- Atiq CSM
খুব একটা বেশিদিন আগের কথা নয়। হয়ত বিশ বাইশ বছর আগের হবে। ‘ঈদ মোবারক’ বা এই টাইপের বিভিন্ন স্টাইলিশ কাগজে লেখা রঙিন কার্ডে এরকম মিষ্টিমধুর ভাষায় বা ভালোবাসার উপমায় নানা ছড়া-ছন্দ কেটে ইংরেজী বা বাংলায় ঈদ শুভেচ্ছা পাশাপাশি প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা বিনিময়ের প্রচলন ছিল। বিশেষ করে রমজানের শুরু থেকেই বড় মার্কেট থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লা আর গ্রাম-গঞ্জের দোকানগুলো রঙিন হয়ে উঠতো বর্ণিল ডিজাইনের ঈদকার্ড আর ভিউ কার্ডে (নায়ক-নায়িকাদের ছবিও থাকতো)।
শুধু মার্কেট বা পাড়ার দোকানগুলোতেই নয়, পাড়ার ছেলেরা শামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে টেবিল সাজিয়ে বসতো ঈদকার্ড বিক্রির জন্য।সাথে বাজতো উচ্চস্বেরে হিন্দি গান। কার্ডগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনে সেগুলো মোড়ানো থাকতো স্বচ্ছ পলিথিনে। তরুণ-তরুণীরা সাজানো কার্ডগুলোর মধ্য থেকে পছন্দমতো কিনতো প্রিয়জন বা বন্ধু-বান্ধবীর জন্য।
পাড়া-মহল্লার এসব দোকান শুধু বিক্রয় কেন্দ্রই নয়, ছিলো এলাকার তরুণদের আড্ডার জায়গাও। তাই বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা থাকতো সেসব অস্থায়ী দোকানের সামনে। কার্ড ক্রেতা ছাড়াও সেখানে আড্ডা জমতো পাড়ার ছেলেদের। ঈদের বেশ আগেই যেন আনন্দ লেগে থাকতো সবার চোখে-মুখে।
কে কাকে কী লিখে ঈদকার্ড দিচ্ছে এ নিয়ে চলতো নানা কৌতূহল। প্রিয়জনের কাছ থেকে বিশেষ কার্ডটি পাওয়ার বা দেওয়ার আশায় দিন গুনতো অনেকেই। অবশেষে কোনো এক কাঙ্ক্ষিত দিনে প্রিয়জনের কাছ থেকে সেই কার্ড পাওয়ার অথবা দেওয়ার পর ঈদ আনন্দ যেন বেড়ে যেত বহুগুণে!
কিন্তু একসময় ঈদকার্ডের সেই জায়গা দখল করলো মোবাইল ফোনের এসএমএস। শুভেচ্ছা বার্তা লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হতো কাঙ্ক্ষিত মানুষের নম্বরে। উত্তরে আসতো পাল্টা শুভেচ্ছা বার্তা। সে ধারা কিছুট িহলেও চলছে এখনো।
আর এখন তো স্মার্ট ফোনের যুগ, আর প্রায় সবারই রয়েছে অন্তত একটি করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোসহ অন্য যোগাযোগের অ্যাপস ব্যবহার করছেন অনেকে। তাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা হোক বা ঈদের, সবাই এখন সামাজিক যোগাযোগের এসব মাধ্যম ব্যবহার করেই শুভেচ্ছা বিনিময়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
ভালো একটা ঈদ কার্ডের ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে সেটাই পরিচিতজনদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে বা মেসেজ আকারে পাঠিয়ে দিয়ে চলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। পাশাপাশি অন্য যোগাযোগ মাধ্যমতো রয়েছেই। ঈদ শুভেচ্ছা এখন পুরোপুরি ডিজিটাল!
সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের প্রভাবে আজ বিলুপ্ত প্রায় ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সেই সংস্কৃতি। হয়তো আজকালকার তরুণ-তরুণীরা জানেও না এসব কার্ডের কথা।
ঈদকার্ড বিক্রির আর আদান প্রদান সেই সোনালি দিন গুলো এখন ধূসর অতীত।