Wednesday, April 6, 2016

বাবা, তু‌মি কেন এত মহান?


প্রবাসী ছেলে জীবনে প্রথম মাসের বেতন তুলে তার বাবা কে ফোন করেছে- হ্যালো আব্বু? 
বাবা: হ্যা বাবু কেমন আছিস? 
বাবু: বাবা আমি ভাল আছি। তুমি ভাল আছো তো? 
বাবা: শরীর ভাল, তবে তোকে খুব মনে পড়ে। বাদ দে তোর কি খবর বল? 
বাবু: আমিও ভাল আছি। একটা নাম্বার দিচ্ছি লেখ। (মানিগ্রাম) 
বাবা: কিসের নাম্বার খোকা? 
বাবু: আমি সেলারী পেয়েছি বাবা। পুরা এক লাখ 
বাবা: আলহামদুলিল্লাহ। বাবা একটা কথা বলি? ( কিছুটা দুষ্টামির ছলে ) - এতদিন পর ফোন করেছিস মাত্র একটা কথাই বলবি? 
বাবু: বাবা তুমি তো বলেছিলে পিতৃ ঋণ কোন দিন শোধ হয় না। তুমি ছাব্বিশ বছরে আমার পেছনে যত টাকা খরচ করেছ তুমি কি জানো আমি আগামী পাঁচ বছরে সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো। আমার এখানে এক টাকা তোমার ওখানে একশ টাকা বাবা
বাবা : ( কিছুটা মুচকি হেসে) বাবা একটা গল্প শুনবি? 

ছেলেটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। নিচু স্বরে বললো- বলো বাবা শুনবো...... 
তোর বয়স যখন চার আমার বেতন তখন তিন হাজার টাকা। ১,২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে আঠারোশ টাকায় চলে সংসার। আমি আমার সাধ্যের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করেছি তোর মা কে সুখী করতে। তোকে যেবার স্কুলে ভর্তি করলাম সেবার ই প্রথম আমরা আমাদের ম্যারিজ ডে টা পালন করিনি। সে বছর তোর মাকে কিছুই দিতে পারিনি আমি। তুই যখন কলেজে উঠলি আমাদের অবস্থা তখন মোটা মুটি ভাল। কিন্তু খুব কষ্ট হয়ে গেছিল যখন আমার ট্রান্সফার নারায়ণগঞ্জ হয়। রোজ রোজ উত্তরা থেকে নারায়ণ গঞ্জ বাসে করে পায়ে হেটে ঘামে ভিজে খুব দুর্বিষহ লাগছিল। একদিন শো রুম থেকে একটা বাইক দেখে আসলাম। সে রাতে আমি স্বপ্নেও দেখেছিলাম আমি বাইকে চড়ে অফিস যাচ্ছি। কিন্তু পরের দিন তুই বায়না ধরলি উত্তরা থেকে বনানী ভার্সিটি করতে তোর কষ্ট হয়। তোর কষ্টে আমার কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে বাইক টা কিনে দিয়েছিলাম। আমার এক টাকা তোর ওখানে এখন এক পয়সা! কিন্তু মনে করে দেখ এই এক টাকা দিয়ে তুই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস। ব্রান্ড নিউ মোবাইলে হেড ফোন কানে লাগিয়ে সারা রাত গান শুনেছিস। পিকনিক করেছিস, ট্যুর করেছিস, কন্সার্ট দেখেছিস। তোর প্রতিটা দিন ছিল স্বপ্নের মতন। আর তোর একশ টাকা নিয়ে আমি এখন হার্টের বাইপাস করাই ডায়াবেটিক মাপাই । জানিস বাবা আমার মাছ খাওয়া নিষেধ, মাংস খাওয়া নিষেধ, কি করে এত টাকা খরচ করি বল! তোর টাকা নিয়ে তাই আমি কল্পনার হাট বসাই। সে হাটে আমি বাইক চালিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই। বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাই। তোর মায়ের হাত ধরে চাঁদনী প্রহ‌রে সেন্ট মার্টিনের বালুচরে হেঁটে বেড়াই। 
বাবা চুপ করো প্লীজ!! আমি তোমার কাছে চলে আসব। টাকা না তোমার ভালবাসা তোমায় ফিরিয়ে দিব। 
হাহাহা বোঁকা ছেলে! বাবাদের ভালবাসা কখনো ফিরিয়ে দেয়া যায় না। ছোট্ট শিশুর মল মুত্রও মোছা যায় আর বুড়োদের ঘরেও ঢোকা যায় না। তোকে একটা প্রশ্ন করি বাবা। ধর তুই আমি আর তোর খোঁকা তিন জন এক নৌকায় বসে আছি। হটাৎ নৌকা টা ডুবতে শুরু করলো..... যে কোন একজনকে বাঁচাতে পারবি তুই। কাকে বাঁচাবি বল? 
ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও এক চুল ঠোঁট নড়াতে পারছেনা! উত্তর দিতে হবে না। ছেলেরা বাবা হয়, বাবা কখনো ছেলে হতে পারে না। পৃথিবীতে সব চেয়ে ভারী জিনিস কি জানিস? পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ! আমি শুধু জায়নামাজে বসে একটা জিনিস চাই। আমার কবরের ঘরটায় যেন আমি আমার ছেলের কাঁধে চড়ে যাই। তাহলেই তুই একটা ঋণ শোধ করতে পারবি তোকে কোলে নেয়ার ঋণ ।
(বাবার অকৃ‌ত্রিম ভালবাসার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র)

No comments:

Post a Comment

Comments

Not using Html Comment Box  yet?

No one has commented yet. Be the first!

rss