Friday, April 29, 2016

২৯ শে এপ্রিল


আমার জিবনের সবচেয়ে কষ্টের ও দুঃখের একটা দিন ২৯শে এপ্রিল। আমাদের বাড়ি সন্দীপ। ঐ দিন আমার বাবা সন্দীপ ছিল। ২৯ তারিখ সকাল থেকে রেডিও টিভিতে বার বার সিগ্নালের কথা বলছে এর মধ্যে সেদিন স্কুলে এস এস সি বিদায় অনুষ্ঠান চলছিল দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার দরুন তাড়াতাড়ি শেষ করে দিল। তখনো বুজিনি গুর্নীঝড় জলোচ্ছাস কি জিনিস, মনের মধ্যে ভয়ও কাজ করছে আবার এটা দেখার একটা ইচ্ছা কাজ করছে। সন্ধা হওয়ার আগেই ১০ নং মহা বিপদ সংকেত ২০ ফুট জলোচ্ছাসের খবর বলছে বার বার।বিল্ডিংের কেও তেমন একটা আমলে নিচ্ছেনা তাই আমরাও তেমন কোনো গুরুত্ব দিলাম না জিনিসপত্র কিছুই কোথাও সরাইনি। রাত ৮টা থেকে খুব বাতাস শুরু হল।আম্মা বললেন যে যাই বলুক জিনিসপত্র গোছা। সাথে সাথে গুছিয় যা পারলাম তাকের উপরে রাখলাম, তখন বাসায় এক ড্রাম চাল ছিল ড্রামের মুখটা প্লাস্টিক দিয়ে ভালভাবে বাধলাম। 

এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও চলে গেছে, কেও ভাত খেয়েছ কেও খায়নি। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। বাইরে বাতাসের এতো বেগ নারিকেল গাছ গুলোর মাথা মাটি পরজন্ত নেমে আসে পুরা আকাশটা কেমন যেন লালছে হয়ে গেছে। বাসায় বসে দোয়া দরুদ পড়ছি আর মাঝে মাঝে বের হয়ে দেখি পানি আসছে কিনা, এভাবে কয়েক ঘন্টা যাওয়ার হঠাত পাশের বাসার খালেক চাচা ডেকে বলে লিটন পানি আসছে তাড়াতাড়ি দোতালায় চল। এই হুরমুর করে দরজায় তালা দিয়ে সবাইকে নিয়ে দোতালায় সুমনদের বাসায় উঠলাম। এরপর শুরু হলো এক বিভীষিকাময় অবস্থা নিচে পানি উপরে বাতাস এমন ভাবে ধমকা বাতাস আসে পুরা বিল্ডিংটা ঘুরুমঘুরুম শব্দ করে কেপে উঠে, তখন মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি আর বাচতে পারবোনা এর মধ্যে বিকট শব্দ করে কলোনির দেয়াল্টা ভেংে পড়ে গেল। ভাবলাম আমাদের আর কোনো উপায় নাই আজ এখানেই শেষ। 


আল্লাহর রহমতে বাতাসের চাপ আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল।চারদিকে ফর্সা হয়ে আসল। এরপর শুরু হল আরেক রিদয় বিদারক দৃশ্য।গরু ছাগল মানুষ মরে মরে ভেসে যাচ্ছে দেয়াল পড়ে জাওয়াতে আমাদের বিল্ডিং থেকে কলোনির বাইরের সব দেখা জাচ্ছিল। দিনের ১০টা নাগাদ পানি কমে হাটু পরজন্ত হয়েছে আস্তে আস্তে আমাদের বাসার দিকে গেলাম তালা খুলে বাসায় ডুকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। পরে আরো ৪/৫ জনকে ডেকে দরজা ঠেলে বাসায় ডুকেতো মাথা খারাপ হয়ে গেলো।মেট্রেস্টা খাটের উপর টেবিল তার উপর চেয়ার দিয়ে রেখেছিলাম। ঐটা পানিতে পড়ে আছে চালের ড্রামটা রান্নাঘরে ছিল সেটা এসে দরজাটা চেপে ধরে আছে। উপরের অর্ধেক চাল ভিজে গেছে। এর সাথে আরেক বিপদ পুরা ঘর জুড়ে এক হাটু কাদা।কাদা পরিস্কার করতে করতে সন্ধা। এর মধ্যে কেও বলছে আবার পানি আসবে কেও বলছে ভুমিকম্প হবে মনে আরেক ভয় কাজ করছে।

এত কিছু ঘটে গেলো কিন্তু একবারো আব্বার কথা মনে পড়েনি।সন্ধা যখন সবাই একসাথে বসছি তখন দেখি আম্মা কাদছে।কাদতে দেখে যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন আব্বার কথা বলাতে আমাদের মনে পড়ল। আব্বা জানি কেমন আছে।তখন যোগাযোগর কোনো ব্যাবস্থা ছিলনা। পরদিন সকালে ঢাকা থেকে আমার বড় মামা এসে কান্নাকাটি শুরু করে দিল, পত্রিকায় দেখেছে সন্দীপ লাশের দীপ। এই কথা শুনে আমাদের মন্টা আরো ভেংে গেল। আব্বাকে বুঝি আর পাবোনা।মনে মনে নিজেকে এতিম ভাবা শুরু করলাম, তখন যে নিজেকে কত দুঃখী মনে হয়েছে সেটা বলে বোঝানো যাবেনা

যাই হোক আল্লাহর রহমতে ৫ দিন পর আমার বাবা ফিরে এসেছেন।

আজ বাবা নেই কিন্তু ২৯শে এপ্রিল এলে বাবাকে ফিরে পাওয়ার যে কতটা আনন্দের চিলো সেই মুহুর্ত গুলো বার বার মনে পরে।
ধন্যবাদ সবাইকে।

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss