Thursday, July 21, 2016

কয়েক দিন আগে-বড় বড় তিনটা ফোড়া উঠিল দুইটি পিছনের দুই রানের শুরুর অংশে


কয়েক দিন আগে-বড় বড় তিনটা ফোড়া উঠিল দুইটি পিছনের দুই রানের শুরুর অংশে এবং বাকিটা পেটের নাভির একটু উপরে-অনেকটা আগের বঙ্গভূমির মানচিত্র-‘‘ব” দ্বীপের মত। অনেকে বলে বাগ্মীফোড়া, অনেকে বলে-বিষ ফোড়া। ফোড়ার এরূপ নামের রহস্য উৎঘাটন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন করিলাম-কেহ বলিল-এইরূপ ফোড়া উঠিলে টাকা পাওয়ার সম্ভবনা, কেউ বলিল-শরীরের সমস্ত দুর্ষিত বিষ ফোড়াকারে শরীর হইতে বাহির হয়, কেহ বলিল-ফোড়া উঠায় অনেক ব্যাথা ও কষ্ট সহ্য করতে হয়-তাই এর নাম বিষ ফোড়া। বন্ধু রেজা বলিল-দোস্ত এগুলো ডায়বেটিক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষন। তারাতারি চিনি রোগ পরীক্ষা কর। মাথায় যেন বাজ পড়িল। অফিসের নিচে এক ফার্মিসিতে গিয়া পরীক্ষা করিলাম-রিডিং আসিল 11.3 মানে পুরা চিনি রোগ। মনকে সান্তনা দিলাম-বাবার আছে, মার ছিল, প্রকৃতি হয়ত সেই সুবাদে-উহা আমাকে দান করিয়াছে। রক্তে চিনির পরিমান-11.3 শুনিয়া আমার মিষ্টি চেহারাটা করলার তেতোরমত হইয়া গেল। বন্ধু নাজমুল কে ফোন করিয়া বিষয়টি অবহিত করিলাম। শুনিয়া নাজমুল-কাদো কাদো কণ্ঠে বলিল, দোস্ত তুই যে হাটোছ-তাতে তোর চিনি রোগ হাওয়ার কথা না। অনন্ত জলিলেরমত বলিল-দোস্ত চিন্তা করিছ না তোর চিনি রোগ হয় নাই। সব ঠিক হইয়া যাইবে-আমি তো অনেক আগের থেকে সাবধান হইয়া গিয়াছি। বন্ধু রেজা সবসময় পকেটে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের মত পকেটে চকলেট নিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। 

জিজ্ঞাসা করিলে বলে-চিনির বিষয়গুলো বরাবরই একটু ঘোরালো। রক্তে চিনি বেশি হইলে বিপদ-‘‘কিডনি ড্যামেজ” থেকে শুরু করে আরও কত কি। আবার চিনি কম হলেও বিপদ। এক চামুচ চিনির ঘাটতিতে অনেকে পটল তুলে। ডায়বেটিস হলে মানুষকে এভাবে জ্বালায়। তাই রেজার এই অভিনব ব্যবস্থা। নিজের অবুঝ মনকে চিনি থেকে দুরে থাকার জন্য শান্তনা দিলাম-চিনি নাকি শরীরের জন্য ‘‘হোয়াইট পয়জন”। যেন তেন রকমের না, একেবারে সিগেরেট বা মদের সাথে তুলানা করা যায়। আহা রে নিরীহ চিনির একে অবস্থা! আমি-চিনি হইতে কিভাবে দুরে থাকিব কারণ সুখবর মানেই তো মিষ্টমুখ। সুধু তাই নয় ‍দুঃখের খবরেও তো মিষ্টিমুখ করতে হয়। বোঝা গেলে না বোধহয়। একটু খুলে বলেলই -বুঝা যাবে।মানুষ মারা যাওয়ার তিন/চার দিনে মাথায় বাড়ীতে মিলাদ দেওয়া হয়। আর মিলাদ মানে মিষ্টি। দুঃখে স্বরণে কেন মিষ্টি দেওয়া হয়, তার হয়তো ব্যাখ্যা আছে কিন্ত আমার জানা নেই। কারও জানা থাকলে জানাবেন। আতিকের কাক্কুর সরকারের আমলে চিনি নিয়ে এক মন্ত্রী এমন কেলংকারী করেছিলেন যে মানুষ চিনিকে গাল হিসেবে ব্যবহার করতো। পরে শুনেছিলাম ঐ মন্ত্রীকে চিনি রোগে ছাড়ে নাই। ওটাই উনার কাল হয়েছিল। চিনি যদি বিষ হয় তাহলে মৌমাছির কি অবস্থা হবে-ঘটনাটি একটু খোলসা করে বলি। 


একদল মানুষ আছে যাদের জীবিকা মৌমাছি পালন। সব কিছু পালনেই একটা কিছু আদায়ের চেষ্টা থাকে। যেমন মুরগী পাললে ডিম আদায়, গরু পাললে দুধ আদায়। তেমনি মৌমাছি মানেই তার কাছ থেকে কড়ায় গন্ডায় মধু আদায় করে নেয় চাষিরা। শীত বসন্ত মিলয়ে নানা রকমের ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছি। সে মধু তারা খায় আর মালিকের পকেট ভরায়। আর বাকি ছয় মাস তাদেরকে চাষীরা স্রেফ চিনি খাইয়ে রাখে। আগে যা হওয়ার হয়েছে, কিন্ত এখন! চিনি যদি বিষ হয় তাহলে বেচারা মৌমাছিরা যায় কোথায়! শুনেছি আমি ভুমিষ্ট হওয়ার পর নাকি আমার নানী আমার মুখে মধু দিয়েছিলেন-‘‘মধুরমত বোল-চাল হওয়ার জন্যই নাকি” যাহউক যারা সেই মধু সংগ্রহ করতেছে-আমরা কিনা তাদের মুখে বিষ তুলে দিব। লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে- তাই গতকাল রেজার কণ্যা দেখার মত একটা কাহিনী দিয়ে লেখাটা শেষ করলাম-ঢাকায় আসার পর প্রথমে যেখানে চাকুরী নিলাম-মালিকের ছোট ভাই অর্থাৎ আমাদের সেকেন্ড বস কাম সিগেরেট খাওয়া বন্ধুর জন্য কন্যা দেখতে যাবে। মালিক একেবারেই সিগেরেট খাওয়া পছন্দ করত না-অফিসে ঘোষনা হল-সিগেরেট টানা অবস্থায় দেখলেই চাকুরী নট। 

একদিন হরতালের সময় আমরা কয়েকজন কলিক এবং সেকেন্ড বসসহ অফিসের গেটের সামনে সিগেরট টানছি কারণ হরতালে মালিক আসার কোন সম্ভবনাই নাই। হায় কপাল! ‘‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাইত হয়”। হঠাৎ দেখি মালিক আসিয়া পড়িয়াছে-হাতে নাতে সবাই ধরা। ভয়ে আমাদের রক্ত টিক টিকির রক্তের মত ঠান্ডা হইয়াগেল। ষ্ট্যানবাই একজনের চাকুরী নট। আমার চাকুরী গেলেনা কিন্ত আমাকে মালিক শেষ সর্তকী করনের উপর রাখিলেন। সেকেন্ড বস একটু ফ্যাটি (মোটা) ছিল। মেয়ের বাড়িতেই কথা-বার্তা হবে। একটু আধুনিক ব্যবস্থা। আগে বন্ধুর বাবা মা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখে শুনে, কথা-বার্তা বলে এসেছে। পাল্টা ভিজিটও হযেগেছে। এবারে বন্ধু যাবে মেয়ের সাথে কথা বলতে। যাওয়ার সময় আমাকে আর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়েগেছে। প্রথমে কথাবার্তা চলল কিভাবে যেন আলাপ চলেগেল স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। বিকেলে নাস্তা খাওয়া উচিত কি না বা চা খেলেও লিগার না দুধ চা, এই সবও এসেগেল। বন্ধুটা একটু মোটা হওয়ায় মেয়ের মন রাখতে বন্ধু সমানে চালিয়েগেল বিকালে সুধু চা খাওয়া তার অভ্যাস, সাথে নো ‘‘টা”। একটু পরে সুধু চা এলো কাজের লোকের হাতে। মেয়ে আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করে, ‘‘কফি নিন?”

আমরা নড়ে চড়ে বসতেই আবার জিজ্ঞাস করে, ‘‘র নাকি মিল্ক?”
আমরা কিছু বলা্র আগেই বন্ধু বলে উঠে, ‘‘নো মিল্ক, নো সুগার”।

ট্রে নামিয়ে রেখে কাজের লোক চিনি আর দুধের পট নিয়ে চলে গেলো। টি পট থেকে ঢালা হলো লিকার। রং দেখেই আমাদের হয়ে গেছে।! সেই কলো কফি দুধ এবং চিনি ছাড়া মনে হলে ব্রক্ষ্মতালু জলে যাচ্ছে। আমাদের বন্ধু মহাসয়তো ভাবী বধুর সাথে আলাপ করতে করতে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। এখন ওকে অবশ্য বিষ দিলেও কিছু হবে না! মনে হয় রাসপুটনেও ফেল মেরে যাবে। কিন্ত আমরা ! বিরস বধনে মুখটিকে হাসি হাসি করে চিনি ছাড়া সেই সেমি বিষ পান করে গেলাম----------।

শেষে একটা খুশির খবর দিয়ে বিদেয় হই-আরও কয়েক জায়গায় মাপার পর আমার চিনি রোগ ধরা পরে নাই। বর্তমানে চিনির পরিমান 5.3 মানুষের দোয়া পৃথিবীতে অনেক বড় জিনিস। হয়তো দোয়ার বরকতেই আমার এই মিরাক্কেল, খুসিতে এমরান ভাইয়ের সেই হাসি হাসতে ইচ্ছে করতেছে---------- হেঃ------হেঃ------হেঃ-----

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss