঝে এলাকার আপুরা যখন মাঠ ক্রস করতো,বড় ভাইয়ারা এসে ব্যাট নিয়ে বিশাল বিশাল ছক্কা মেরে বল হারিয়ে ফেলতো।কষ্ট করে স্কুলে হেঁটে গিয়ে টাকা জমিয়ে কেনা বল হারানোর দুঃখ যে কি মারাত্মক তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। বাসায় টিভি দেখতে দিতো না।প্রতি শুক্রবার দুপুরে বাংলা ছবি চলতো।এই ছবি দেখার জন্য হয়তো নিজের জীবনও দিতে পারতাম। কোন এক ফাকে টিভি ছেড়ে দেখে নিতাম নায়ক নায়িকা কে। যদি রিয়াজ,সালমান শাহ,বাপ্পা রাজ,শাবনূর,পূর্নিমা হতো তবে বুঝতাম ছবিটা অসম্ভব ভালো হবে।ওই দিন বিকেলে আর খেলতে যেতাম না। তবে অন্য নায়ক নায়িকার ছবি হলে ওতো পাত্তা দিতাম না। সন্ধ্যা ৭.৩০ এর অপেক্ষায় থাকা। অপেক্ষার প্রহর শুরু হতো ঠিক মাগরিবের পর থেকেই। মাগরিবের পর মানেই লক্ষী ছেলের মত পড়ার টেবিলে বসে যাওয়া। বসতাম ঠিকই কিন্তু মাথায় ঘুরতো আলিফ লায়লার সেই শুরুর গানটা। "দেখ সব নতুন কাহিনী,
মন ভরে যায় তার বাণী.........
আলিলললললফ
লায়লালালালালা............"

বাসার টিভি অন করা তখন ছিলো মহাপাপের শামিল। অবশেষে কাংক্ষিত সময়ে কানে ভেসে আসতো সেই আলিফ লায়লা গান। মন তখন আনচান। পাশের বাসার জ্বানালা থেকে টেলিভিশনের যতটুকু দেখা যেত তাতেই দেখার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। একসময় আম্মা এসে এই অবস্থা দেখে টিভি অন করে দিতেন। পরিবারের সবাই মিলে সেই শারারা গুল সোফান ইজবার ভৌতিক পর্বগুলো দেখতাম। এরকম অনুভূতি ছিলো থিফ অফ বাগদাদ, হারকিউলিস, এক্স ফাইলস, মিনাকার্টুন সহ সবগুলো অনুষ্ঠানের প্রতিই। এছাড়া ও দুপুরবেলা গডজিলা, সামুরাই এক্স, ক্যাপ্টেন প্লানেটসহ অন্যান্য
কার্টুন গুলোতো ছিলই। আমাদের বাসায় ডিশ ছিলো না। কিন্তু প্রতি রাতে চ্যানেল ঘুড়ালে এক দুইটা চ্যানেল ধরতো।তবে তা ছিল ঝির ঝির।এক অভিনব ব্যবস্থা চালু করা হলো।কালো সানগ্লাস পড়ে,লাইট অফ করে ঝির ঝির করা টিভি ক্লিয়ার দেখা যায়। তাছাড়াও পাশের বাসার ডিস লাইন থেকে চুরি করে লাইন নেয়াতো ছিলই। হিন্দি বুঝতাম না। নিজের মনের মত অর্থ বানাই দিতাম। আগে টিফিনের টাকা বাচিয়ে ৫টাকার চটপটি খেতে দলবেঁধে ছুটে যেতাম। আর আজ দামী রেস্টুরেন্টে একাকী গিয়ে ইন্সটাগ্রামের কিছু ছবির খোরাক মেটাতে ৫০০ টাকার খাবার খেয়েও সেই পরিতৃপ্তি পাই না। আজ সব আছে কিন্তু সেই যুগটা আর নেই। আজ বড় ভাইয়ারা ফেইসবুকেই বড় আপুদের দেখে নেয়। কষ্ট করে মাঠে দাঁড়ায় না।আজ পকেটে বল কেনার টাকা আছে কিন্তু খেলার মানুষগুলো হারিয়ে গেছে।আজ বাসার টিভিতে ধুলো জমে আছে,৮৭ টা চ্যানেল আছে কিন্তু দেখা হয় না।একটা সময় সবাই মিলে প্ল্যান করতাম কোথাও যাওয়ার জন্য আর এখন প্ল্যান করি এক সাথে হওয়ার জন্য। চারপাশটা একটু ফিরে তাকালে দেখি নিজের ছায়া।

এছাড়া কোথাও কেউ নেই।সত্যি কেউ নেই।"

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss