Monday, June 13, 2016

উচ্চ শিক্ষার দুঃস্বপ্ন আর আঁধারে ঢাকা জীবন


ক' দিন আগে শিউলি আপা বলছিলেন আমার চোখে দেখা সমাজ আর চারপাশ নিয়ে লিখতে। সেই কথা মনে করেই পুরনো একটা লেখা :

উচ্চ শিক্ষার দুঃস্বপ্ন আর আঁধারে ঢাকা জীবন
★★★★★★★★★★★★★★★★★★

সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত যে কটি আত্নহননের ঘটনা আমাদের সমাজ জীবনে বেশ নাড়া দিয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ঘটনাটি উত্তরার এক সাংবাদিক সম্পতির দু’সন্তানের আত্নহনন। ৭ বছর ও ১১ বছর বয়সের নিস্পাপ দু’ভাই বোনের আত্নহত্যার কারণ- তাদের মা-বাবার দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন। পিতার নিষ্ঠুরতা আর জীবন সংগ্রামে মায়ের কষ্টকর ধেয়ে চলা তাদেরকে পৃথিবীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল।

পিতা-মাতার স্নেহ সান্নিধ্যে যে সুন্দর পৃথিবী তাদের প্রাপ্য ছিল, বন্ধু-স্বজন পরিবেষ্টিত একটি নিটোল উচ্ছল কৈশর যখন তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকার কথা ছিল ঠিক সেই সময়টাতে তারা পৃথিবীকে ধিক্কার জানিয়ে সমাজকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে চলে গেল অজানার দেশে।

এ দুটি মৃত্যু ছাড়া আরো দু’টি মৃত্যুও খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তারপর পত্রিকার পাতায় কিংবা টক শোতে এ নিয়ে তেমন কোন লেখা লেখি বা কথোপকথন হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে সমাজ বিজ্ঞানীরা হয়তো এ মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করতে পারেন, এর কারণ ও প্রতিকারের উপায় বাতলাতে পারেন। এর ফলে সমাজ উপকৃত হবে।
সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত শান্তি আর নিরাপত্তা আমাদের দেশ থেকে ক্রমশ অপসৃত হতে চলেছে বলেই মনে হয়। কিছু দিনের ব্যবধানে দু’জন ইউনিভারসিটি পড়ুয়া যুবক/যুবতীর আত্নহননের ঘটনা আমাকে আলোড়িত করেছে। মনে মনে দু’টো মৃত্যুর একটাই সমীকরণ আমি খুঁজে পেয়েছি। কোন সমাজ বিজ্ঞানী বা মনোবিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোন থেকে নয়, একজন সাধারণ অভিভাবকের দৃষ্টি কোন থেকে আমি বিষয়টা অনুধাবনের চেষ্টা করেছি।

কি গভীর মর্মবেদনা, ক্ষোভ, লজ্জা সর্বোপরি স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তারা নীল হয়েছেন- সেটাই আমাকে ভাবিত করেছে। মাস ছয়েকের বেশি হবে হয়তো সিকদার মেডিকেলের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী মিলা (আসল নাম মনে নেই) মফস্বল শহরের একজন স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। ডাক্তার হবার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ধানমন্ডির সিকদার মেডিকেলে। বাবা প্রতিমাসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই টাকা পাঠাতো মেয়ের পড়ালেখার সকল সুবিধা নির্বিঘ্ন করতে। কিন্তু মাঝপথে মেয়ের পদস্খলন- বখাটে, টাউট একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ানো, অতপর লিভ টুগেদার, অনৈতিক সম্পর্কের পরিনতিতে পেটে অবৈধ সন্তান, বখাটে প্রেমিকের বিশ্বাস ঘাতকতা, অতঃপর সব দায় কাঁধে নিয়ে মেয়েটার আত্নহননের মাধ্যমে মুক্তির প্রচেষ্টা।

অন্য ঘটনাটিও প্রায় একই রকম। তবে পার্থক্য শুধু এটুকু যে, এ দৃশ্যপট নায়িকা নয়, নায়ক প্রধান। আর সে নায়ক কোন ধনীর দুলাল নয়, মফস্বল শহরের হতদরিদ্র এক ভ্যান চালকের পুত্র। ভ্যান চালক বাবা ছেলেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাবে বলে পাঠিয়েছিল ঢাকা শহরে।

নিজের জীবনটাকে বাজী রেখে ছেলে মিলনকে ভর্তি করিয়েছিল বনানীর অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটিতে। তৃতীয় বর্ষে উঠতেই মিলন বিমালুম ভুলে যায় তার নাড়ীর সম্পর্কেকে। জড়িয়ে পড়ে ধনীর দুলালী এক সহপাঠীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জালে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে লিভ টুগেদার-অতপর নানা জটিলতায় আত্নহননের মাধ্যমেই জীবনের পরিসমাপ্তি।
এ কয়েকটি আত্নহনননের ঘটনাকে সামনে রেখে আমার মাথায় অহর্নিশ ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু প্রশ্ন।

এস.এস.সি/এইচ.এস.সি পর্যায়ে অতিশয় ভাল রেজাল্ট/অত্যধিক মাত্রায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তি আমাদের অভিভাবককে তাদের সন্তানদের উচ্চশিাক্ষার বিষয়ে স্বপ্ন বিলাসী করে ফেলেছে কি?
এই তথা কথিত ভাল রেজাল্টকে পুঁজি করে আমাদের ফন্দিবাজ রাজনীতিকরা কিছু দুষ্ট চক্রের সহযোগিতায় যেন তেন মানের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি খুলে ব্যবসা ফাদিয়ে বসেছে, শিক্ষার মানকে অধপতিত করে দেশকে শিক্ষিত বেকারের একটি ‘স্টেক ইয়ার্ড’ বানিয়ে ফেলেছে না কি?
বেশির ভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বিদ্যা চর্চার চেয়ে ‘সার্টিফিকেট বাণিজ্যের’ অবাধ সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগী না হয়ে মাদক, যৌনতাসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে না কি?
উন্নত বিশ্বে যেখানে শুধুমাত্র মেধাবী আর সামর্থবানরাই উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী, সেখানে আমাদের দেশে পয়সার বিনিময়ে তথা কথিত উচ্চশিক্ষাসমাজে নানাবিধ আনব্যালান্স আর অসংগতির কারণ হয়ে জাতি হিসেবে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে না কি?
মানহীন এমন অসার উচ্চ শিক্ষার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে? 
কে দেবে আমাদের এসব সহজ প্রশ্নের উত্তর? 
তারিখঃ ২৯.০৯.২০১৪

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss