৯৪ সালের এক রোজার সময়ের কথা, প্রতিদিনের মত সে দিনও আমি ইফতার শেষ করে কলোনির পুরাতন মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়েছি,নামাজ শেষ করার পর সাধারণত বন্ধুরা মিলে আমরা জেক্সে আড্ডা দিতাম আর চা সিগারেট চলত। তো সেদিন নামাজ পড়ে বের হতে গিয়ে দেখি মসজিদের গেটে এক পংগু লোক, যার দুটি পা" ই নেই, সে বসে সাহায্য চাচ্ছে, যেন তাকে তার বাড়ি লক্ষিপুর পৌছানোর ব্যবস্থা করি। দেখলাম কেউ তেমন কোন সহযোগিতা করছেনা, আমার কাছে ব্যাপার টি খারাপ লাগলো, আমার সাথে নামাজে সেদিন মরা বা পলাইয়া রাশেদও ছিল,দুজনে ওই লোক টিকে এক ঘণ্টা মসজিদের সামনে অপেক্ষা করতে বললাম, আরো বলেছি আমরা আপনার বাড়ি যাওয়া ব্যবস্থা করব। তারপর আমি আর রাশেদ জেক্সে গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটি বললাম, এবং সেখানে উপস্থিত সবাই যে যার মত টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করল, এরপর আমরা আমাদের বন্ধুদের বাসা থেকেও টাকা কালেকশন করলাম, প্রায় ৪৫০ টাকার মত উঠেছিল। এরপর ওই লোকটিকে নিয়ে আমি, Badrul Hasan, আর পলাইয়া Mamunur Rashid Rashed এই তিনজনে মিলে বেবি টেক্সি করে কদমতলি বাস স্ট্যন্ডে নিয়ে একেবারে বাসের টিকেট করে দিলাম, এবং যেহেতু লোক টির দুটি পা"ই নেই তাই বাসের সুপারভাইজার আর পাশের সহযাত্রী কে বলে আসি লোক টিকে খেয়াল রাখার জন্য, যাতে তার কোন সমস্যা না হয়। লোক টির যাতায়াত খরচ বাবদ প্রায় ১৫০ টাকার মত লেগেছিল আর অবশিষ্ট প্রায় ৩০০ টাকা লোক টির হাতে দিয়ে দেই। লোক টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় লোক টি আমাদের হাত ধরে নীরবে চোখের পানি ফেলল, কৃতজ্ঞতায় তার মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিলনা আর অস্ফুট স্বরে আমাদের জন্য দোয়া করল। আমরা তিনজন ফিরার সময় বাসে করে ফিরছিলাম, কলোনি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ১১ টা বেজেছিল। এতটুকু সময় পর্য্যন্ত আমরা তিন জন কেউ কারো সাথে কোন কথাই বলিনি, লোক টির নীরব কান্নার আবেগ আমাদেরও ছুঁয়ে গিয়েছিল। তবে মনের মাঝে কিসের যেন এক বিশাল তৃপ্তি কাজ করছিল সেদিন।
আসলে সহমর্মিতা আর মানবিকতার গুন হচ্ছে সিএসএম" এর সবারই সহজাত প্রবৃত্তি।।
No comments:
Post a Comment