গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে ধানমন্ডির ল্যাবএইডে গেলাম এক রোগীর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে। ল্যাবএইড থেকে বের হয়ে আসার সময় বন্যা আপার সাথে দেখা। উনি এসেছেন বাবাকে নিয়ে চেকআপ করাতে, সাথে বন্যা আপার এক কাজিনও আছে। বহুবছর পর চাচাকে দেখলাম। কলোনিতে আজিজুল হক চাচাকে দেখেছিলাম সিংহদেহী সুপুরুষ। C-8 এর সামনের ছোট জায়গাটাতে আমি, আশিক, সবুজ, সামি, বাপেন আরো কে কে যেন ক্রিকেট খেলতাম। মাঝে মাঝে চাচা বিকেলে একটা টুল নিয়ে মাঠের ঠিক মাঝখানে বসে পেপার পড়া শুরু করতেন। আমরা ব্যাট-বল নিয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে বিরক্ত হয়ে মুখ ভেংচে চলে আসতাম। বন্যা আপাকে তখন আমি চিনতাম না। শুধু জানতাম এই চাচার এক মেয়ে আছে নাম চাঁদ সুলতানা। আমরা নিজেরা নিজেরা কথা বলার সময় চাচার প্রসঙ্গ এলে উনাকে "চান্দুর বাপ" বলে সম্বোধন করতাম। ল্যাবএইডে কলোনির সেই চাচার ভগ্নাংশও খুঁজে পেলাম না। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে, কিছুদিন আগে পায়ে আঘাত পাবার দরুন লাঠি হাতে হাঁটছেন। বন্যা আপা আমাকে চাচার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। স্টিলমিলের ছেলে শুনে তিনি আমার ডান গালে আদর করে চড় দিয়ে বললেন "কেমন আছস রে বাবা?"। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য চাচার রক্ত নেয়া হলো, একটা এক্স-রে করানো হলো। এসময় আমি সাথেই ছিলাম। বিদায় নিয়ে আসার সময় তিনি দোয়া চাইলেন, আমিও আমার জন্য উনার কাছে দোয়া চাইলাম।
কাল বন্যা আপা ফোন করে উনার বাসায় যেতে বললেন। জানালেন রেজা ভাই আর রিপন ভাইও আসবে। সন্ধ্যার পর গেলাম বন্যা আপার বেইলী রোডের বাসায়। গিয়ে দেখি রেজা ভাই, রিপন ভাই ডাইনিং এ বসে মুড়ি মাখা খাচ্ছে। রেজা ভাই নুজাইমার জন্য কেক এনেছিলো, চাচা বসে বসে সেই কেক নিয়ে কাটাকুটি করছে। আমি গিয়ে বসতেই আমাকে কেক অফার করলেন। কয়েকদিন আগেই এধরনের চকলেট পেস্ট্রি খেয়ে আমি পেটের পীড়ায় ভুগেছিলাম তাই কেকটা খেলাম না। মুড়ি মাখা খেতে লাগলাম আর রেজা ভাই, রিপন ভাইয়ের গল্প শুনতে লাগলাম। চাচা উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর রেজা ভাই আর রিপন ভাইও চলে গেলেন। আমি বসে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলাম। কিছুক্ষন পর চাচা এসে জানালেন উনার ক্ষুধা পেয়েছে, বন্যা আপাকে খাবার দেয়ার জন্য বললেন। তখন রাত সোয়া নয়টার মত বাজে। আমারও যাবার সময় হয়েছে। আমি উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় চাচাকে সালাম দিয়ে বিদায় চাইলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন "কাল তো সোমবার, যাবা না?" আমি প্রথমে বুঝিনি কোথায় যাবার কথা বলছেন। পরক্ষনেই মনে পড়লো সোমবারে উনার চেকআপের জন্য আবার ল্যাবএইডে যাবার কথা। আমি হেসে বললাম "যাবো চাচা, অবশ্যই যাবো।"
শায়লা অসুস্থ থাকায় আজ অফিসে যেতে পারিনি। যখন চাচার খবরটা শুনি তখন আমি দিশেহারা কোনদিকে যাবো। এদিকের ঝামেলা শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিলাম বেইলী রোডের দিকে। কাওরানবাজার পর্যন্ত গিয়ে শুনলাম সবাই চাচাকে নিয়ে নেত্রকোনার দিকে রওনা হয়েছে। আমি ওখানেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। চাচাকে বলেছিলাম অবশ্যই যাবো। দেখা হয়নি আর শেষ পর্যন্ত।
No comments:
Post a Comment