Friday, April 29, 2016

আজ 29 এপ্রিল


আজ 29 এপ্রিল।।1991সালের এই দিনটায় সকাল থেকেই আকাশটা গম্ভীর ছিল আর যতদূর মনে পড়ে বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল।।বাবার বিকেল চারটা থেকে ডিউটি ছিল।।কি যেন ভেবে বাবা মোটামুটি বিপজ্জনক মুহূর্তে লাগা প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস দুপুরে কিনে আনলেন।।তো সন্ধ্যার পর থেকেই বৃষ্টির সাথে সাথে ঝড় হাওয়া বইতে লাগলো।।রাত দশটার পর থেকে ধীরে ধীরে ঝড় হাওয়ার পরিমান বাড়তে থাকলো।।সেই সাথে বিপদ সংকেতের মাত্রাও বাড়তে লাগলো।।আমাদের কারোরই ঘুম এলো না।।কিন্তু খাবার খেয়ে শুয়ে রইলাম।।রাত এগারোটা কি বারোটা হবে।।বাবা আসছে না দেখে মা আমাকে নিয়ে পাশের বাসার মজিদ কাকার বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো।।দরজা খুলতেই দেখি আমাদের বাসার সামনে যে মাঠটা রয়েছে সেটা পুরোটা জোয়ারের পানিতে ভড়পুর।।আর বাতাসের এতো চাপ ছিল যে গাছ গুলো সব মনে হচ্ছিল যেন উপরে পড়ে যাচ্ছে।।তো কাকার বাসার দরজা নক্ করলে কাকা দরজা খুলে এবং মা বাবার কথা জানতে চায়।।


কাকা জানান যে,,বাবার দুই নাম্বার গেইট মানে কর্ণফুলী নদীর পাড়ের গেইটে ডিউটি চলছে তাই রাতে আর আসেনি এবং আসবে ও না।।একদম সকালে ফিরবে।।মা তখন আমার হাতটা ধরে বললো চল্ বাসায় যাই।।কাকা বলছিল মন খারাপ করবেন না।।আল্লাহ্ ভরসা।।আমরা চলে এলাম।।আমার স্পষ্ট মনে আছে মা বাসায় এসে অনেক ক্ষন কেদেছিল।।আমি আর ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।।হঠাৎ শুনি দরজায় কারা যেন শব্দ করছে।।মা দরজা খুলতেই রিতা আপার আম্মা বলতে লাগলো ভাবী সব শেষ।।গলা সমান পানি উঠে গেছে আশ্রয় দিন।।মা সাথে সাথে ওনাদের ভেতরে নিয়ে আসলেন।।কিছুক্ষণ পর এলো দেলোয়ার সুমনের আম্মা ও তাঁদের বোনরা।।সবাইকে মা থাকতে এবং বসতে দিলেন।।আমরা কেউই আর সে রাতে ঘুমাইনি।।সকাল হওয়ার পর বাহিরে বেড়িয়ে দেখতে পেলাম 29 এর ভয়াল দৃশ্য।।প্রায় দশ থেকে বার ফুট পানি হয়।।একতলা পুরোটাই ডুবে গিয়ে ছিল।।

পরে ধীরে যখন পানি কমতে লাকলো তখন নীচ তলার খালাম্মারা কাকারা তাঁদের বাসায় গিয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল রক্ষার চেষ্টা করতে লাগলো।।ওদিকে বাবা যে এখন আসছে না।।মা কোন কথা বলছে না।।মায়ের মনটা যে খুবই খারাপ ছিল তা এখন বুঝতে পারছি কিন্তু তখন বুঝি নি।।আসরের আযানের পর বাবা বাসায় এলো।।বাবার পুরো শরীর এবং শরীরে থাকা পোশাক গুলো ছিল ভেজা।।পরে বাবার মুখে সকল ঘটনা শুনি এবংসেই থেকে এখন পর্যন্ত আমার বাবাকে যে বাঁচিয়ে রেখেছিল বা রেখেছেন তার জন্য আল্লাহ্'র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।।কারন সেই রাতে টিনের চালে কাটা পরে বাবার সাথে থাকা দুজন আনসার মারা যায়।।যাদের লাশটা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি বা তাঁদের স্বজনরা দেখতে পারেননি।।সেই দিনটি বাবা বা আমরা আজও ভূলতে পারিনি।।বাবা সেই থেকে আজ পর্যন্ত এক ওয়াক্ত নামায বাদ দেন নি।।আল্লাহ্'র রহমতে চার বার হজ্ব করার তৌফিক আল্লাহ্ পাক দান করেছেন।।

আমি কৃতজ্ঞ আল্লাহ্'র কাছে যে সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ্ আমার বাবাকে জীবিত রেখেছেন।।কারন আমার বাবাকে যদি সেদিন আল্লাহ্ পাক জীবিত না রাখতেন তাহলে হয়তো আমাদের অবস্থা করুন থেকে করুনতর আকার ধারন করতো।।কারন বাবা না থাকলে এই দুনিয়াতে সন্তানরা কতটা অসহায়,অবহেলিত তা আমার চেয়ে ভাল কে জানে।।কারন চাকরির সুবাধে আমি তা হারে হারে বুঝেছি,দেখেছি এবং শিখেছি।।

তাই বলবো আল্লাহ্ যেন পৃথিবীর প্রতিটা বাবাকে বাঁচিয়ে রাখেন।।সুস্থ রাখেন।।সুখী রাখেন।।অন্তত সন্তানের এক কর্মের ব্যবস্থা হওয়ার পর যেন আল্লাহ্ প্রতিটা সন্তানের বাবাকে দুনিয়া থেকে সম্মানের সহিত নিয়ে যান।।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss